পাঁচ ব্যাংকের ভাগ্য নির্ধারণ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক!

নজরুল ইসলাম মজুমদার ও এস আলমের হাতে থাকা ৫ ব্যাংকের ভাগ্য এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে। তবে এস আলমের লোপাট করা ৮৪ হাজার কোটি টাকা এসব ব্যাংকে ফেরানো প্রায় অসম্ভব বলে মনে করেন ব্যাংক ও আদালত সংশ্লিষ্টরা। ফলে যে দুই ব্যাংক এক হতে চায় না তাদের ইতিবাচক অবস্থায় ফেরা অসম্ভব। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, শেষ পর্যন্ত কটি ব্যাংক নিয়ে মার্জার হচ্ছে তা পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

ব্যাংকের টাকায় কেউ বিদেশে করেছেন হোটেল, কেউ এলসির আড়ালে আত্মসাৎ করেছেন নিজের দায়িত্বে থাকা ব্যাংকের অর্থ। এমন সব অভিযোগ ব্যাংক খাতকে সর্বস্বান্ত করা দুই মাফিয়া সাবেক এবিবি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার ও ব্যাংক টাইকুন ব্যবসায়ী এস আলমের বিরুদ্ধে।

নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০২৩-২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত ফ্ল্যামিংগো এন্টারপ্রাইজ নামের ভুয়া প্রতিষ্ঠানকে দফায় দফায় ৬১৫ কোটি টাকা দেয় তারই ব্যাংক এক্সিম। যা ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের নাসা গ্রুপ সংশ্লিষ্টরা উত্তোলন করে। এবিবির সাবেক চেয়ারম্যান থাকার সময় তার বিরুদ্ধে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এখন আদালতে।

ব্যাংকখাতের আরেক মাফিয়া এস আলম। তার নিয়ন্ত্রণাধীন ব্যাংকগুলোর মধ্যে একীভূতকরণের তালিকায় থাকা ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী ও ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে ঋণ জালিয়াতির অংক ৮৪ হাজার কোটি টাকার বেশি। বিদেশে পাচার করা এই অর্থ ব্যাংকে ফেরানো কঠিন বলে মনে করেন মামলা সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম. সরোয়ার হোসেন বলেন, ‘ভুয়া কোম্পানি বানিয়ে এ ব্যাংকগুলো লুট করা হয়েছে। এই ব্যাংক লুটের মূল হোতা ছিলেন এস আলম ও নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার। অনেক ক্ষেত্রে দুর্নীতির তদন্তও হচ্ছে দুর্বলভাবে। কেউ হয়ত ৪ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি করেছে, কিন্তু তদন্তে বের করা হচ্ছে মাত্র ৫০০ কোটি টাকার প্রমাণ। আবার আমাদের বিচার ব্যবস্থায় অনেকেই প্রসিডিউরাল ভুল বা পদ্ধতিগত ত্রুটি দেখিয়ে প্রকৃত দুর্নীতির মামলাগুলো থেকেও খালাস পেয়ে যাচ্ছে। এটি অত্যন্ত ভয়াবহ দুঃসংবাদ।’

এদিকে সম্প্রতি দুর্বল ৫ ব্যাংকে শুনানি শেষ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর প্রায় ৯০ থেকে ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত এস আলমের নিয়ন্ত্রণাধীন নামি বেনামি প্রতিষ্ঠানের নামে। ফলে এই অর্থ আদায় নিয়ে সন্দিহান সংশ্লিষ্টরা। তবে শেষে পর্যন্ত মার্জারে কটি ব্যাংক একীভূত হবে তা নিয়ে পর্যালোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান।

তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দৃষ্টিকোণ থেকে এই মুহূর্তে মার্জারই হলো দুর্বল ব্যাংকগুলোকে রক্ষার একমাত্র কার্যকর উপায়। আমরা যদি বিরূপ প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কায় কাজ না করি-যেমন টিকা দিলে শিশুর জ্বর হতে পারে বলে ভয় পাই; তাহলে সেটি শিশুর জন্য মঙ্গলজনক হবে না। একইভাবে, মার্জার ছাড়া ব্যাংকগুলোর ভবিষ্যৎও নিরাপদ নয়।’

