খেপে গেলেন বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা মনোজ বাজপেয়ী। বক্স অফিসের সাফল্যের দাপটকে সরাসরি ‘দানব’ আখ্যা দিলেন তিনি। অভিনেতার দাবি, এই মোহ একদিন নিজেই ধ্বংস ডেকে আনবে, গ্রাস করবে স্রষ্টাদের স্বপ্ন ও সৃজনশীলতা। মনোজের এই তির্যক মন্তব্য যেন নতুন করে প্রশ্ন ছুড়ে দিল বি-টাউনে। সিনেমা কি কেবল টাকার খেলা, নাকি শিল্পের প্রকাশ?
বর্তমানে মনোজ বাজপেয়ী রাম রেড্ডি পরিচালিত ‘জুগনুমা’ ছবির মুক্তির প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সিনেমাটি চলতি মাসে ভারতে মুক্তি পেতে চলেছে।
এই মুক্তির আগে, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত এই অভিনেতা ভারতীয় এক গণমাধ্যমের সাক্ষাৎকারে ভারতের স্বতন্ত্র সিনেমার বর্তমান অবস্থা এবং বক্স অফিসকেন্দ্রিক নতুন মোহ নিয়ে কথা বলেন। মনোজ বলেন, ‘এটা এমন একটা দানব, যেটা তৈরি করেছেন বাণিজ্যিক প্রযোজকরা নিজেদের স্বার্থে। খুব শিগগিরই এই দানবই তাদের ধ্বংস করবে।‘
তিনি আরও বলেন, ‘তোমরা নিজেরাই ‘ভস্মাসুর’ তৈরি করেছ। শুধু অপেক্ষা করো, যেদিন তোমরা নিজের মাথায় নিজে হাত রাখবে, তখনই সব শেষ হয়ে যাবে। এই দানব যাদের সফল মানুষ তৈরি করে, একদিন তাদেরকেই গ্রাস করবে।’ মনোজের কথায়, বক্স অফিস সাফল্যকে সিনেমার গুণমানের সঙ্গে তুলনা করাটা, ছোট ও স্বতন্ত্র চলচ্চিত্রগুলোর ক্ষতি করেছে, কারণ কম আয়ের ছবি মানেই এখন খারাপ সিনেমা বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন,ছোট, স্বাধীন সিনেমাগুলো সবসময়ই সংগ্রাম করে। তারপর একটা সময় এলো, যখন ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো দেশে ঢুকেছে, তখন তারা স্বাগত জানিয়েছিল। কিন্তু খুব দ্রুত তারা তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে ফেলল এবং সবকিছুই মূলধারার বিষয়বস্তু আর তারকাদের ঘিরে ঘুরতে লাগল। '
‘এটা দেখে দুঃখ লাগে, কারণ আমি মনে করি, যদি আপনি স্বাধীন সিনেমার আন্দোলন শেষ করে দেন, তা হলে সিনেমা একটা পণ্য ছাড়া আর কিছুই থাকবে না। যদি আর্ট বাদ যায়, তার আর কোনও মূল্য থাকবে না’, বলেন মনোজ।
তিনি অমিতাভ বচ্চনের উদাহরণ দেন, যিনি তার সুপারস্টারডমের শীর্ষে থেকেও ছোট বাজেটের ছবিতে অভিনয় করেছেন। মনোজ বলেন, বচ্চন সাহেবও দুর্দান্ত কিছু ছোট ছবি করেছেন, যেমন ‘অভিমান’, ‘মিলি’সহ আরও অনেক সিনেমা। শুধু ‘ডন’-এর মতো ছবি দেখতে দেখতে এক সময় বিরক্ত লাগবে। তিনি আজকের ‘বচ্চন’ হয়েছেন তার আগের কাজগুলোর জন্যও’ ।
এদিকে ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো নিয়ে মনোজ বলেন, যারা এখন ভারতের বিনোদন জগতের বড় একটা অংশ দখল করে আছে, কিন্তু তারাও এখন বাণিজ্যিক চাপে নতি স্বীকার করেছে বলে মনে হয়’।
তার কথায়, যারা বাণিজ্যিক ছবি বানাতে বা কিনতে আগ্রহী, তারা জানে এটা একরকম জুয়া। এটা প্রায়শই কাজে দেয় না। প্রযোজক আর ওটিটিরা এখন সেই ছবিতে টাকা ঢালতে আগ্রহী, যেখানে লাভটা বড় হতে পারে। কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই এই বিষয়টা কাজ করে না, কেবল কিছু ভাগ্যবান লোকের জন্যই এটা ফল দেয়।
এসএস/এসএন