রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের বিচারের মুখোমুখি করতে চাপ দিচ্ছেন ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও বিচার বিভাগে হস্তক্ষেপের অভিযোগে সমালোচনার মুখে পড়েছেন। তিনি মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডিকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে কঠোর তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

মূলত রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের বিচারের মুখোমুখি করতে চাপ দিচ্ছেন মার্কিন রিপাবলিকান এই প্রেসিডেন্ট। অন্যদিকে তার এই কর্মকাণ্ডকে “একনায়কতন্ত্রের পথে যাত্রা” হিসেবে আখ্যায়িত করে ক্ষোভ জানিয়েছে ডেমোক্র্যাটরা। 

সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডিকে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে আরও আক্রমণাত্মক তদন্ত চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বন্ডিকে উদ্দেশ করে ট্রাম্প লিখেছেন, “আমরা আর দেরি করতে পারি না। এটা আমাদের সুনাম ও বিশ্বাসযোগ্যতাকে ধ্বংস করছে।”

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কিছুই হচ্ছে না। এরপর তিনি সাবেক এফবিআই প্রধান জেমস কোমি, নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিশিয়া জেমস এবং ডেমোক্র্যাট সিনেটর অ্যাডাম শিফের বিরুদ্ধে তদন্ত করার নির্দেশ দেন। শিফ ছিলেন ট্রাম্পের প্রথম অভিশংসন বিচারের তত্ত্বাবধায়ক।

কিছুক্ষণ পর ট্রাম্প আবারও পোস্ট দিয়ে বন্ডির প্রশংসা করেন এবং বলেন, তিনি “দারুণ কাজ করছেন।”

এর আগে গত শনিবার ট্রাম্প লিখেছিলেন, তিনি ৩০টিরও বেশি বিবৃতি ও পোস্ট পর্যালোচনা করেছেন, যেখানে বলা হচ্ছে—“একই পুরোনো গল্প, শুধু কথা, কোনো কাজ নয়। কোমি, শিফ, লেটিশিয়া— ওরা সবাই বড় অপরাধী, কিন্তু কিছুই হচ্ছে না।”

অবশ্য ট্রাম্পের এই বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন ডেমোক্র্যাট নেতারা। সিনেট সংখ্যালঘু নেতা চাক শুমার সিএনএন-কে বলেন, “এটাই একনায়কতন্ত্রের পথ”।

তিনি বলেন, “বিচার বিভাগ সব সময়ই অত্যন্ত শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ ছিল— ডেমোক্র্যাট বা রিপাবলিকান, যে-ই নেতৃত্বে থাকুক না কেন। তারা সব সময় ভীতিহীনভাবে আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। অথচ প্রেসিডেন্ট এটিকে তার শত্রুদের বিরুদ্ধে অস্ত্রে পরিণত করছেন, তারা দোষী হোক বা না হোক।”

রোববার এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ট্রাম্প বলেন, “তাদের ব্যবস্থা নিতে হবে। দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে”। তিনি আরও দাবি করেন, “পাম বন্ডি ইতিহাসের সেরা অ্যাটর্নি জেনারেলদের একজন হিসেবে পরিচিত হবেন।”

বিবিসি বলছে, ফেডারেল প্রসিকিউটর এরিক সিবার্টের পদত্যাগের একদিন পর ট্রাম্পের পক্ষ থেকে এই মন্তব্য সামনে এলো। তবে ট্রাম্প বলেন, তিনি সিবার্টকে বরখাস্ত করেছেন কারণ তিনি লেটিশিয়া জেমসের বিরুদ্ধে বন্ধক জালিয়াতির অভিযোগে মামলা করেননি।

নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, সিবার্ট বিচার বিভাগীয় শীর্ষ কর্মকর্তাদের বলেছেন, জেমসকে অভিযুক্ত করার মতো যথেষ্ট প্রমাণ তারা পাননি। জেমস অভিযোগগুলোকে “ভিত্তিহীন” এবং “প্রতিশোধপ্রসূত” বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি ২০২৩ সালে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে জালিয়াতির মামলায় জয়ী হয়েছিলেন।

