২ শতাংশ অর্থ জমা দিয়ে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করার সুযোগ দিল বাংলাদেশ ব্যাংক

আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ব্যবসা করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছে বা মার্কিন ডলারের মূল্যবৃদ্ধিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে-এমন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চালু ও চাঙার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোক ২ শতাংশ অর্থ জমা দিয়ে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করার সুযোগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, নগদায়েনের ছয় মাসের মধ্যে আবেদনটি নিষ্পত্তির নির্দেশ। ৩০০ কোটি বা তার বেশি ঋণের ক্ষেত্রে নীতি সহায়তা সংক্রান্ত বাছাইকমিটির কাছে আবেদন করতে হবে। চূড়ান্তভাবে ঘোষিত ইচ্ছাকৃত খেলাপিরা এ সুবিধা পাবেন না। ২ শতাংশ অর্থ জমা দিয়ে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করার সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ৩০০ কোটি টাকার বেশি ঋণের ক্ষেত্রে নীতি সহায়তা সংক্রান্ত বাছাই কমিটিতে আবেদন করতে হবে।

এ ঋণের মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ ১০ বছর। ঋণ নিয়মিত হলে শুরুতে দুই বছর ঋণ পরিশোধে বিরতি সুবিধা পাওয়া যাবে। এ সুবিধা পেতে চাইলে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে আবেদন করতে হবে।

খেলাপি ব্যবসায়ীদের ঋণ পুনঃ তফসিল করার সুবিধা দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এতে বলা হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ পুনঃ তফসিলের আবেদন পাওয়ার পর ছয় মাসের মধ্যে ব্যাংককে তা নিষ্পত্তি করতে হবে। ঋণ পুনঃ তফসিলের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। একইভাবে এককালীন ঋণ পরিশোধ করা যাবে। এ ক্ষেত্রে এক বছর সময় পাবেন গ্রাহকেরা। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনো অনাপত্তি নেওয়ার প্রয়োজন হবে না। এর ফলে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে যেসব ব্যবসায়ী চাপে ছিলেন এবং বিএনপি ও জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত তারা সুবিধা পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

দেশে গত জুন মাসের শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা। যা বিতরণ করা মোট ঋণের ২৭ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। দেশে এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে তিন লাখ কোটি টাকার বেশি।

কেন এ সুবিধা দিচ্ছে ব্যাংক-

ঋণ নিয়মিত করার সুবিধা দেওয়ার মূল উদ্দেশ্য হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের আগে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী অনেক ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কারণে স্বাভাবিক ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়।

এতে ঋণ বা ঋণের কিস্তি পরিশোধে প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয় প্রতিষ্ঠানগুলো। তাদের কেউ কেউ ঋণসংশ্লিষ্ট ব্যাংকিং ও আনুষঙ্গিক সেবাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে অব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গির শিকার হয়ে স্বাভাবিক ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড চালাতে পারেননি। এতে তারা খেলাপি হয়ে পড়েন। অন্যদিকে ব্যাংকের ঋণ আদায় কার্যক্রমে বিরূপ প্রভাব পড়ে, যা সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতি ও ব্যাংক খাতের আর্থিক কাঠামোকে ঝুঁকির সম্মুখীন করেছে।

এমন প্রেক্ষাপটে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের পুনর্গঠন, ব্যাংক খাতে কাঙ্ক্ষিত গতি ফিরিয়ে আনা এবং দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা ফেরাতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়।

বিভিন্ন কারণে বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন থেকে সৃষ্ট অভিঘাত ও বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে দেশি টাকার বিনিময় হার অপ্রত্যাশিতভাবে কমে যাওয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া প্রতিষ্ঠানও এই সুবিধার জন্য আবেদন করার যোগ্য হবে। এরইমধ্যে ঋণ পুনঃ তফসিল ও পুনর্গঠন ইত্যাদি সুবিধা যেসব প্রতিষ্ঠান পায়নি, তাদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এই নীতি সহায়তা দেওয়া হবে।

যেসব সুবিধা পাওয়া যাবে-

বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ব্যাংকার ও গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত বিদ্যমান খেলাপি ঋণের স্থিতির ওপর কমপক্ষে ২ শতাংশ নগদে অর্থ জমা দিতে হবে। তাতে ঋণ নিয়মিত হলে দুই বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ (ঋণ পরিশোধে বিরতি) তা পরিশোধে ১০ বছর সময় পাওয়া যাবে। তবে ইতিপূর্বে ঋণ তিন বা তার চেয়ে বেশিবার পুনঃ তফসিল করা হলে অতিরিক্ত ১ শতাংশ অর্থ জমা দিতে হবে। তবে পরবর্তী সময়ে ব্যাংকের নির্ধারিত ঋণ পরিশোধের সূচি অনুযায়ী তিনটি মাসিক কিস্তি বা একটি ত্রৈমাসিক কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা হবে।

