গেল সপ্তাহে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের (২১ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর) মধ্যে ৩ দিনই বাজার ঊর্ধ্বমুখী ছিল। তা সত্ত্বেও আলোচিত সপ্তাহে এক্সচেঞ্জটির সবগুলো মূল্যসূচক কমেছে। পাশাপাশি লেনদেনে অংশ নেওয়া অধিকাংশ সিকিউরিটিজের দরপতন হয়েছে। আর এক্সচেঞ্জটির গড় লেনদেন গত সপ্তাহের ধারাবাহিকতায় প্রায় ১৭ শতাংশ কমেছে। ডিএসইর বাজার মূলধনও সপ্তাহের ব্যবধানে সামান্য কমেছে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স গত সপ্তাহে ৩৫ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৪১৫ পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে। আগের সপ্তাহ শেষে সূচকটির অবস্থান ছিল ৫ হাজার ৪৫০ পয়েন্টে। বাছাই করা ৩০ কোম্পানির সূচক ডিএস ৩০ কমেছে ৪ পয়েন্ট, সূচকটির বর্তমান অবস্থান ২ হাজার ১০৩ পয়েন্টে। আগের সপ্তাহে যা ২ হাজার ১১১ পয়েন্ট ছিল। আর শরীয়াহ কোম্পানিগুলোর সূচক ডিএসইএস ৭ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৭১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ১ হাজার ১৭৮ পয়েন্টে।
গত সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৯৫টি শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। তালিকাভুক্ত আরও ১৮টি শেয়ার ও ইউনিটের সপ্তাহজুড়ে কোনো লেনদেন হয়নি। লেনদেন হওয়া সিকিউরিটিজগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ১৩৯টির। কমেছে ২১৯টির। আর অপরিবর্তিত ছিল ৩৭টির।
গেল সপ্তাহে সূচক ও অধিকাংশ সিকিউরিটিজের দরপতনের পাশাপাশি স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেন বড় পরিমাণে কমেছে। আলোচিত সপ্তাহে দৈনিক গড় লেনদেন হয়েছে ৫৮৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে যা হয়েছিল ৭০১ কোটি ৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ সর্বশেষ সপ্তাহে ডিএসইর দৈনিক গড় লেনদেন কমেছে ১১৭ কোটি ৩ লাখ টাকা বা ১৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ। আগের সপ্তাহে দৈনিক গড় লেনদেন কমেছে ৪৪৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বা ৩৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ।
ডিএসইতে সার্বিকভাবে গত সপ্তাহে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৯১৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে এ লেনদেন হয়েছিল ৩ হাজার ৫০৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে এক্সচেঞ্জটির সার্বিক লেনদেন কমেছে ৫৮৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
গত সপ্তাহে ডিএসইর লেনদেনে সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল বস্ত্র খাতের। প্রতিদিন গড়ে এই খাত থেকে ৯০ কোটি ২৪ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন এসেছে ওষুধ ও রসায়ন খাতে, প্রতিদিন গড়ে যা ছিল ৮৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। তৃতীয় সর্বোচ্চ অবদান ছিল ব্যাংক খাতে, প্রতিদিন গড়ে যার পরিমাণ ছিল ৬২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এছাড়া প্রকৌশল খাত এবং বিবিধ খাতে যথাক্রমে প্রতিদিন গড়ে ৪৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকা এবং ৪১ কোটি ২০ লাখ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে ডিএসইতে অবদান রেখেছে।
সূচক ও লেনদেনে মন্দাভাবের পাশাপাশি গেলে গত সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধনও সামান্য কমেছে। সপ্তাহ শেষে সবগুলো সিকিউরিটিজের বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ২৩ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকায়। আগের সপ্তাহ শেষে যা ছির ৭ লাখ ২৪ হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ১ হাজার ১৮ কোটি টাকা।
এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে দেশের অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সবগুলো মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি লেনদেনে অংশ নেওয়া অধিকাংশ সিকিউরিটিজের দর কমেছে। তবে এক্সচেঞ্জটির লেনদেনের পরিমাণও কিছুটা বেড়েছে।
সিএসইর প্রধান সূচক সিএএসপিআই ও সিএসসিএক্স যথাক্রমে ১ দশমিক ৬২ শতাংশ এবং ১ দশমিক ৫০ শতাংশ কমেছে। বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সূচক দুটির অবস্থান দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১৫ হাজার ৮৯ পয়েন্টে এবং ৯ হাজার ২৭৮ পয়েন্টে।
এ ছাড়া সিএসআই সূচক ১ দশমিক ২৬ শতাংশ এবং সিএসই-৩০ সূচক ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৯৫৯ পয়েন্টে এবং ১৩ হাজার ২১৭ পয়েন্টে। আর সিএসই-৫০ সূচকটি ১ দশমিক ৪৭ শতাংশ কমে ১ হাজার ১৪৫ পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে।
গত সপ্তাহে সিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৮০ কোটি ৩ লাখ টাকা, যা এর আগের সপ্তাহে ছিল ৬৭ কোটি ৬ লাখ টাকা। সপ্তাহ ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ১২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। সপ্তাহজুড়ে এক্সচেঞ্জটিতে ৩১৫টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ৭৬টির, কমেছে ২১৫টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৪টির।
এসএস/টিএ