পাকিস্তানের নিজস্ব তৈরি শাহীন–৩ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পারমাণবিক ও প্রচলিত উভয় ধরনের ওয়ারহেড বহন করতে সক্ষম। সর্বোচ্চ ২,৭৫০ কিলোমিটার পাল্লার এই ক্ষেপণাস্ত্রের আওতায় সরাসরি ইসরায়েলও পড়ে। সাম্প্রতিক সৌদি আরবের সঙ্গে করা প্রতিরক্ষা চুক্তির পর পাকিস্তান প্রথমবার স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছে যে, প্রয়োজনে দেশের পারমাণবিক সক্ষমতা সৌদি আরবের জন্যও ‘সহজলভ্য’ করা হবে।
জিও টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মোহাম্মদ আসিফ বলেন, আমাদের পারমাণবিক সক্ষমতা বহু আগে থেকেই প্রতিষ্ঠিত। যুদ্ধক্ষেত্রের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষিত বাহিনী রয়েছে। আমরা যা কিছু অর্জন করেছি, এই চুক্তির আওতায় তা সৌদি আরবের জন্যও প্রযোজ্য হবে।
পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচি মূলত ভারতের সামরিক চাপে সাড়া হিসেবে গড়ে উঠেছে। দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে একাধিক যুদ্ধ হয়েছে এবং বর্তমানে কাশ্মীরের উত্তেজনার কারণে যুদ্ধের আশঙ্কা রয়েছে। মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বুলেটিন অব অ্যাটমিক সায়েন্টিস্টস অনুযায়ী, বর্তমানে ভারতের হাতে প্রায় ১৭২টি পারমাণবিক ওয়ারহেড, আর পাকিস্তানের রয়েছে প্রায় ১৭০টি।
বিশ্লেষকদের মতে, মুসলিম বিশ্বের একমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর দেশ পাকিস্তানের সঙ্গে সৌদি আরবের নতুন প্রতিরক্ষা চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে। যদিও চুক্তিতে পারমাণবিক প্রযুক্তি বিনিময়ের বিষয় সরাসরি উল্লেখ নেই, প্রতিরক্ষামন্ত্রীর মন্তব্য এ ব্যাপারে স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছে।
বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে, এই বার্তা সরাসরি ইসরায়েলের উদ্দেশেই। মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলই একমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচিত। সম্প্রতি কাতারে হামাস নেতাদের ওপর ইসরায়েলি হামলায় ছয়জন নিহত হওয়ার পর গাজায় উত্তেজনা বেড়েছে এবং উপসাগরীয় দেশগুলোর নিরাপত্তা উদ্বেগও বৃদ্ধি পেয়েছে।
গত বুধবার স্বাক্ষরিত সৌদি–পাকিস্তান প্রতিরক্ষা চুক্তিতে বলা হয়েছে, এক দেশের ওপর হামলা হলে তা অন্য দেশের ওপর হামলা হিসেবে গণ্য হবে। উভয় দেশই আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-এর পর্যবেক্ষণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে।
তবে আইএইএর পক্ষ থেকে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সাম্প্রতিক মন্তব্যে এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। আসিফ তার সাক্ষাৎকারে ইসরায়েলের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আইএইএর কাছে পূর্ণ স্বচ্ছতা না থাকার বিষয়টিও সমালোচনা করেন।
পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিন ইস্যুতে ইসরায়েলের সমালোচনা করে আসছে, যদিও সরাসরি কোনো যুদ্ধে জড়ায়নি। সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র পূর্বে মধ্যস্থতা করলেও, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর থেকে সেই প্রক্রিয়া স্থগিত রয়েছে।
সূত্র: জিও টিভি, সৌদি গেজেট
এমআর/টিকে