১৪টি অলিম্পিক পদক জয়ী মার্কিন সাঁতারু কেটি লেডেকি সম্প্রতি স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। একসময় যিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন, সেই লেডেকি এবার অনুপ্রেরণাদায়ী বক্তব্যে ছাত্রছাত্রীদের জানালেন জীবন ও সাফল্য নিয়ে তাঁর গভীর উপলব্ধি, অভিজ্ঞতা এবং দর্শন।
লেডেকি বক্তব্য শুরু করে বলেন, আমি সত্যিই ভাগ্যবান যে আমার এমন একজন বাবা আছেন, যিনি ছোটবেলায় ভোর চারটায় ঘুম থেকে তুলে আমাকে সাঁতারের অনুশীলনে নিয়ে যেতেন।
বাবা জানতেন, আমি সাঁতার ভালোবাসি, একই সঙ্গে অঙ্ক। বাবাই শিখিয়েছিলেন, সাঁতারের প্রতিযোগিতার ফল কখনো কখনো সেকেন্ডের ভগ্নাংশ দিয়ে নির্ধারিত হয়। ১ সেকেন্ডের ১০০ ভাগের ১ ভাগের কারণেও একটা ফল বদলে যেতে পারে। বাবা আমাকে একটি স্টপওয়াচ দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, যত দ্রুত সম্ভব চালু আর বন্ধ করতে। তারপর দেখত, কত সময় লেগেছে। তিনি বলেন, হাতে একটি স্টপওয়াচ নিয়ে বাবা দেখাতেন কীভাবে সময় মেপে চলতে হয় এবং সময়ের প্রকৃত অর্থ কী।
তিনি বলেন, তোমরা হয়তো ঘণ্টার পর ঘণ্টা অ্যাসাইনমেন্টে কাটিয়েছ, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে স্ট্যানফোর্ডে সময়টা চোখের পলকেই কেটে গেল।
২০১২ লন্ডন অলিম্পিকে মাত্র ১৫ বছর বয়সে সোনা জেতার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন লেডেকি। বলেন, আমার লেনের পাশে ছিলেন তৎকালীন চ্যাম্পিয়ন ব্রিটিশ সাঁতারু বেকি অ্যাডলিংটন। সবাই চিৎকার করছিল ‘বেকি’, আমি শুনছিলাম ‘লেডেকি’। কেউ আমাকে চিনত না, আমি শুধু জানতাম থামা যাবে না।
প্রতিযোগিতায় চমকপ্রদভাবে এগিয়ে যান তিনি, যদিও ধারাভাষ্যকারেরা বারবার তাঁকে ধীর হতে বলছিলেন। ভেবেছিলাম, যদি তাঁদের কথা শুনতাম, হয়তো থেমে যেতাম। কিন্তু আমি জানি, দ্রুত শুরু করলে অনেক দূর যাওয়া যায়।
লেডেকি বলেন, অনেকেই বলবে, তুমি তরুণ, ধীরে চলো। কিন্তু তরুণ আর অচেনা হওয়াটা কখনো কখনো বাড়তি সুবিধাও দিতে পারে। তিনি তরুণদের উৎসাহ দেন সাহসিকতার সঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়তে, নিজেদের ওপর বিশ্বাস রাখতে এবং নেতৃত্ব নিতে।
বক্তব্যে হালকা হাস্যরসের ছোঁয়া দিতে লেডেকি শোনান ‘আইসক্রিম’ গল্প যখন আমার বয়স প্রায় ১০ বছর, মা কোথায় যেন পড়েছিলেন, লো-ফ্যাট চকলেট দই সাঁতারুদের জন্য ভালো নাশতা। কিন্তু কোনো কারণে দোকানে লো-ফ্যাট চকলেট দই পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই প্রায় এক বছর মা আমাকে দইয়ের বদলে চকলেট আইসক্রিম খাইয়েছেন। সম্ভবত এই লোভেই প্রতিদিন সকালে এত আগ্রহ নিয়ে অনুশীলনের জন্য উঠে পড়তাম!
মজার ব্যাপার হলো, আইসক্রিমের গল্পটা শুনতে সবাই পছন্দ করে। কিন্তু এ গল্প যেন সবাইকে একটু হতাশই করে। মনে মনে তারা বলে, ‘আহহা কেটি, দুষ্টুমি ছেড়ে সত্যিকার রহস্যটা বলো তো!’ এটা ঠিক, আসল রহস্য আইসক্রিম নয়। সত্যি কথা হলো, আদতে কোনো রহস্য নেই।
হয়তো সবচেয়ে কাছাকাছি উত্তর এটাই, আমি লক্ষ্য স্থির করি, কিন্তু কখনোই জেতার জন্য নয়।
জয় নির্ভর করে তুলনার ওপর। অন্যের সঙ্গে তুলনা। কিন্তু তুমি বারবার জিতলেও শেষমেশ তুলনা তোমার নিজের সঙ্গেই হয়। তোমার আগের, তরুণ আর শক্তিশালী সংস্করণের সঙ্গে। তাই আমার লক্ষ্য সব সময় নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে।
সব সময় সময়নির্ভর। এ কারণেই বলি, তোমাকে দৌড়ের প্রতিযোগিতায় জিততে হবে না, তুমি শুধু তোমার নিজের দৌড়ে জেতো। নিজের দৌড় জেতা মানে হলো প্রক্রিয়াটাকে ভালোবেসে ফেলা। প্রক্রিয়াকে ভালোবাসো, মঞ্চকে নয়।
এমকে/এসএন