বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেছেন, ‘ফ্যাসিবাদী আওয়ামী আমলের মতো গণহারে নম্বর বা জিপিএ ৫ বা গণ পাসের নির্দেশনা ছিল না বলে হয়তো পাসের হার কম, তবে এবার শিক্ষার্থীদের প্রকৃত মেধা মূল্যায়িত হয়েছে। রাজনৈতিক কারণে গণহারে নম্বর ও জিপিএ ৫সহ পাসের হার বেশি দেখিয়ে কৃতিত্ব নেওয়ার প্রবণতা বিগত ফ্যসিবাদী আওয়ামী আমলে ছিল। সে কারণে সামগ্রিকভাবে মেধার অবমূল্যায়ন হতো। এ বছর প্রকৃত অর্থেই পড়ালেখা করে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়েছে।’
আজ রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকালে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের পৌর অডিটরিয়ামে এ বছর এসএসসি, দাখিল ও ভোকেশনাল পরীক্ষায় উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে জিপিএ ৫ প্রাপ্ত কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সৈয়দ হাসিবুল হাসান চৌধুরী ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আহ্বায়ক প্রকৌশলী লুৎফুল্লাহেল মাজেদ বাবু, যুগ্ম আহ্বায়ক আমিরুল ইসলাম মনি ছাড়াও উপজেলা বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা।
এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘আওয়ামী লীগের আমলে সস্তা জিপিএ-কেন্দ্রিক স্কুলশিক্ষার মাধ্যমে জাতিকে ভেতর থেকে ধ্বংসের আয়োজন করা হয়। গণহারে নম্বর দেওয়া, জিপিএ ৫-এর বাম্পার ফলন ও গণপাসের প্রকল্পের মাধ্যমে শিক্ষা খাতকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া হয়।
শিক্ষাকে ক্লাসরুম থেকে উঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। অতিমাত্রায় রাজনীতি ও বাণিজ্যিকীকরণ ও দিবস কেন্দ্রিক করা হয়েছিল। গত ১৫ বছর আওয়ামী স্বৈরাচার শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। হাজার হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে গেছে। এর মাসুল দিচ্ছে আমাদের সন্তানরা।’
তিনি আরো বলেন, ‘আওয়ামী লীগ শিক্ষা কারিকুলামে নীতি-আদর্শহীন, অনৈতিক ও মেধাহীন শিক্ষাব্যবস্থা চালু করেছিল। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা দখলের পর থেকেই শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস, প্রশ্ন ফাঁস ও পরীক্ষায় নকলের সুযোগ করে দিয়েছে। একটি দেশের শিক্ষাক্রম অনুকরণ করে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। গোটা জাতির মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়ার অসৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই শিক্ষা কারিকুলাম চালু করা হয়েছে।
এই কারিকুলাম একমুখী শিক্ষা হওয়ার ফলে বহুমুখী শিক্ষা হারিয়ে যাচ্ছে। যে সরকারের আমলে খাতায় না লিখেও পাস করিয়ে দেওয়া হয়, সেই সরকারের নীতিতে শিক্ষার গুণগত মান কখনোই উন্নত হবে না। অথচ বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে প্রশ্ন ফাঁস ও নকল বন্ধ করে শিক্ষাব্যবস্থায় দৃশ্যমান পরিবর্তন এনেছিল। হেডামগিরি করার নাম রাজনীতি নয়। আওয়ামী লীগ হেডাম দেখিয়ে ধ্বংস হয়েছে। এখন যদি আমরা তা করি তাহলে আমাদের পরিণতি তাই হবে। এই জন্য সবাইকে শিক্ষা নিতে হবে।’
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘শুধু শিক্ষায় আলোকিত হলে চলবে না। সব ক্ষেত্রে আলোকিত হতে হবে। তবে মানবিক আলোকিত ও ভালো মানুষ হতে হবে। নেতাদের খুশি করতে কোনো অনুষ্ঠান বা দিবসে লাইনে দাঁড় করানোর জন্য বিদ্যালয় থেকে আনা যাবে না। শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে রাখতে হবে।’
কৃতি শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘তোমরাই জাতির ভবিষ্যৎ। তোমাদের দিকে ঈশ্বরগঞ্জবাসী তাকিয়ে আছে।তোমাদের সাফল্য ঈশ্বরগঞ্জবাসীর গর্ব। আলোকিত ঈশ্বরগঞ্জ গড়তে আলোকিত মানুষ চাই।’
অনুষ্ঠান শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। প্রকৌশলী লুৎফুল্লাহেল মাজেদ বাবু ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে অনুষ্ঠানে ঈশ্বরগঞ্জের প্রশাসনিক কর্মকর্তা, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষক, কৃতি শিক্ষর্থীদের অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন। এমরান সালেহ প্রিন্স কৃতি শিক্ষর্থীদের ক্রেস্ট, বই, অর্থ প্রদান করেন।