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, আগে যেসব অর্থ জমা দেওয়া হয়েছে, তা ২ শতাংশ হিসেবে গণ্য হবে না। নতুন করে ২ শতাংশ অর্থ জমা দেওয়ার পর তা নগদায়ন হলে এরপর ছয় মাসের মধ্যে আবেদনটি নিষ্পত্তি করতে হবে।

সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ঋণগ্রহীতার ক্ষতির পরিমাণ ও প্রতিষ্ঠানের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনাকে যথাযথভাবে বিবেচনায় নিয়ে ঋণ পুনঃ তফসিল করতে নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, এই সুবিধা দেওয়ার পর ৯০ দিনের মধ্যে ব্যাংক ও গ্রাহকের সোলেনামার মাধ্যমে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে চলমান মামলার কার্যক্রম স্থগিতের ব্যবস্থা নিতে হবে। কোনো গ্রাহক সুবিধার কোনো শর্ত ভাঙলে তার পাওয়া সব সুবিধা বাতিল হবে। এমনকি ঋণ আদায়ে ব্যাংক প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবে।

নির্দেশনা অনুযায়ী, ৩০০ কোটি বা তার বেশি ঋণের ক্ষেত্রে নীতি সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে ব্যাংক সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন নিয়ে ব্যবসা ও আর্থিক ব্যবস্থাদি পুনর্গঠনের লক্ষ্যে গঠিত নীতি সহায়তাসংক্রান্ত বাছাই কমিটির কাছে আবেদন করতে হবে। জালজালিয়াতি বা অন্য কোনো প্রতারণা বা অনিয়মের মাধ্যমে নেওয়া ঋণ কিংবা ব্যাংক কর্তৃক চূড়ান্তভাবে ঘোষিত ইচ্ছাকৃত খেলাপি গ্রাহকেরা এই ঋণ সুবিধা পাবেন না।

এবি/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ভারত ম্যাচে দেরি, বাফুফেকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা Dec 20, 2025
img
বিটিভির মহাপরিচালকের বাসভবনে অগ্নিসংযোগ Dec 20, 2025
img
বড় অঙ্কের প্রস্তাব পেয়েও ম্যান ইউনাইটেড ছাড়েননি ব্রুনো Dec 20, 2025
img
ফ্রান্স ও ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ব্রাজিলের ম্যাচ সূচি প্রকাশ Dec 20, 2025
img
‘বাম, শাহবাগি, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে’-জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি মোস্তাফিজ Dec 20, 2025
img
বাসার গেটে পুলিশ, ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে প্রাণ গেল আওয়ামী লীগ নেতার Dec 20, 2025
img
ওসমান হাদিকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, সাবেক নৌ প্রতিমন্ত্রীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ Dec 20, 2025
img
ছায়ানটে হামলা, বাঙালিদের জেগে ওঠার আহ্বান বিজেপির! Dec 20, 2025
img
যুবশক্তির কেন্দ্রীয় নেতা নাহিদের পদত্যাগ Dec 20, 2025
img
পুরোনো একটি চিহ্নিত মহল দেশকে নৈরাজ্যের পথে ধাবিত করতে চায় : মির্জা ফখরুল Dec 20, 2025
img
ভারত আর আওয়ামী লীগ নির্বাচন বানচাল করতে চায় : হাদির বোন মাসুমা Dec 20, 2025
img
আইনজীবী আলিফ হত্যায় সাদা টি-শার্ট পরে অংশ নেওয়া সুকান্ত গ্রেপ্তার Dec 20, 2025
img
ইলিয়াসের ফেসবুক বন্ধ করল মেটা Dec 20, 2025
img
হাদির লড়াই ছিল গড়ার, পুড়িয়ে ফেলার নয় : তাসনিম জারা Dec 20, 2025
img
হাসিনাকে আশ্রয় মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে, জানাল ভারত Dec 19, 2025
img
হাদির খুনিদের বিচার বাংলাদেশের মাটিতেই হবে : টুকু Dec 19, 2025
img
সকালে ফোন দেখেন না কারিনা! প্রথম চুমুক দেন কোন পানীয়তে? Dec 19, 2025
img
ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাক ছাত্র-জনতার Dec 19, 2025
img
‘আমিও একটা মানুষ’, বাবার মৃত্যুশোকে কাহিল ঈশা! Dec 19, 2025
img
ওসমান হাদির মৃত্যুতে ফ্রান্স দূতাবাসের বিবৃতি Dec 19, 2025