চট্টগ্রাম নগরে বাড়ছে জনসংখ্যা চাপ। সাথে বাড়ছে অপরাধ, অপরাধেও যুক্ত হচ্ছে নতুনত্ব। কিন্তু অপরাধ দমনে বা নিয়ন্ত্রণে পুলিশের বাড়েনি সক্ষমতা, জনবল। বারবার প্রস্তাবনা দিয়েও কোনো ফল না পাওয়ায় ছোট ঘটনা রূপ নিচ্ছে বড় আকার।
ঝরছে রক্ত, ঘটছে প্রাণহানি। চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) অপরাধ পর্যালোচনায় স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে সিএমপির বিভিন্ন থানার সীমানা পুনঃনির্ধারণ করে নতুন চারটি থানা এবং জেলার সীমানা সিএমপির অন্তর্ভুক্ত করে আরো চারটিসহ মোট আটটি নতুন থানা গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তরে। অপরাধ এবং জনবসতি বিবেচনায় নতুন থানা গঠনের যে প্রস্তাব তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় পুলিশের সেই শঙ্কাই কয়েকদিন পরপর সত্যি হচ্ছে।
সম্প্রতি সংঘটিত কয়েকটি হত্যাকাণ্ড, নৃশংস হামলার ঘটনাগুলো ঘটেছে প্রস্তাবিত থানাগুলোর এলাকায়। কারণ অপরাধীরাও জানে ওইসব এলাকায় পুলিশ পৌঁছাতে সময় প্রয়োজন। সেই সময়ে তারা অপরাধ ঘটিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম।
সম্প্রতি সিএমপির প্রস্তাবিত মোহরা থানা এলাকায় ঘরে ঢুকে ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে। অনন্যা আবাসিক এলাকায় ঘটেছে ডাবল মার্ডার। টানেল পশ্চিম থানায় ঘটেছে গুলি করে হত্যা করার মতো ঘটনা। সর্বশেষ প্রস্তাবিত চবি থানা এলাকা দফায় সংঘর্ষে শিক্ষার্থী-গ্রামবাসী আহত হয়েছে দুই শতাধিক। আহতদের একাধিকজন মৃত্যুশয্যায়। সংঘটিত অপরাধগুলো সিএমপির প্রস্তাবনার যৌক্তিকতা প্রমাণ করল। কিন্তু সেই প্রস্তাবনা এখনো আলোর মুখ দেখেনি।
চট্টগ্রামের সুধীজন চান দ্রুত আরো থানা বৃদ্ধি করে অপরাধের লাগাম টানা হোক।
চট্টগ্রামের প্রবীণ আইনজীবী অ্যাডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান দেশের একটি গণমাধ্যমকেকে বলেন, ‘সিএমপি থেকে যে থানাগুলোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল তা ছিল অত্যন্ত যৌক্তিক। কিন্তু চট্টগ্রামের প্রতি বিমাতাসূলভ আচরণের কারণে চট্টগ্রাম সব সময় বঞ্চিত হয়ে আসছে। নগরে প্রতিনিয়ত বাড়ছে মানুষ। কিন্তু পুলিশের ফোর্স, লজিস্টিক সাপোর্ট যথাযথ না থাকায় জনগণ কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নগরবাসীর পক্ষে আমি বলব, সিএমপির প্রস্তাবিত থানাগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করে অপরাধের লাগাম টানা হোক।’
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার, সিএমপি কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি, জেলা প্রশাসক এবং জেলা পুলিশ সুপার মিলে জেলা ও নগরের কয়েকটি থানার সীমানা পুনঃবিন্যাস করার প্রস্তাব দিয়েছিল। সেই প্রস্তাব অনুযায়ী, সিএমপির জুরিডিকশনের চান্দগাঁও এবং বায়েজিদ বোস্তামী থানার আংশিক নিয়ে মোহরা থানা, আকবরশাহ এবং পাহাড়তলী থানার আংশিক নিয়ে কাট্টলী থানা, পতেঙ্গা থানা থেকে আংশিক নিয়ে টানেল পশ্চিম এবং কর্ণফুলী থানা আংশিক নিয়ে টানেল পূর্ব থানা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। জেলার সীতাকুণ্ড থানার আংশিক নিয়ে ফৌজদারহাট থানা, হাটহাজারী থানা থেকে চবি (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়) থানা এবং মদুনাঘাট থানা, পটিয়া ও বোয়ালখালী থানার অংশ থেকে নিয়ে কালারপুল থানা গঠনের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল।
সম্প্রতি সিএমপি কমিশনারের পদবিকে আপগ্রেড করে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে সিএমপিতে প্রথম কমিশনার হিসেবে হাসিব আজিজকে কমিশনার পদে পদায়ন করা হয়েছে। এরপর সিএমপি জনবল কাঠামো পরিবর্তনের নতুন প্রস্তাব পাঠিয়েছে সদর দপ্তরে। প্রস্তাবনায় ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি এবং পুলিশ সুপার পদ বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। সিএমপি থেকে নতুন থানা গঠন এবং আরও ফাঁড়ি বাস্তবায়নের জোর চেষ্টা চলছে বলেও সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এ বিষয়ে সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ বলেন, ‘আমরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। জনবল, লজিস্টিক সংকট তো আছেই। যা আছে তা নিয়ে আমাদের চলতে হচ্ছে। সদরদপ্তরে আমাদের প্রস্তাবনা দেওয়া আছে। ধীরে ধীরে সব হবে।’
সিএমপির প্রস্তাবিত থানাগুলোর মধ্যে বেশি আলোচিত হচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে একটি স্বতন্ত্র থানা। চবি থানা যদি বাস্তবায়ন করা হতো সম্প্রতি জোবরাবাসীর সঙ্গে চবি শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনা এতদূর গড়ানোর আগে সমাধান হতো। প্রস্তাবিত অপরাপর থানাগুলো বাস্তবায়ন হলে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও দমন আরো সহজ হবে বলে পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের ধারণা।
ইউটি/টিএ