সরকারের ভেতরে থেকে অনেকে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত : রফিকুল ইসলাম

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেছেন, বর্তমান সরকার কোনো দলীয় নয়। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি, ড. ইউনূসের আশেপাশের অনেকে একটি দলের পকেটে ঢুকে গেছে। সরকারে ভেতরে থেকে অনেকে সরকার ও দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। এটি মেনে নেবে না জনগণ। ফ্যাসিবাদের মতোই জনগণ তাদের প্রতিরোধ করবে। সংস্কারের প্রত্যাশা ছিল তা হয়নি। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করতেই হবে। প্রতিবন্ধকতা তৈরিকারীদের চিহ্নিত করা হবে। নির্বাচনের জন্য এখনও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি। দেশে আইনশৃঙ্খলার উন্নতি হয়নি।

শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনসহ ৫-দফা বাস্তবায়নের দাবিতে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির আলোকে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের উত্তর গেটে চট্টগ্রাম মহানগরীর বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সমাবেশ শেষে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে গণমিছিল নিউমার্কেট মোড়ে গিয়ে আবারও সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্যদিয়ে শেষ হয়।

জামায়াতের ৫ দফা দাবিগুলো হল- জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজন করা, আগামী জাতীয় নির্বাচনে সংসদের উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু করা, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) নিশ্চিত করা, ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা। আর এসব দাবি সরকার মেনে নিলে আগামীকালই নির্বাচন হলে জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবে। 

প্রধান অতিথি মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, একটি শ্রেণি আওয়ামী লীগ স্টাইলে নির্বাচন করার স্বপ্ন দেখছে। বাংলাদেশের মাটিতে আওয়ামী স্টাইলের কোনো নির্বাচন জনগণ আর হতে দেবে না। জুলাই হত্যাকাণ্ডের দৃশ্যমান বিচার শেষে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দিতে হবে।

আমরা যে দাবি বাস্তবায়নে জন্য রাজপথে নেমেছি, এসব দাবি বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান ড. ইউনূস জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, ফ্যাসিবাদী ও তাদের দোসরদের দৃশ্যমান বিচার করবে এবং পাচারকৃত টাকা ফেরত আনবে, নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করবে।

তিনি বলেন, অনেকে বলছে আমরা রাজপথে কেন নেমেছি? আমরা বলছি, রাজপথের আন্দোলন ও লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে দেশ থেকে ফ্যাসিবাদকে বিদায় দিয়েছে দেশের জনগণ। কাজেই রাজপথে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জুলাই বিপ্লবের যে আকাঙ্ক্ষা সেটা আমরা বাস্তবায়ন করবো। 

পিআর নির্বাচন পদ্ধতির পক্ষে গণভোটের দাবি জানিয়ে মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, আমরা চ্যালেঞ্জ নিচ্ছি, গণভোট দিন। জনগণ পিআর-এর পক্ষে আছে কি বিপক্ষে আছে। জনগণ যদি পিআর মানে অন্তবর্তীকালীন সরকারকেও মানতে হবে। আর জনগণ যদি বিপক্ষে যায় আমরা তা মেনে নেব। ফ্যাসিবাদের দোসরদের রাজনীতি অকার্যকর করে তাদের কার্যক্রম স্থগিত করতে হবে। মানবতাবিরোধী অপরাধের অপরাধীদের দৃশ্যমান বিচার করতে হবে।

সমাবেশে সভাপতির বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম মহানগরীর ভারপ্রাপ্ত আমির মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম এবং সঞ্চালনা করেন সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিন। 

সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, গোটা জাতি উৎসবমুখর নির্বাচনের জন্য মুখিয়ে আছে। কেউ কেউ আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে জামায়াত নাকি নির্বাচন পিছাতে চায়। আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে চাই জামায়াত সবার আগেই তিনশত আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে কাজ শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু অন্যদের ক্ষেত্রে দৃশ্যমান কোনো নির্বাচনী কার্যক্রম চোখে পড়ে না। যারা জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদান, প্রয়োজনীয় সংস্কারে বাধাগ্রস্ত করছে এবং পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের বিরোধিতা করছে নিজেদের ভরাডুবি জেনে তারাই মূলত ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে পিছিয়ে দিতে চায়।

