সাবেক সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক গোলাম মাওলা রনি বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ধরপাকড় বাড়ানোর জন্য সম্প্রতি বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে পুলিশ। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের সদস্য বা আওয়ামী লীগের সক্রিয় নেতাকর্মী ধরিয়ে দিলে পুলিশ পাঁচ হাজার টাকা পুরস্কার দেবে। এই ঘোষণা রাজনৈতিক পরিবেশে বড় ধরনের ঝড় তুলেছে এবং মিছিল-প্রতিবাদের ধারা ও প্রভাবকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। এ নিয়ে চলছে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনা, যা দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) নিজের ইউটিউব চ্যানেলে গোলাম মাওলা রনি এসব কথা বলেন।
গোলাম মাওলা রনি বলেন, ‘পুলিশের এ ঘোষণার পর এখন পর্যন্ত কতজনকে ধরা হয়েছে, সরকারি কোষাগার থেকে কত টাকা বাজেট করা হয়েছে এবং কে তা পেয়েছেন—এগুলো আমার জানা নেই। তবে যা স্পষ্ট তা হলো, আওয়ামী লীগের মিছিল বেড়ে যাচ্ছে এবং ধরপাকড়ের সংখ্যা কমছে, অর্থাৎ পুলিশি অভিযান ততটা কার্যকর হচ্ছে না।’
তিনি বলেন, “বড় বড় পত্রিকায় যখন কোনো নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ নেতার ধরা পড়ার খবর হেডলাইনে চলে আসে, তখন বোঝা যায়—এটি সাংবাদিকতায়, রাজনৈতিক গুরুত্বে এবং অনুসন্ধানমূলক দিক থেকে একটি বড় ইভেন্ট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
একজন ছাত্রলীগ নেতার ধরা পড়া ‘সোনার খনির’ সন্ধানের মতো দেখাচ্ছে। এটা এক ধরনের লাভজনক বিষয়। মানুষের দোলাচলে, পূর্ণিমার চাঁদ দেখতে পাওয়ার আনন্দের মতো, কিছু ক্ষেত্রে রাজনৈতিক মহলে ‘আমরা পেলাম’–এই ধরনের উচ্ছ্বাস দেখা যায়। এই পরিস্থিতি বোঝায় যে আওয়ামী লীগকে ধরার/ধরা পড়ার ঘটনাকে প্রতিপক্ষরা যে রাজনৈতিক গুরুত্ব দিচ্ছে তা বড় এবং প্রতিপক্ষের মধ্যে ভীতিও বেড়েছে এবং একজন ক্ষুদ্র কাউকে ধরে ফেললেই রাজনৈতিকভাবে উৎসবের মতো প্রতিক্রিয়া তৈরি হচ্ছে।
গোলাম মাওলা রনি প্রশ্ন রাখেন—সরকার কি এভাবে চলতে পারবে? এভাবে কি আওয়ামী লীগের বিনাশ ঘটবে? পুরস্কার ঘোষণা করলেই কি সরকার লাভবান হবে? আমার ব্যক্তিগত মতামত, যেকোনো ঘটনাতেই এটি সরকারের পক্ষে ভালো ফল বয়ে আনে না। কারণ বিশ্বে অতীতেও বড় বড় পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল। লাদেনকে হত্যার জন্য বিপুল অর্থের পুরস্কার রাখা হয়েছিল কিন্তু তাতে কোনো মৌলিক পরিবর্তন আসেনি।
তিনি মনে করেন, এই ব্যবস্থাটি একটি ব্যাবসায়িক সুযোগ তৈরি করবে। এটা আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত—সবারই ক্ষতির কারণ হবে এবং সমাজকে অস্থির করে তুলবে।বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগের লোকেরা রাজনৈতিকভাবে ভিন্ন আড়ালে থাকে। কেউ জামায়াতের আশ্রয়ে, কেউ বিএনপির আশ্রয়ে। সুযোগ পেলে পুলিশকে ব্যবহার করে প্রতিপক্ষকে ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হবে।
তিনি বলেন, পুরস্কারভিত্তিক ধরপাকড় নীতির থেকেও বেশি সম্ভবত রাজনৈতিক বিভাজন এবং সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হবে—এমনকি সরকারের স্বার্থেও তা দীর্ঘ মেয়াদে লাভজনক হবে না।
ইউটি/টিএ