ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের সময় ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে কিছু ভিডিও বিজ্ঞাপন হিসেবে প্রচার করা হয়েছিল। কিন্তু মেটা (ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের মূল কোম্পানি) তাদের ২৫ শতাংশ ভিডিও বিজ্ঞাপনকে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন হিসেবে চিহ্নিত করতে পারেনি। সম্প্রতি ডিসমিসল্যাবের একটি গবেষণা থেকে এই তথ্য জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) ডিসমিসল্যাবের এক তথ্য যাচাই প্রতিবেদনে বলা হয়, ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ‘মেটা অ্যাড লাইব্রেরি’র ২৩১টি নির্বাচনী বিজ্ঞাপন বিশ্লেষণ করেছে তারা। এগুলো ২১ আগস্ট থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রচারিত হয়।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২৫ শতাংশ বিজ্ঞাপনকে মেটা রাজনৈতিক হিসেবে শনাক্ত করতে পারেনি। অর্থাৎ এসব বিজ্ঞাপন স্বচ্ছতার তথ্য ছাড়াই চলেছে। ৬৬ শতাংশ বিজ্ঞাপন রাজনৈতিক হিসেবে সংরক্ষিত হয়েছে। অর্থাৎ এগুলোতে ডিসক্লেইমার তথ্য রয়েছে। স্বচ্ছতার তথ্য না থাকায় ৯ শতাংশ বিজ্ঞাপন সরিয়ে নিয়েছে মেটা।
ডিসক্লেইমার বলতে এমন একটি ঘোষণা বা বিবৃতিকে বোঝায়, যেখানে কোনো বিজ্ঞাপন বা আধেয়ের (কনটেন্ট) দায়িত্বে থাকা দায়িত্বশীল ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পরিচয় তুলে ধরা হয়। যেমন, কোনো রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন হলে ডিসক্লেইমারে জানানো হয় কে বা কোন দল এই বিজ্ঞাপন দিয়েছে এবং এর খরচ কে বহন করছে।
ডিসমিসল্যাবের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, একই ভাষার বিজ্ঞাপনেও কোনোটি রাজনৈতিক হিসেবে শনাক্ত হয়েছে, আবার কোনোটি হয়নি। ডিসক্লেইমার না থাকায় সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর দুটি বিজ্ঞাপন মেটা সরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের একজন সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থীর ৫টি বিজ্ঞাপন ডিসক্লেইমার না থাকা সত্ত্বেও সরানো হয়নি।
ডাকসু নির্বাচন সংক্রান্ত ২৩১টি বিজ্ঞাপন বিশ্লেষণ করে ডিসমিসল্যাব দেখেছে, মেটায় সবচেয়ে বেশি বিজ্ঞাপন প্রচারিত হয়েছে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের পক্ষে। মোট বিজ্ঞাপনের ৭৬টিই ছিল তাদের সমর্থনে। স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে চালানো হয়েছে ৪৯টি বিজ্ঞাপন। এ ছাড়া স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের পক্ষে ৩৫টি, অপরাজেয় ৭১-অদম্য ২৪ প্যানেলের পক্ষে ২১টি এবং ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট প্যানেলের পক্ষে ১৪টি বিজ্ঞাপন প্রচারিত হয়েছে।
মোট ১৪৯টি বিজ্ঞাপন প্রার্থীরা নিজে থেকেই দিয়েছেন। প্যানেলের নামে খোলা পেজ থেকে ১৪টি, সমর্থকদের পক্ষ থেকে ৬৮টি বিজ্ঞাপন চালানো হয়েছে। এ ছাড়া সমর্থকদের পেজ যেমন ‘আমাদের ডাকসু’ থেকে ২১টি, ‘আমার ডাকসু’ থেকে ১১টি এবং ‘বিএনপি মিডিয়া সেল’ থেকে ৯টি বিজ্ঞাপন চালানো হয়েছে। ইসলামী ছাত্রশিবির-সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ এর পক্ষে ‘কিশোরকণ্ঠ ২.০’ পেজ থেকে ৪টি বিজ্ঞাপন প্রচারিত হয়েছে।
ডিসমিসল্যাব জানায়, মেটা যখন কোনো বিজ্ঞাপনকে রাজনৈতিক বলে চিহ্নিত করে, তখন সেটি কিছু বাড়তি শর্তের মুখোমুখি হয়। যেমন বিজ্ঞাপন প্রচারের অনুমোদন পেতে সময় লাগে, ‘পেইড ফর বাই’ ডিসক্লেইমার দেখাতে হয় এবং এতে বিজ্ঞাপনের প্রভাব ও কার্যকারিতা কমে যায়। কিন্তু যেসব প্রার্থীর বিজ্ঞাপন রাজনৈতিক বলে ধরা পড়ে না, তারা কোনো বাধা ছাড়াই সহজে অনেক মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারেন। ফলে প্রতিযোগিতা সমান থাকে না।
এমকে/এসএন