ভাঙ্গায় বিক্ষোভকারীদের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ভাঙ্গা থানা, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় এবং ভাঙ্গা হাইওয়ে থানা পরিদর্শন করেছেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক।
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ১২টার দিকে ভাঙ্গা থানা কম্পাউন্ডে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি আব্দুল মাবুদ, ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান মোল্লা, ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আব্দুল জলিল, ভাঙ্গা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আসিফ ইকবাল, ভাঙ্গা থানার ওসি মো. আশরাফ হোসেন প্রমুখ।
পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, ‘এখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়ে কথা হয়েছে।
জনগণের নিরাপত্তা, শান্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য প্রশাসনের যারা এখানে কর্মরত রয়েছেন, তাদেরকে বলেছি- ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত প্রত্যেক অপরাধীকে আইনের আওতায় আনতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। ভাঙ্গা থানা, উপজেলা পরিষদ এবং হাইওয়ে থানায় হামলার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর পাঁচ জন সদস্য আহত হয়েছেন।’
এদিকে, ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান মোল্লা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, ‘সোমবারের ঘটনায় ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হচ্ছে। ভাঙ্গার মানুষের সুনাম রয়েছে। আপনাদের আমি আপডেট দিতে চাই, ভাঙ্গার জনগণের আবেগ, অনুভূতি তুলে ধরে একটি রিপোর্ট নির্বাচন কমিশন সচিব বরাবর পাঠিয়েছি। রিপোর্টটি তারা বিবেচনা করবেন।
আমরা সাধারণ মানুষের আবেগ অনুভূতি ধারণ করি। মানুষের আবেগ অনুভূতি বুঝি।’
ভাঙ্গাবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা ধৈর্য ধারণ করুন। ২১ সেপ্টেম্বর একটি রিটের শুনানি হবে। শুনানি অনুষ্ঠিত হলে বিষয়টি বোঝা যাবে।
আপনারা সে পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ করুন। ২১টি জেলার সংযোগস্থল ভাঙ্গা। সড়ক অবরোধ থেকে সরে এসে মানববন্ধন বা অন্য কিছু করা যেতে পারে।’ মানুষের ভোগান্তি হয় এমন কিছু না করার আহ্বান জানান তিনি।
জানা যায়, ফরিদপুর-৪ সংসদীয় আসনের ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়ন দুটি কেটে পার্শ্ববর্তী ফরিদপুর-২ সংসদীয় আসনের নগরকান্দা ও সালথা উপজেলার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। গত ৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন এর একটি গেজেট প্রকাশ করে। কিন্তু ভাঙ্গা উপজেলার ওই ইউনিয়ন দুটির বাসিন্দারা ফরিদপুর-দুই আসনের সঙ্গে যেতে রাজি নন। তারা এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করেন। গতকাল সোমবার দুপুরে ভাঙ্গায় ষষ্ঠ দিনের মতো অবরোধ চলছিল। দুপুরে আন্দোলনকারীরা ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়, ভাঙ্গা থানা এবং ভাঙ্গা হাইওয়ে থানা ও ভাঙ্গা ঈদগা মসজিদের কাচ ভাঙচুর করেন।
থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বিক্ষোভকারীরা ভাঙ্গা থানার ৫টি ডাবল কেবিন গাড়ি, ৫ টন বহনকারী পুলিশের ১টি ট্রাক, ট্রাফিক পুলিশের সরকারি ২টি মোটরসাইকেল, ডিএসবি অফিসারের ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেন। এ সময় তারা দুটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেন। এ ছাড়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের অফিসের প্রবেশ পথের ফুল গাছগুলো কেটে ফেলেন।
অন্যদিকে, ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে প্রবেশ করে বিক্ষুব্ধরা ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের সব কক্ষ, উপজেলা কৃষি ও সহকারী কৃষি অফিসারদের সব কক্ষ, অডিটোরিয়ামের আসবাবপত্র এবং দরজা, উপজেলা পরিষদের সভা কক্ষ, অফিসার্স ক্লাবের জানালা, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের গাড়ির গ্যারেজের মোটরসাইকেল, এবং নির্বাচন অফিসারের জানালার কাচ এবং অফিসের সামনে রক্ষিত কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেন ও পুড়িয়ে দেন।
পরে তারা ভাঙ্গা হাইওয়ে থানায় প্রবেশ করে ১টি অ্যাম্বুলেন্স, ১টি রেকার গাড়ি, ১টি জল কামানের গাড়ি, একটি জিপ গাড়িসহ ৪টি গাড়ি, ৭-৮টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেন। এ সময় তারা হাইওয়ে থানার প্রতিটি কক্ষ ভাঙচুর করে ব্যাপক ক্ষতি করে।
ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ওসি মোহাম্মদ রোকিবুজ্জামান বলেন, ‘সোমবার দুপুর দেড়টার দিকে সাত-আট শ লোক হাইওয়ে থানায় প্রবেশ করে। এ সময় তারা হাইওয়ে থানার একটি অ্যাম্বুলেন্স, একটি রেকার গাড়ি, একটি জল কামানের গাড়ি, একটি জিপ গাড়িসহ ছয়টি গাড়ি এবং ৭-৮টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেন। পরে তারা হাইওয়ে থানায় প্রবেশ করে প্রতিটি কক্ষ ভাঙচুর করেন। এ সময় আমি হামলাকারীদের আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পেতে বাথরুমে আশ্রয় নেই।’
কেএন/টিকে