মার্কিন এইচ-১বি ভিসা ফি বার্ষিক ১ লাখ ডলার করে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণা এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হওয়ায় ‘উদ্বেগজনক’ বলে অভিহিত করেছে ভারতের আইটি শিল্পের সংগঠন নাসকম। সংগঠনটি বলেছে, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ ভারতের দক্ষ পেশাজীবীদের যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানোর প্রক্রিয়া বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে।
স্থানীয় সময় শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) এইচ-১বি ভিসার ফি বৃদ্ধি সংক্রান্ত একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) নাসকম বলেছে, হঠাৎ করে এই নীতি চালু হওয়ায় ভারতীয় নাগরিকদের ওপর প্রভাব পড়বে এবং দেশটির প্রযুক্তি সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর চলমান অনশোর প্রকল্পগুলো ব্যাহত হবে। সংগঠনটি আরও জানিয়েছে, নীতির এক দিনের সময়সীমা বিশ্বজুড়ে ব্যবসা, পেশাজীবী ও শিক্ষার্থীদের জন্য ‘উল্লেখযোগ্য অনিশ্চয়তা’ তৈরি করেছে।
নাসকমের মতে, এই নীতি যুক্তরাষ্ট্রের বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবনী পরিবেশ ও বৈশ্বিক চাকরির বাজারে ‘রিপল ইফেক্টস’ তথা ‘নেতিবাচক প্রভাব’ তৈরি করবে এবং অতিরিক্ত খরচের ব্যাপারটি সমন্বয় করতে কম্পানিগুলোকে বাধ্য করবে।
স্থানীয় সময় শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) এইচ-১বি ভিসার ফি বৃদ্ধি সংক্রান্ত একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। নতুন আদেশ অনুযায়ী, এইচ-১বি ভিসা প্রোগ্রামে যুক্তরাষ্ট্র যেতে আবেদনকারীদের বার্ষিক ফি ২১৫ ডলার থেকে বেড়ে এখন থেকে এক লাখ ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ কোটি ২১ হাজার টাকার বেশি দিতে হবে।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, মেটা (ফেসবুক, হোয়াট্সঅ্যাপের নিয়ন্ত্রক সংস্থা), অ্যামাজন, মাইক্রোসফ্ট ও জেপি মর্গানের মতো বহুজাতিক সংস্থাগুলো কর্মীদের জরুরি ইমেইল করে যারা যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে রয়েছেন, তাদের আগামী রোববারের (২১ সেপ্টেম্বর) মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরতে বলা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, মাইক্রোসফ্ট কর্মীদের ইমেইল পাঠিয়ে বলেছে, ‘যাদের কাছে এইচ-১বি এবং এইচ-৪ ভিসা রয়েছে, তাদের আমরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরতে বলছি।’ এর জন্য আগামী রোববার পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়অ হয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
সংবাদ সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, জেপি মর্গান এইচ-১বি ভিসা থাকা কর্মীদের যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে বলার পাশাপাশি পরবর্তী নির্দেশ না-দেয়া পর্যন্ত অন্য দেশে যেতে নিষেধ করেছে। তবে কী কারণে এই নির্দেশনা বা পরামর্শ, তা স্পষ্ট নয়। তবে সংস্থাগুলোর এই সিদ্ধান্তের নেপথ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভিসা সংক্রান্ত সাম্প্রতিক ঘোষণা প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
‘এইচ-১বি’ ভিসা একটি অ-অভিবাসী ভিসা। এর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের দক্ষ কর্মীরা যুক্তরাষ্ট্রে থেকে এখানকার সংস্থার হয়ে কাজ করেন। ট্রাম্প সরাসরি এই উপায় বন্ধ করে দিচ্ছেন না। তবে এমন মোটা অঙ্কের ফি তিনি ধার্য করলেন, যাতে এই ধরনের কর্মীদের আর নিয়োগ করতে চাইবে না কোনো সংস্থা।
রয়টার্স জানিয়েছে, ট্রাম্পের এই নির্দেশনার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি খাত বড়সড় ধাক্কা খেতে চলেছে। অধিকাংশ তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাই দক্ষ বিদেশি কর্মীদের ওপর নির্ভর করে থাকে। আর এসব কর্মীর অধিকাংশই ভারত ও চীন থেকে যান।
এইচ-১বি ভিসা নিয়ে সবচেয়ে বেশি কর্মী যে সংস্থায় কাজ করেন, সেটি হলো অ্যামাজন। সংস্থাটির ১০ হাজারেরও বেশি কর্মী এইচ-১বি ভিসা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। এরপরই রয়েছে টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিস (টিসিএস)। এই সংস্থায় সংখ্যাটা ৫ হাজার ৫০৫। তার পর যথাক্রমে রয়েছে মাইক্রোসফ্ট (৫ হাজার ১৮৯), মেটা (৫ হাজার ১২৩), অ্যাপল (৪ হাজার ২০২), গুগল (৪ হাজার ১৮১)।
ট্রাম্পের ভিসা সংক্রান্ত ঘোষণার পর এই সংস্থাগুলোর বক্তব্য জানা যায়নি। তবে মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সব বহুজাতিক সংস্থার সঙ্গে কথা বলেই ভিসা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এমকে/টিকে