মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির নামে এক হাজার ১৫৯ কোটি ৮২ লাখ দুই হাজার ৫০০ টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে ১৩টি ওভারসিজ কম্পানির মালিকসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে পৃথক ১৩টি মামলা করার অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল রবিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন এ তথ্য জানান।
আক্তার হোসেন বলেন, ১৩টি ওভারসিজ কম্পানির চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পরিচালকসহ অন্য আসামিরা বায়রার বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালনকালে সিন্ডিকেট করে বায়রার রেজিস্ট্রেশনের শর্ত ভেঙে সরকার নির্ধারিত ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকার পাঁচ গুণ টাকা নেন। এতে তাঁরা সরকারি দলের প্রভাব খাটান।
তাঁরা মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পাদিত চুক্তির আওতায় শ্রমিক রিক্রুটের জন্য এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ পান; কিন্তু মালয়েশিয়ায় চাকরি নির্দিষ্ট প্রস্তাবের বিপরীতে শ্রমিক পাঠানোর জন্য নির্ধারিত বাছাই ও অর্থসংশ্লিষ্ট শর্তাদি এড়িয়ে জনশক্তি/শ্রমিক পাঠানো প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন। তাঁরা পরস্পর যোজসাজশে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে রিক্রুটিং এজেন্সির প্রতি অনুগ্রহ দেখিয়ে ও রিক্রুটেড শ্রমিকদের ক্ষতিসাধন করে চুক্তির বাইরে বিভিন্ন ধাপে বাড়তি অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। আসামিরা সরকার নির্ধারিত ব্যয়ের চেয়ে পাঁচ গুণ টাকা নিয়ে মালয়েশিয়ায় পাঠানো কর্মীর কাছ থেকে পাসপোর্ট, স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং নির্ধারিত ফির অতিরিক্ত টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। পরে আসামিরা ওই অর্থ হস্তান্তর, রূপান্তর ও স্থানান্তর করেছেন।
অনুমোদিত প্রথম মামলায় আকাশ ভ্রমণ ওভারসিজের মালিক মনসুর আহমেদ কালামকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় ১৩৫ কোটি ৫৫ লাখ ৭৭ হাজার ৫০০ টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে।
দ্বিতীয় মামলায় উইনার ওভারসিজের রহিমা হক ও মাহফুজুল হককে আসামি করা হয়েছে। মামলায় ৫৯ কোটি ৮৩ লাখ ১০ হাজার টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে।
তৃতীয় মামলায় শাহীন ট্রাভেলসের এম শাহাদাত হোসাইনকে (তসলিম) আসামি করা হয়েছে। মামলায় ১২৩ কোটি ৯৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে।
চতুর্থ মামলায় নাভিরা লিমিটেডের শেখ মোহাম্মদ শাহিদুর রহমান, মাহবুবুর রহমান ও মো. শামিম হাসানকে আসামি করা হয়েছে। এতে ৮১ কোটি ৪৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে।
পঞ্চম মামলায় আদিব এয়ার ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসের মোবারক উল্লাহ, আবুল কালাম আজাদ, নওশাদ আরা আক্তার ও হাছনা আক্তার আজাদকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় ১৩২ কোটি ২৭ লাখ ৪৭ হাজার ৫০০ টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে।
ষষ্ঠ মামলায় ইউনাইটেড ম্যানপাওয়ার কনসালট্যান্স লিমিটেডের নাজমা আক্তার, জেডইউ সায়েদ, জুহানা সুবাইতা ও জিসান সায়েদকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় ৫৯ কোটি ১৪ লাখ ৪২ হাজার ৫০০ টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে।
সপ্তম মামলায় গ্রিনল্যান্ড ওভারসিসের রেহানা আরজুমান হাইকে আসামি করা হয়েছে। এতে ৭৯ কোটি ৬১ লাখ ২৭ হাজার ৫০০ টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে।
অষ্টম মামলায় পি আর ওভারসিস লিমিটেডের ইমান আকতার পুনম ও গোলাম রাকিবকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় ৭৯ কোটি ৮৪ লাখ ৭২ হাজার ৫০০ টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে।
নবম মামলায় জাহারত অ্যাসোসিয়েট লিমিটেডের মুহাম্মদ শফিকুল আলম (ফিরোজ), নাহিদা আক্তার, রওশন আরা পারভিন ও এ কে এম মোশারফ হোসেনকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় ১১৬ কোটি ২৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে।
দশম মামলায় অপূর্ব রিক্রুটিং এজেন্সির মহিউদ্দিন আহমেদকে আসামি করা হয়েছে। এতে ৫৩ কোটি ২৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে।
একাদশতম মামলায় মেসার্স জান্নাত ওভারসিজের লিমা বেগমকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় ৬৩ কোটি ৫৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে।
দ্বাদশতম মামলায় মিডওয়ে ওভারসিস লিমিটেডের মোহাম্মদ রফিকুল হালদার ভূঁইয়া ও কাজী আদিতি রুবাইয়াতকে আসামি করা হয়েছে। এতে ৬২ কোটি ২৯ লাখ ৩২ হাজার ৫০০ টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে।
ত্রয়োদশতম মামলায় সাউথ পয়েন্ট ওভারসিস লিমিটেডের মঞ্জুর কাদের, সাদিয়া মঞ্জুর, আহমেদ আতাউর রহমান, আহমেদ খালেদ লুবনানী ও আহমেদ ফয়সাল রমাদানীকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় ১১২ কোটি ৭৭ লাখ ৭৭ হাজার ৫০০ টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এর আগে গত ১১ মার্চ মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির নামে এক হাজার ১২৮ কোটি ৬১ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ওরফে লোটাস কামালসহ ১২ এজেন্সির মালিকের বিরুদ্ধে পৃথক ১২টি মামলা করে দুদক।
এবি/টিকে