শনিবার ট্রাম্প বলেন, “আমি তাকে বরখাস্ত করেছি। এখানে দারুণ একটি মামলা আছে। বহু আইনজীবী ও বিশ্লেষকও তাই বলছেন”। তিনি বন্ডির প্রশংসা করে জানান, সিবার্টের জায়গায় তিনি নতুন প্রার্থী মনোনীত করেছেন।

ট্রাম্প বলেন, “তিনি (বন্ডি) অত্যন্ত সতর্ক, বুদ্ধিমতী এবং দেশপ্রেমী। তবে ভার্জিনিয়ার ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্টে আমার প্রস্তাবিত কড়া প্রসিকিউটর লিন্ডসে হ্যালিগানকে নিয়োগ দিতে হবে, যাতে কাজ এগিয়ে যায়।”

বিবিসি বলছে, ১৯৭০-এর দশক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ মূলত প্রেসিডেন্টের প্রভাবমুক্ত স্বাধীন অবস্থান ধরে রাখার চেষ্টা করে আসছে। কিন্তু ট্রাম্প বারবার সেই নিয়ম ভেঙেছেন। প্রথম মেয়াদে তিনি অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশনসকে বরখাস্ত করেন। আর ট্রাম্পের ২০২০ সালের নির্বাচনে জালিয়াতির মিথ্যা দাবি মানতে অস্বীকার করায় দ্বিতীয় অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার পদত্যাগ করেন।

এছাড়া নির্বাচনী প্রচারণার সময় রাজনৈতিক শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি ট্রাম্প প্রকাশ্যেই দিয়েছিলেন। যার মধ্যে সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও রয়েছেন।

এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
নোয়াখালী পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি পিন্টু ঢাকায় গ্রেপ্তার Sep 22, 2025
img
লিগের ফিকশ্চারে মোহামেডানের আপত্তি, কমিটি পরিবর্তনের দাবি Sep 22, 2025
img
পাকিস্তানশাসিত কাশ্মির একদিন নিজেই ভারতের অংশ হয়ে যাবে : রাজনাথ সিং Sep 22, 2025
img

ডাকসু নির্বাচন

অনিয়মের ১১ অভিযোগ জানাল ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল Sep 22, 2025
img
শিক্ষক লাঞ্ছিতের ঘটনায় কর্মবিরতি; নেপথ্যে রাকসু বানচালের চেষ্টা Sep 22, 2025
img
শামির জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল 'বিয়ে করা' Sep 22, 2025
img
ট্রাম্পের শুল্কারোপ ও ভিসা ফি বৃদ্ধিতে বেকায়দায় ভারত, বৈঠকে বসছেন রুবিও-জয়শঙ্কর Sep 22, 2025
img
অবেশেষে হাত মেলালেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইলন মাস্ক Sep 22, 2025
img
জাপোরিঝিয়ায় রুশ হামলায় প্রাণ গেল ৩ জনের, আহত আরও ২ Sep 22, 2025
img
ক্যাচের আগে বল মাটি ছুঁয়েছে বলে বিশ্বাস পাকিস্তানের অধিনায়কের Sep 22, 2025
img
দেশে গণতন্ত্র ফেরাতে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছেন তারেক রহমান : মাহবুব Sep 22, 2025
img
ট্রাম্পের শুল্ক চুক্তি বাস্তবায়ন করতে গেলে সংকটে পড়বে অর্থনীতি: লি জে মিয়ং Sep 22, 2025
img
হানিমুনে মালদ্বীপ যাচ্ছেন শবনম ফারিয়া Sep 22, 2025
img
নিজের সব সম্পদ স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে বিলিয়ে দেবেন বিল গেটস Sep 22, 2025
img
দুর্নীতি বিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল ফিলিপিন্স Sep 22, 2025
img
রাকসু নির্বাচন পিছিয়ে দেয়ার আহ্বান ছাত্রদলের Sep 22, 2025
img
নিয়ম ভাঙায় রাশফোর্ডকে শাস্তি দিলেন ফ্লিক Sep 22, 2025
img
উপদেষ্টা টম হোম্যানের ঘুষ গ্রহণের তদন্ত বন্ধ করল ট্রাম্প প্রশাসন Sep 22, 2025
img
শহরে এসেছে নাগিন আজমেরী হক Sep 22, 2025
img
সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে হবে নুরের চিকিৎসা Sep 22, 2025