জুলাইয়ের শহীদ পরিবারের বরাদ্দ অর্থ এক বছরেও হস্তান্তর হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম সাদ্দাম।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বেগমগঞ্জ সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে জুলাই স্মৃতি স্মরণে আন্তঃথানা ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, জুলাইয়ে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের পরিবারের কাছে যখন আমরা গিয়েছি তখন তারা আফসোস করে বলেছে, আপনারাই আসলেন শুধুমাত্র আমাদের কাছে, আপনারা হেল্প করেছেন, চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে জুলাইয়ের শহীদদের জন্য ববরাদ্দকৃত অর্থ এক বছরের মধ্যেও হস্তান্তর করতে পারেনি। বাজেট একটা তৈরি করেছে কিন্তু এর অর্থের ছাড় এখনো মানুষ পায়নি। আমরা সরকারের কাছে আহ্বান জানাই এই কাজটা তাদের করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির খাতা অনেক ফারাক থাকতে পারে। কিন্তু আমরা জুলাইয়ের পরে যে বাক স্বাধীনতা, আমাদের কর্মের স্বাধীনতা পেয়েছি প্রত্যেকে নিজ নিজ জায়গা থেকে নিজেদের দাবিগুলো আদায় করতে পারছি। ফ্যাসিবাদী আমলে যেভাবে মানুষের দাবিগুলো কোনঠাসা করে রাখা হয়েছে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। বিগত ১ বছরে যে পরিমাণ আন্দোলন আর দাবি আদায় হয়েছে গত ১৫ বছরের মধ্যে কল্পনাও করতে পারেনি এদেশের মানুষ। যার যত দাবি ছিল সব দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছে। সরকার যাচাই-বাছাই করে মেনে নিয়েছে আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে বল প্রয়োগ করেছে। যা মানতে পারেনি আশা করি দাবিগুলো শুনবে, যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই করে মেনে নেবে।
জুলাইকে জাগ্রত রাখার জন্য ইসলামী ছাত্রশিবির এক বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে শিবির সেক্রেটারি বলেন, বুদ্ধিবৃত্তিক এ অঙ্গণে আমরা সরকারকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছি জুলাইকে ধারণ কেবল মুখের বুলি দিয়ে হবে না, কেবল ক্ষমতার স্বাদ গ্রহণ দিয়ে হবে না। জুলাইয়ের চেতনাকে ধারণ করতে হলে জুলাই শহীদদের স্বীকৃতি, জুলাই সনদ আইনের মর্যাদা দিয়ে সেই সনদের অধীনের সামনের জাতীয় নির্বাচন দিতে আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইলেকশন বাংলাদেশে হবে, এর আগেও হয়েছে। ৫৪ বছরে এই বাংলাদেশের সংবিধান আর বাংলাদেশের ইলেকশন সিস্টেমে অরাজক পরিস্থিতি ছাড়া আর কিছুই দিতে পারেনি। এই দেশে স্বৈরাচারের জন্ম হয়েছিল, বাকশালের জন্ম হয়েছে, ফ্যাসিবাদের জন্ম হয়েছে কিন্তু এসব থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য হাজার হাজার মানুষ জীবন দিয়েছে। লাখ লাখ মা-বোন তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে, গৃহহারা হয়েছে, দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে। তারপরও তারা তাদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের জন্য, বাকস্বাধীনতার জন্য রাস্তায় নেমেছে বারবার। ৫৪ বছরে যতগুলো ইলেকশন হয়েছে তার প্রতিটায় ক্ষমতা হস্তান্তরের আগে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। সুতরাং এর একটা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হওয়া দরকার। তার জন্য জুলাই সনদকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং বাংলাদেশের নির্বাচনের জন্য পিআর পদ্ধতি, মানুষের ভোটে যেন তাদের কণ্ঠস্বর সংসদে পৌঁছায় তার জন্য আমরা সরকারকে আহ্বান করছি।