সভাপতির বক্তব্যে মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল আয়ুব খান ও ইয়াহিয়া খানের ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে। সত্তুরের নির্বাচনের ম্যান্ডেট মেনে না নেওয়ার কারণে মুক্তিযুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। তবে মুক্তিযুদ্ধের নামে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে ফ্যাসিবাদ কায়েম করা হয়েছে, যা মুক্তিযুদ্ধের স্পষ্ট অবমাননা।  দুই হাজারেরও বেশি শাহাদাত, অসংখ্য পঙ্গুত্ব ও নির্যাতনের পর ৩৬ জুলাই বিপ্লব এসেছে এবং দীর্ঘ দেড় দশকের ফ্যাসিবাদী শাসন শেষ হয়েছে। পুনরায় ফ্যাসিবাদী ফিরিয়ে আনার যেকোনো চেষ্টা রোধ করতে হবে। জাতীয় পার্টিসহ ফ্যাসিবাদী দোসরদের কার্যক্রম অবিলম্বে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। আধিপত্যবাদকে ভাড়া দিয়ে যারা রাজনীতি বা বুদ্ধিজীবীতা করছেন, তাদেরকেও বাংলাদেশ প্রত্যাখ্যান করবে।  

কেএন/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বাংলাদেশ ভ্রমণে উচ্চমাত্রার সতর্কতা জারি কানাডার Sep 19, 2025
img
ধর্মকে পুঁজি করে একটি রাজনৈতিক দল প্রতারণা করছে : আমিনুল হক Sep 19, 2025
img
ভৈরবে দুপক্ষের সংঘর্ষে আহত ১০ Sep 19, 2025
আফ্রিদির মুখে মোদির নাম, হ্যান্ডশেক না করার পেছনে ‘রাজনৈতিক নাটক’? Sep 19, 2025
লেভেল থ্রি কোচিং শেষে যা জানালেন বিসিবি সভাপতি বুলবুল Sep 19, 2025
হাত মেলানো নয়, দূরত্বেই সমাধান! সুপার ফোরে নতুন নির্দেশ আইসিসির Sep 19, 2025
বার্সায় অভিষেকেই রাজত্ব! চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রাশফোর্ডের দুর্দান্ত জোড়া গোল Sep 19, 2025
এশিয়া কাপে বাংলাদেশ ভালো ক্রিকেট খেলছে: বিসিবি সভাপতি বুলবুল Sep 19, 2025
img
এস্তোনিয়ায় ঢুকল রাশিয়ার তিন যুদ্ধবিমান Sep 19, 2025
img
নতুন লুকে আবারও চমকে দিলেন অভিনেত্রী পূর্ণিমা! Sep 19, 2025
ট্রাম্প-মেলানিয়াকে নিয়ে জরুরি অবতরণ, হেলিকপ্টারে যান্ত্রিক ত্রুটি Sep 19, 2025
এআই প্রযুক্তিতে কিমের বাজি, ড্রোন যুদ্ধে প্রস্তুত উত্তর কোরিয়া! Sep 19, 2025
প্রশ্ন করুন–আমরা কেন ঘুমিয়ে আছি? Sep 19, 2025
img
রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই : জিল্লুর রহমান Sep 19, 2025
img
নিক্সন চৌধুরীর উসকানিমূলক বক্তব্যে ভাঙ্গায় আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হয়েছে : বাংলাদেশ পুলিশ Sep 19, 2025
img
জয়ের বিকল্প ভাবছে না বাংলাদেশ, মুস্তাফিজের দরকার ৪ উইকেট Sep 19, 2025
img
সুদানে ড্রোন হামলায় প্রাণ গেল অন্তত ৭৫ জনের Sep 19, 2025
img
জামায়াত ভোটের জন্য জান্নাতের কথা বলে মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছে : কামরুল হুদা Sep 19, 2025
img
ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিচ্ছে ১০ দেশ, আন্তর্জাতিক চাপে এবার ইসরায়েল! Sep 19, 2025
img
নির্বাচন বানচাল আমরা করতে চাই না: আজাদ Sep 19, 2025