নেপালের কৃষি ও পশুপালনমন্ত্রী রাম নাথ অধিকারী ও পানি সরবরাহমন্ত্রী প্রদীপ যাদব মঙ্গলবার পদত্যাগ করেছেন।
রাম নাথ অধিকারী জানিয়েছেন, বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সরকারের আচরণে অসন্তোষ জানিয়ে তার মন্ত্রিসভার দায়িত্ব ছেড়ে দেন। অধিকারী বিবিসিকে বলেন, ‘আমি স্তম্ভিত, গণতন্ত্রে প্রশ্ন করা ও শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ জানানো নাগরিকদের স্বাভাবিক অধিকার। কিন্তু তার বদলে আমরা গণতন্ত্র নয় বরং একনায়কতন্ত্রের দিকে যাচ্ছি, যেখানে দমন-পীড়ন, হত্যা আর শক্তি প্রয়োগ চলছে।
যেই প্রজন্ম দেশ গঠনে অংশীদার হওয়ার কথা ছিল, তাদের সঙ্গে যুদ্ধের মতো আচরণ করা হলো কিভাবে? এর জবাব না খুঁজে আমি ক্ষমতায় থাকা মেনে নিতে পারিনি।’
পানি সরবরাহমন্ত্রী প্রদীপ যাদবও মঙ্গলবার তার পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। তিনি সরকারের দমননীতির বিরোধিতায় জেন জি প্রজন্মের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।
দ্য কাঠমাণ্ডু পোস্টকে দেওয়া বার্তায় তিনি লিখেছেন, ‘প্রিয় তরুণ ভাই-বোনেরা, তোমরাই আমার প্রথম সঙ্গী, তোমরাই আমার শক্তির উৎস। আমি সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি, শান্ত থাকো এবং তরুণদের সঠিক পথে পরিচালিত ও সহায়তা করো।’
এর আগে সোমবার বিক্ষোভ দমনে পুলিশের গুলি চালানো ও ব্যাপক হতাহতের ঘটনায় সরকারের সমালোচনা বাড়ার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখক পদত্যাগ করেন। প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলির বাসভবন বালুওয়াতারে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন।
বিক্ষোভ সোমবার থেকে শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত তিনজন মন্ত্রী পদত্যাগ করলেন। এদিকে দুর্নীতিবিরোধী বিক্ষোভ তীব্র হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পদত্যাগ করেছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি। প্রধানমন্ত্রী অলি স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বর্তমান সংকটের সাংবিধানিক সমাধানের পথ প্রশস্ত করার জন্য তিনি পদত্যাগ করেছেন।
রাজধানী কাঠমাণ্ডু এবং নেপালজুড়ে সকাল থেকেই বিক্ষোভ চলছে। প্রতিবাদকারীরা প্রধানমন্ত্রী অলির পদত্যাগ দাবি করে সকাল থেকেই কালঙ্কি এলাকায় সড়ক অবরোধ ও টায়ার জ্বালানোর ঘটনা ঘটায়।
বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ রাজনীতিকের বাসভবনে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে অলি এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবার বাসভবনও রয়েছে। রাজনৈতিক দলের সদর দপ্তরও লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।
সিভিল সার্ভিস হাসপাতালের নির্বাহী পরিচালক মোহন রেগমি বিবিসিকে বলেছেন, মঙ্গলবারের বিক্ষোভে দুজন নিহত হয়েছে।
এ ছাড়া নেপালে দেশব্যাপী তরুণদের বিক্ষোভ অব্যাহত থাকায় অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল বন্ধ রয়েছে। নেপালের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র জ্ঞানেন্দ্র ভুল বিবিসির নেপালি পরিষেবাকে বলেছেন, ‘নেপালের রাজধানীর বাইরের বিমানবন্দরগুলো নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারায়, ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।’
পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষে সোমবার ১৯ জন নিহত হওয়ার পর জারি করা কারফিউ অমান্য করে নেপালজুড়ে বিক্ষোভ তীব্র আকার ধারণ করেছে।
ইউটি/টিএ