দশকের পর দশক ধরে যার অভিনয়শৈলী দর্শকদের হৃদয় জয় করে চলেছে তিনি বলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা অনুপম খের। পর্দায় তিনি যেমন অসংখ্য চরিত্রে প্রাণ দিয়েছেন, তেমনই বাস্তব জীবনেও তিনি অনন্য উজ্জ্বল একজন স্বামী হিসেবে। অভিনেত্রী থেকে রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠা কিরণ খেরকে বিয়ে করেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রে যখন অভিনেতা তার সফল শো করছিলেন তখনই তিনি জানতে পারেন তার স্ত্রীর ক্যান্সার হয়েছে। এরপর তিনি সব ছেড়ে স্ত্রীর কাছে চলে আসেন।
জুম-এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় অনুপম খের তার জীবনের কিছু কঠিন সময় নিয়ে কথা বলেন। তরুণ প্রজন্মের জন্য সফল সম্পর্কের কিছু মূল্যবান পরামর্শও দিয়েছেন এই বর্ষীয়ান অভিনেতা। যখন তার স্ত্রী কিরণ খের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন।
অভিনেতা বলেন, ‘মানুষকে চেনা যায় তার কঠিন সময়ে নেওয়া সিদ্ধান্ত দিয়ে, ভালো সময়ে নয়। তখনই চরিত্রের আসল রূপ প্রকাশ পায়, তখনই বোঝা যায় আপনি কতটা দৃঢ়। কেউ জানে না, আমি এই পরিস্থিতিতে কীভাবে আচরণ করব, কারণ আপনি জানেন না, জীবনের বা সম্পর্কের কোন মোড়ে কী অপেক্ষা করছে। আপনি পরের মুহূর্ত জানেন না।
কিন্তু আমি সব সময়ে বলি, কঠিন সময়ে আপনি কীভাবে আচরণ করেন, কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেন— সেটাই ঠিক করে আপনি কেমন মানুষ।’
তিনি আরো বলেন, ‘কিরণ আর আমি আমাদের বিবাহিত জীবনের ৪০ বছর পূর্ণ করেছি। আমরা সব সময়ে একসঙ্গে ছিলাম না, কিরণ ১০ বছর এমপি ছিল, তাই ও যেত-আসত। আমি তখন আমেরিকায় নিউ অ্যামস্টারডম নামে একটি সফল শো করছিলাম, যার তিনটি সিজনের এক্সটেনশনও পেয়েছিলাম। তৃতীয় সিজন শুরু করার সময় জানতে পারি, কিরণ মাল্টিপল মায়েলোমায় আক্রান্ত।
তখনই আমার প্রথম প্রতিক্রিয়া ছিল আমার ওর পাশে থাকা উচিত। আমি ডাক্তার নই, কিন্তু আমি বলেছিলাম, তবুও আমি আসব। ও বলেছিল, এসো। স্বাভাবিকভাবেই ও বিধ্বস্ত ছিল, কারণ এই শব্দটাই ভয়ঙ্কর। আমি বলেছিলাম, না, আমি এই শো ছেড়ে দেব।’
সুখী ও সফল সম্পর্কের জন্য অনুপম খেরের মন্ত্র, ‘সম্পর্কে সাহস খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সাহসই ঠিক করে আপনি কী সিদ্ধান্ত নেবেন। পেশাগতভাবে, ওই শো-তে থাকা আমার জন্য বিশাল ব্যাপার ছিল। আর্থিকভাবে, সেটাও বড় সিদ্ধান্ত ছিল। আমার স্বপ্ন ছিল আন্তর্জাতিক অভিনেতা হওয়া এবং ওই শো তা পূরণ করতে পারত। কিন্তু আমার কাছে ফিরে আসা ছিল আরও গুরুত্বপূর্ণ। আমি ফিরে এসে শুধু ওর পাশে বসে থাকিনি, কিন্তু এটা এমন কিছু যা একজন স্বামী হিসেবে করা উচিত।’
এরপর তিনি আরো যোগ করেন, ‘আমার আর কিরণের সম্পর্ক গভীর শ্রদ্ধার। ভালোবাসা তো আছেই, কিন্তু যখন আপনি ৪০ বছর ধরে কারও সঙ্গে বিবাহিত, সেটা এক অসাধারণ অনুভূতি। সেটা এক শক্তির অনুভব। কখনো কখনো ওকে শক্তি দিতে হয়, আবার ও বহু বার আমাকে শক্তি দিয়েছে আমার খারাপ সময়গুলোতে। এটা খুব স্বাভাবিক একটা বিষয়।’
প্রসঙ্গত, অনুপম খের ও কিরণ খের ১৯৮৫ সালে ২৬ অগস্ট বিয়ে করেন। এর আগে অভিনেত্রী মধুমতী কাপুরকে বিয়ে করেছিলেন অনুপম খের। আর কিরণ খেরের প্রথম স্বামী ছিলেন গৌতম বেরি।
এবি/টিএ