আসন্ন নির্বাচনে পলাতক ফ্যাসিস্ট শক্তি মোকাবিলাই বড় চ্যালেঞ্জ : আইজিপি

বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেছেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পরাজিত, পলাতক ও পতিত ফ্যাসিস্ট শক্তি মোকাবিলাই আমাদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ। তাদের নেতাকর্মী ও সাপোর্টাররাও আমাদের জন্য বড় একটা চ্যালেঞ্জ।

মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বেলা সোয়া ১১টায় পুলিশ সদরদপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

নির্বাচনে সামনে রেখে চ্যালেঞ্জের কথা বলছেন। আসলে নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোন পক্ষকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে? জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পুলিশ থানা ছেড়ে চলে গিয়েছিল। সেখান থেকে এক বছরে বর্তমান অবস্থায় নিয়ে আসা একটা চ্যালেঞ্জ। কিন্তু আমরা চাচ্ছি নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের সক্ষমতা অর্জন করতে। আমাদের বিশ্বাস পারবো।

তিনি বলেন, আমি তো কোনো শক্তির কথা নির্দিষ্ট করে বলতে পারবো না। যারা পরাজিত, ফ্যাসিস্ট তারাই আমাদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ। তাদের নেতাকর্মী ও সাপোর্টাররাও আমাদের জন্য বড় একটা চ্যালেঞ্জ।

নির্বাচনে পুলিশের সক্ষমতার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু শুধুমাত্র মোহাম্মদপুরেই যে পরিমাণ শীর্ষ সন্ত্রাসী, কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এই একটা এলাকায় পুলিশ আইনশৃঙ্খলা উন্নতি করতে পারেনি। সেখানে এতো বড় নির্বাচন আয়োজনের সক্ষমতা আছে কি না?— এমন প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, সক্ষমতা অবশ্যই আছে। এটা নিয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই, আপনাদের থাকা উচিৎ না। এখানে আমাদের বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। এখানে বেসামরিক প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে সেনাবাহিনী আছে। আমরা তাদের সহযোগিতা নিয়ে মোহাম্মদপুর আদাবর আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি। এরা কীভাবে যেন গ্রেপ্তারের পর জামিন হয়ে যায়। জামিনে বেরিয়ে এসে বিপুল উৎসাহে আবারও অপরাধ করছে। অল্প বয়সী অপরাধীদের বিপুলসংখ্যক গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা তাদের আটকাতে নানাভাবে চেষ্টা করছি। আমরা কিছুকিছু ক্ষেত্রে চিন্তা করছি নিবর্তনমূলক আটক আদেশ দিতে হতে পারে।

পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্রগুলো কার হাতে আছে এবং অস্ত্রগুলো উদ্ধার না হলে ঝুঁকি আছে কি না? জানতে চাইলে পুলিশ প্রধান বলেন, এখন পর্যন্ত অস্ত্র উদ্ধার হয়নি ১৩৫০টি। আমরা নিয়মিত অস্ত্র উদ্ধার করছি। যদি জানতাম অস্ত্র কার হাতে তাহলে কথাই ছিল না। কিন্তু সবাইকে সন্দেহের তালিকায় রাখছি। আমরা ধারণা করছি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাতে যেতে পারে, কিছু পাহাড়ি কিংবা আরসার হাতে যেতে পারে। এগুলো সবই আমাদের সন্দেহ। সব কিছু মাথায় রেখে আমরা কাজ করছি।

পুলিশের সাবেক কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে যারা আছেন তাদের দিয়ে নির্বাচনকালীন সহিংসতা প্রতিরোধ সম্ভব না। পুলিশ সদস্যরা নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কতোটা সক্ষম? এমন প্রশ্নে আইজিপি বলেন, আমরা সক্ষম, আপনারা যত যা-ই বলেন। আমরা ১ লাখ ৫০ হাজার পুলিশ সদস্যকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। আগে কখনো একই সঙ্গে এতো পরিমাণ পুলিশ সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। তাদের নির্বাচনে চ্যালেঞ্জ, ভোটিং, নির্বাচন কেন্দ্রের বিধিবিধান শেখানো হবে। হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। নির্বাচনী দায়িত্ব দেওয়ার আগে প্রত্যেকের বিষয় খোঁজ নেওয়া হবে। যদি কাউকে মনে হয় তাকে দায়িত্ব দেওয়া ঠিক হবে না। আগামী নির্বাচনে ১ লাখ ৫০ হাজার পুলিশ মোতায়েন হবে। গত নির্বাচনে ছিল ১ লাখ ৪৩ হাজার। নির্বাচনের ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৩/৪শ বেড়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা গত জুন মাস থেকে পেশাদারিত্ব, নিরপেক্ষতা ও দক্ষতা এই তিনটি বিষয় সামনে রেখে অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ব্যবস্থায় একটি মডিউল তৈরি করে প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছি। ইতোমধ্যে এই মাসের ৭ তারিখ থেকে প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তিন ধাপে ২২০০ পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রস্তুত করা হয়েছে। তারা সারাদেশে আগামী ৫ অক্টোবর থেকে দেশের ১৩০টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে একযোগে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করবেন। আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে আশা করি আমরা দেড় লাখ পুলিশকে প্রশিক্ষণ দিতে সক্ষম হবো। এই প্রশিক্ষণে অডিও, ভিডিওসহ অত্যাধুনিকভাবে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। অস্ত্রের নীতিমালা মেনে অস্ত্র ব্যবহার হবে।