তবে একীভূত করার বিপক্ষে থাকা দুটি ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন খুব আশাব্যাঞ্জক নয় বলে মনে করে বাংলাদেশ ব্যাংক। মুখপাত্র বলেন, ‘তাদের অবস্থার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট যে পরিসংখ্যান সংগ্রহ করছে, সেখান থেকে এখনো কোনো ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত আমরা পাইনি। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ ব্যাংক এই মুহূর্তে কাউকে কোনো লিকুইডিটি সাপোর্ট দেবে না। ব্যাংকগুলোকেই নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে হবে। অতএব, যে ব্যাংকগুলো মার্জারের আওতায় আসতে চাইছে না, তারা যদি তাদের সূচকে ইতিবাচক পরিবর্তন এনে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সন্তুষ্ট করতে পারে, তবে বাংলাদেশ ব্যাংক অবশ্যই তাদের ব্যাপারে পুনর্বিবেচনা করবে।’

এদিকে মার্জারের প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু হবে জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা জানান, দৃশ্যমান পরিবর্তন ঘটতে সময় লাগবে আরও ১ থেকে দেড় বছর।

এসএস/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ময়মনসিংহ মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি জাহাঙ্গীর গ্রেপ্তার Sep 07, 2025
img
সাবেক এক রাষ্ট্রপতি হাওর এলাকার ১২ টা বাজিয়ে দিয়েছেন: জ্বালানি উপদেষ্টা Sep 07, 2025
img

নিয়মিত চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত

ট্রায়ালে সফল রাশিয়ার যুগান্তকারী ক্যানসার ভ্যাকসিন Sep 07, 2025
img
রিজার্ভ কমে ৩০ বিলিয়ন ডলারের ঘরে Sep 07, 2025
img
গ্ল্যামারের ছোঁয়া থাকলেও সরলতার পক্ষপাতী জাহ্নবী Sep 07, 2025
img
নির্বাচন নিয়ে আমরা কিছুটা উদ্বিগ্ন : মির্জা ফখরুল Sep 07, 2025
img
জুলাই সনদ চূড়ান্ত করতে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের Sep 07, 2025
img
বোলিং অ্যাকশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রোটিয়া স্পিনার Sep 07, 2025
img
ছেলেকে নিয়ে প্রথমবার লাইভ শো করলেন জেসি Sep 07, 2025
‘আমি সন্ত্রাসী না’, বুলবুল কে হুমকির অভিযোগ প্রসঙ্গে তামিম Sep 07, 2025
যে কারণে ভেনেজুয়েলায় হাজার হাজার সেনা মোতায়েন করছে যুক্তরাষ্ট্র Sep 07, 2025
img
ব্যক্তিগত জীবনে নতুন অধ্যায়, বিয়ের প্রস্তুতিতে সেলেনা! Sep 07, 2025
img
১৯ বছরের ধূমপান অভ্যাস ছাড়ার পর অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন আরশ Sep 07, 2025
img
কোনো হোন্ডা-গুন্ডার রাজনীতি আর চলবে না : হাসনাত Sep 07, 2025
img
হাটহাজারীতে শান্তি ফেরাতে সমঝোতা বৈঠক Sep 07, 2025
img
টাস্ক ফোর্স অফিসারের চরিত্রে ধোনি ও মাধবন একসঙ্গে, বাড়ছে দর্শকদের কৌতূহল Sep 07, 2025
img
মানুষের জন্য কাজ না করলে জুলাই আন্দোলন আবার হবে: অর্থ উপদেষ্টা Sep 07, 2025
img
কারাগারে বিএনপি নেতা ইসহাক সরকার Sep 07, 2025
img
শিপ বিল্ডিং আইন যুগোপযোগী করা হবে : শিল্প উপদেষ্টা Sep 07, 2025
img

ডাকসু নির্বাচন

ঢাবি প্রশাসনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেওয়ার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার Sep 07, 2025