কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ৫ দফা দাবিতে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ। শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বাদ আসর নগরীর আন্দরকিল্লাহ শাহী জামে মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়।
এর আগে বাসে নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে জামায়াতের উত্তর-দক্ষিণের নেতাকর্মীরা মিছিলে অংশগ্রহণ করতে অবস্থান নেন। মিছিলটি আন্দরকিল্লাহ হয়ে নগরীর লালদিঘীর পাড় কোতোয়ালির মোড় প্রদক্ষিণ করে নিউমার্কেট মোড়ে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ৫ দফা দাবি পেশ করেন নেতারা। এগুলো হলো- জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজন করা; আগামী জাতীয় নির্বাচনে সংসদের উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু করা; অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) নিশ্চিত করা; ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা। আর এসব দাবি সরকার মেনে নিলে আগামীকালই নির্বাচন হলে জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।
এর আগে শুক্রবার বাদ আসর আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের উত্তর গেটে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, একটি শ্রেণি আওয়ামী লীগ স্টাইলে নির্বাচন করার স্বপ্ন দেখছে। বাংলাদেশের মাটিতে আওয়ামী স্টাইলের কোনো নির্বাচন জনগণ আর হতে দেবে না। জুলাই হত্যাকাণ্ডের দৃশ্যমান বিচার শেষে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দিতে হবে। তিনি বলেন, আমরা যে দাবি বাস্তবায়নে জন্য রাজপথে নেমেছি, এসব দাবি বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকার জনগণকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান ড. ইউনূস জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, ফ্যাসিবাদী ও তাদের দোসরদের দৃশ্যমান বিচার করবে এবং পাচারকৃত টাকা ফেরত আনবে, নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করবে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকার কোনো দলীয় সরকার নয়। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি যে, ড. ইউনূসের আশপাশে অনেকে একটি দলের পকেটে ঢুকে গেছে। সরকারের ভেতরে থেকে অনেকে সরকার ও দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। এটি মেনে নেবে না জনগণ। ফ্যাসিবাদের মতোই জনগণ তাদেরকে প্রতিরোধ করবে। সংস্কারের প্রত্যাশা ছিল তা হয়নি। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করতেই হবে। প্রতিবন্ধকতা তৈরিকারীদের চিহ্নিত করা হবে। নির্বাচনের জন্য এখনও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি। দেশে আইনশৃঙ্খলার উন্নতি হয়নি।
রফিকুল ইসলাম বলেন, অনেকে বলছে আমরা রাজপথে কেন নেমেছি? আমরা বলছি, রাজপথের আন্দোলন ও লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে দেশ থেকে ফ্যাসিবাদকে বিদায় দিয়েছে দেশের জনগণ। কাজেই রাজপথে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জুলাই বিপ্লবের যে আকাঙ্ক্ষা সেটা আমরা বাস্তাবায়ন করব।
পিআর নির্বাচন পদ্ধতির পক্ষে গণভোটের দাবি জানিয়ে মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, আমরা চ্যালেঞ্জ নিচ্ছি, গণভোট দিন। জনগণ পিআর-এর পক্ষে আছে কি বিপক্ষে আছে। জনগণ যদি পিআর মানে অন্তর্বর্তী সরকারকেও মানতে হবে। আর জনগণ যদি বিপক্ষে যায় আমরা তা মেনে নেব। ফ্যাসিবাদের দোসরদের রাজনীতি অকার্যকর করে তাদের কার্যক্রম স্থগিত করতে হবে। মানবতাবিরোধী অপরাধের অপরাধীদের দৃশ্যমান বিচার করতে হবে। সমাবেশে সভাপতির বক্তব্য দেন- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য, চট্টগ্রাম মহানগরীর ভারপ্রাপ্ত আমির ও পরিবেশবিদ মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম এবং সঞ্চালনা করেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য, চট্টগ্রাম মহানগরীর সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিন। সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান।
সমাবেশ ও গণমিছিলে আরও উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারি মোহাম্মদ উল্লাহ ও ফয়সাল মুহাম্মদ ইউনুস এবং সহকারী সেক্রেটারি মোরশেদুল ইসলাম চৌধুরী, নগর সাংগঠনিক সম্পাদক, ও সাবেক কাউন্সিলর অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি এস এম লুৎফর রহমান, কর্মপরিষদ সদস্য হামেদ হাসান ইলাহী, আমির হোসাইন, ফখরে জাহান সিরাজী সবুজ, মাহমুদুল আলম, জামায়াত নেতা ডা. মুহাম্মদ আবু নাছের, জামায়াত নেতা মুহাম্মদ শফিউল আলম প্রমুখ।
ইউটি/টিএ