জুলাইকে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের মতো আরেকটা ষড়যন্ত্র তৈরি না হোক উল্লেখ করে শিবির সেক্রেটারি বলেন, জুলাইকে ধারণ করার জন্য ইসলামী ছাত্রশিবির মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল।
তার অধীনে আমরা গবেষণার কাজ করেছি, পেপার আহ্বান করেছি এবং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের যারা প্রথিতযশা রিসার্সার রয়েছে তারা পেপার জমা দিয়েছে। এখন এসব পেপার যাচাই-বাছাই চলছে। পৃথিবীর বড় বড় রিসার্চ ইনস্টিটিউট ও জার্নালগুলোতে আমরা এসব প্রকাশ করব। আমরা মনে করি জুলাইকে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের মতো আরেকটা কন্সপাইরেসি তৈরি না হোক।
তিনি বলেন, একাত্তরে কতজন শহীদ হয়েছে তার ডাটা এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে নেই। ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ বিক্রি করে একেক দল একেক সময়ে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাকে আসল মুক্তিযোদ্ধা সাজিয়ে ভাতা, রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা দলীয় আবরণে গ্রহণ করেছে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ যখন ক্ষমতায় ছিল ৪০ বছর পরও তারা মুক্তিযোদ্ধার তালিকা করেছে। হাস্যকর একটা বিষয়। এদেশে যে ৩০ লাখ শহীদ হয়েছে তার ডাটা কোথায়? স্বাধীনতার পর পর আসমান থেকে কেউ উড়ে এসে কেউ ক্ষমতা দখল করেনি। তারা মুক্তিযুদ্ধের শহীদের তালিকা কেন করেনি? এখনো আমাদের বলতে হয় শহীদের অথেনটিক ডাটা নেই। মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদের তথ্য বিভ্রাট থাকায় জেনোসাইড হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া যায়নি।
তিনি আরও বলেন, জুলাইকে নিয়ে যেন কেউ ব্যবসা বাণিজ্য করতে না পারে সেজন্য আমরা ইংরেজি, আরবি, বাংলায় তালিকা করে ওয়েব ভার্সনে রেখেছি। যেন কেউ ভুল বলতে না পারে। জুলাইয়ের পর পর কেউ বলেছে ৮০০ এর অধিক তাদের দলের শহীদ, আবার কেউ বলেছে সহস্রাধিক তাদের দলের শহীদ। এভাবে ভাগ বাটোয়ারা করলে শহীদের সংখ্যা তিন হাজার দাঁড়ায়। কিন্তু লিগ্যাল তালিকায় শহীদ হলো ৯০০। আমরা বলেছি শহীদের কোনো রঙ হয় না, কোনো দল হয় না, কোনো শ্রেণি হয় না। শ্রেণি বৈষম্য করে একটা দল দেশ ছেড়ে পালিয়েছে।
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির নোয়াখালী জেলা উত্তরের আয়োজনে ফাইনাল খেলাটি চৌমুহনী সরকারি এস. এ. কলেজ বনাম চাটখিল পশ্চিম দলের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় । নির্ধারিত খেলায় চাটখিল পশ্চিম ৩–০ গোলে চৌমুহনী সরকারি এস. এ. কলেজকে পরাজিত করে। নোয়াখালী জেলা উত্তর শিবিরের সভাপতি দাউদ ইসলামের সভাপতিত্বে এ সময় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সম্পাদক হাফেজ আবু মুসা, নোয়াখালী জেলা উত্তর শিবিরের সাবেক সভাপতি মশিউর রহমান ফাহাদ, সেক্রেটারি মুজাহিদুল ইসলাম, অফিস সম্পাদক আমিমুল ইসলাম ফাহাদ, অর্থ সম্পাদক ওসমান গনি, ইসলামী ছাত্রশিবির নোয়াখালী জেলা উত্তর শাখার থানা পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতা, দুই দলের খেলোয়াড়সহ আরও অনেকে।
কেএন/টিকে