ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নবনির্বাচিত ভিপি সাদিক কায়েম বলেছেন, ‘ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে জুলাইয়ের প্রজন্ম বিজয়ী হয়েছে। এখানে জয় পরাজয়ের কিছু নেই।’
তিনি বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের সকল শহীদদের স্মরণ করছি। মহান মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদদের, আজাদী আন্দোলনের সকল শহীদদের স্মরণ করছি। ছাত্রলীগের নির্যাতনে যতজন শহীদ হয়েছে সকল শহীদদের স্মরণ করছি।’
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকালে ফল ঘোষণার পর সিনেট ভবনের সামনে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের ডাকসুর ভিপি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা আমাদের ওপর নেতৃত্বের আমানত দিয়েছে। সে আমানতের যথাযথ হক আমরা আদায় করব ইনশাআল্লাহ। স্বপ্নের ক্যাম্পাস বিনির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা থাকবো না। আমি ভিপি হিসেবে পরিচয় দিতে চাই না। বোনের ভাই, ভাইয়ের ভাই হিসেবে পরিচয় দিতে চাই। যেভাবে আগে দেখেছেন পরেও সেভাবেই দেখবেন। আমাদের সবটুকু দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের পাশে থাকবো ইনশাল্লাহ।’
এ সময় ঢাবি ক্যাম্পাসকে সবার জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস হিসেবে উপহার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন সাদিক কায়েম। তিনি বলেন, ‘সব দল-মত মিলে একসঙ্গে কাজ করব। পূর্ণাঙ্গ একাডেমিক ইনস্টিটিউট হিসেবে পরিণত করব।
প্রথম বর্ষ থেকেই চমৎকার একাডেমিক এনভারমেন্ট এখানে পাবে। নারীদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস হিসেবে গড়ে তুলবো। সবার কাছে দোয়া চাচ্ছি। শিক্ষার্থীদের আকাঙ্ক্ষা আমাদের আকাঙ্ক্ষা, আমাদের প্রত্যাশা। যারা আমাদের সঙ্গে একসঙ্গে নির্বাচন করেছে তারা প্রত্যেকে আমাদের জন্য একেক জন উপদেষ্টা। সবাইকে নিয়ে স্বপ্নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণ করব।’
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে ভূমিধস জয় পেয়েছে ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট। সহ-সভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও সহ-সাধারণ সম্পাদকের তিনটি শীর্ষ পদসহ প্রায় সবকটি পদেই বিজয়ী হয়েছে এই জোট। ভিপি পদে ছাত্রশিবিরের মো. আবু সাদিক (সাদিক কায়েম), জিএস পদে এস এম ফরহাদ ও এজিএস পদে মহিউদ্দিন খান বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয় পেয়েছেন।
এবারের নির্বাচনে ছাত্রদল, বাম ও বাগছাসসহ অন্য যেসব প্যানেল থেকে প্রার্থী দেয়া হয়েছিল তাদের কেউই গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদে জয়লাভ করতে পারেনি। তবে তিনটি পদে স্বতন্ত্র থেকে বিজয়ী হয়েছেন।
ঘোষিত ফলাফলে দেখা গেছে, ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের ভিপি প্রার্থী মো. আবু সাদিক (সাদিক কায়েম) সর্বমোট ১৪ হাজার ৪২ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদল সমর্থিত ভিপি প্রার্থী মো. আবিদুল ইসলাম খান পেয়েছেন ৫ হাজার ৭০৮ ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী উমামা ফাতেমা পেয়েছেন ৩ হাজার ৩৮৯ ভোট। আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম হোসেন পেয়েছেন ৩ হাজার ৬৮১ ভোট।
জিএস পদে এস এম ফরহাদ ১০ হাজার ৭৯৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী তানভীর বারী হামীম ৫ হাজার ২৮৩ ভোট পেয়েছেন। প্রতিরোধ পর্ষদের প্রার্থী মেঘমল্লার বসু পেয়েছেন ৪ হাজার ৯৪৯ ভোট। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেলের আবু বাকের মজুমদার ২ হাজার ১৩১।
এজিএস পদে মহিউদ্দীন খান পেয়েছেন ১১ হাজার ৭৭২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী তানভীর আল হাদী মায়েদ পেয়েছেন ৫ হাজার ৬৪ ভোট।
এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক পদে শিবির সমর্থিত জোটের ফাতেমা তাসনিম জুমা (১০৬৩১), বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে একই প্যানেলের ইকবাল হায়দার (৭৮৩৩), কমন রুম-রিডিং রুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে একই প্যানেলের উম্মে সালমা (৯৯২০), আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে এই প্যানেলেরই জসীমউদ্দিন খান (৯৭০৬) (যিনি জুলাইয়ে চোখ হারান), এই প্যানেল থেকে ক্রীড়া সম্পাদক পদে আরমান হোসেন (৭২৫৫), ছাত্র পরিবহন সম্পাদক পদে একই প্যানেলের আসিফ আব্দুল্লাহ (৯০৬১), এই প্যানেল থেকেই ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক পদে মাজহারুল ইসলাম (৯৩৪৪), স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক পদে একই প্যানেলের আব্দুল্লাহ আল মিনহাজ (৭০৩৮), মানবাধিকার ও আইন বিষয়ক সম্পাদক পদে সাখাওয়াত জাকারিয়া (১১৭৪৭)বিজয়ী হয়েছেন।
এদিকে তিনটি পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। তারা হলেন- সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ (৭৭৮২), গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে জুলাই আন্দোলনের আলোচিত মুখ সানজিদা আহমেদ তন্বি (১১৭৭৮) এবং সমাজসেবা সম্পাদক পদে যুবাইর বিন নেছারী (৭৬০৮) জয় লাভ করেন।
এরইমধ্যে নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছেন আবিদুল এবং উমামা ফাতেমা। আব্দুল কাদেরও নির্বাচনের ব্যাপক সমালোচনা করে কারচুপির অভিযোগ এনেছেন।
বিজয়ী সাদিক কায়েম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি এবং বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক। নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলাকালে তিনিও ছাত্রদলের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছিলেন। এছাড়া ছাত্রদলকে অনৈতিক সুবিধা দেয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন প্রশাসনের বিরুদ্ধে।
এমকে/এসএন