থানা থেকে ব্যক্তিগত অস্ত্র লুটের সংখ্যার বিষয়ে আইজিপি বলেন, অল্প কিছু অস্ত্র থানা থেকে লুট হয়েছে। পুলিশের অস্ত্রের সংখ্যা বেশি। বৈধ অস্ত্র সরকার জমা নিয়েছে। ২০০৯ সাল ২০২৪ সাল পর্যন্ত সব অস্ত্র আমরা জমা নিয়েছি। কিন্তু যারা জমা দেননি আমরা তাদের বিরুদ্ধেও মামলা নিয়েছি। আমরা চেষ্টা করেছি অস্ত্রগুলো উদ্ধার করতে।

নির্বাচনে পুলিশের প্রশিক্ষণের বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সমন্বয় করা হচ্ছে কি না? জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, গত নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ প্রশাসনের ১৬ লাখ জনবল নিয়োগ করা হয়েছে। যেখানে পুলিশের পরিমাণ ৯ শতাংশ। এবারও কাছাকাছি সংখ্যক কর্মকর্তা কাজ করছি। আমরা যে নির্বাচনে প্রশিক্ষণের মডিউল তৈরি করেছি সেটা নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের নিয়েই করেছি। সব বিধিমালা নিয়ে তাদের সহযোগিতায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন ও পুলিশের নিজস্ব বিধিমালা নিয়েই প্রস্তুতি করা হচ্ছে।

ইএ/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img

সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা

এমন মানুষও আছেন যারা বলছেন ৫ বছর থাকুন, ১০ বছর থাকুন ৫০ বছর থাকুন Sep 30, 2025
img
দেশ-বিদেশি ষড়যন্ত্র তীব্রভাবে ক্রিয়াশীল হচ্ছে : রিজভী Sep 30, 2025
img
শাকিব-হানিয়া প্রসঙ্গে শিল্পীদের মূল্যায়ন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন সেমন্তী Sep 30, 2025
img
যীশুকে অভিনয় ছেড়ে দিতে বারণ করেছিলেন অমিতাভ Sep 30, 2025
img
বর্তমানে খাগড়াছড়ির পরিস্থিতি শান্ত : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Sep 30, 2025
img
১৭ দিন ধরে নিখোঁজ ১৮ জেলে Sep 30, 2025
img
দেশে চাঁদাবাজি বেড়ে গেছে, রেটও বেড়েছে : মোস্তফা ফিরোজ Sep 30, 2025
img
এনসিএল টি-টোয়েন্টিতে আর খেলা হচ্ছে না মাহমুদউল্লাহ’র Sep 30, 2025
img
শিক্ষকরা অনৈতিক কাজ করতে বাধ্য হয়েছেন : এ্যানি Sep 30, 2025
img
কানাডা থেকে সুখবর পেলেন সাকিব Sep 30, 2025
img
সীমান্তে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ঠেকাতে সর্বোচ্চ সতর্ক বিজিবি: মহাপরিচালক Sep 30, 2025
img
ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ, জেরা আগামী ৬ অক্টোবর Sep 30, 2025
img
মন্দির থেকে পুলিশের ব্যাগ চুরি, ওসি প্রত্যাহার ও ৭ পুলিশ বরখাস্ত Sep 30, 2025
img
নূরুল মজিদের হাতকড়া পরানো অবস্থায় মৃত্যু, এ কেমন অমানবিকতা : মান্না Sep 30, 2025
img
এনটিআরসিএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে এমসিকিউতে ৮০ নম্বর বাধ্যতামূলক Sep 30, 2025
img
আপনারা হয়তো আমার ফ্যামিলি সম্পর্কে জানেন না: সাদিয়া জাহান প্রভা Sep 30, 2025
img
গাজায় যুদ্ধবিরতি ও অন্তর্বর্তী সরকার প্রস্তাব: ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে ঘিরে প্রশ্ন Sep 30, 2025
img
ডেঙ্গুতে একদিনে প্রাণ গেল ৩ জনের, হাসপাতালে ভর্তি ৫৫৬ Sep 30, 2025
img
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে : রিজভী Sep 30, 2025
img
ড. ইউনূস চাইলে আ. লীগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিতে পারেন : রাশেদ খান Sep 30, 2025