সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়ন পাশ্ববর্তী আসনে যুক্ত করার প্রতিবাদে দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে অবরোধ কর্মসূচি। এতে হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে ভাঙ্গার রাজপথ। উপজেলা পরিষদ ঘিরে নেয়া হয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মোতায়েন করা হয়েছে সেনাবাহিনী, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্য।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টায় এসব তথ্য নিশ্চিত করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মিজানুর রহমান।
তিনি জানান, উপজেলা পরিষদের সার্বিক নিরাপত্তায় সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন রয়েছে। সেক্ষেত্রে নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই। তবে নির্বাচন কমিশন থেকে এখনো কোনো নির্দেশনা আসেনি।
সকাল ৮টা থেকে ঢাকা-বরিশাল ও ঢাকা-খুলনা মহাসড়কসহ এক্সপ্রেসওয়ের ভাঙ্গা গোলচত্বরের অন্তত সাতটি এলাকায় অবরোধ শুরু করে বিক্ষুব্ধরা। মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে, তাবু টানিয়ে ও আসবাবপত্র ফেলে অবস্থান নেয় এলাকাবাসী। এতে দুই মহাসড়কজুড়ে কয়েক হাজার যানবাহন আটকা পড়ে। ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা।
ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের হামিরদী ইউনিয়নের পুখুরিয়া বাজার এলাকায় দেখা গেছে, মহাসড়কের ওপর টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করছেন স্থানীয়রা। একইভাবে মাধবপুর বাসস্ট্যান্ড, মুনসুরাবাদ বাসস্ট্যান্ড ও আলগী ইউনিয়নের সুয়াদী এলাকাসহ অন্তত পাঁচটি পয়েন্টে অবস্থান নেয় জনতা। নারীরাও এ আন্দোলনে অংশ নেন।
স্থানীয় বাসিন্দা হাফিজুর রহমান বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনার ও ষড়যন্ত্রকারীরা আমাদের আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। আমরা এই চক্রান্ত সফল হতে দেব না। শুক্রবার প্রথম আন্দোলন শুরু করলে ইউএনও আশ্বস্ত করেছিলেন সোমবারের মধ্যে সুরাহা হবে। কিন্তু হয়নি। যতক্ষণ না ইউনিয়ন দুটো ফিরিয়ে দেয়া হবে, অবরোধ চলবে।’
অবরোধকারীরা জানান, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি থেকে সরে আসবেন না। তবে যাত্রীসাধারণের ভোগান্তি লাঘবে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত অবরোধ স্থগিত রাখা হয়েছিল। সকাল আটটায় আবারও শুরু হয় অবরোধ।
জানা যায়, গত ৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন আসন পুনর্নির্ধারণের তালিকা প্রকাশ করে। এতে ফরিদপুর-৪ আসন থেকে ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়ন কেটে ফরিদপুর-২ আসনে (সালথা-নগরকান্দা) অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এরপর থেকেই ভাঙ্গা উপজেলাবাসীসহ রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।
সীমান্ত পুনর্বহালের দাবিতে গত শুক্রবার সকাল ও সন্ধ্যায় দুই দফায় নয় ঘণ্টা ভাঙ্গা উপজেলা দিয়ে যাওয়া ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে অবরোধ করা হয়। তখন ইউএনও ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আশরাফ হোসেন আন্দোলনকারীদের আশ্বস্ত করলে অবরোধ তুলে নেন তারা। তবে তিন দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন স্থানীয়রা। সে সময়সীমা পেরিয়ে গেলে মঙ্গলবার আবারও অবরোধ শুরু হয়।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের আগে সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলা ছিল ফরিদপুর-৪ আসনে এবং ভাঙ্গা উপজেলা ছিল ফরিদপুর-৫ আসনে। পরবর্তীতে পুনর্বিন্যাসের সময় ফরিদপুরের পাঁচ আসন ভেঙে চার আসন করা হয়।
কেএন/টিএ