ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সামরিক হামলা চালালে তিনি দেশে জরুরি অবস্থা জারি করতে প্রস্তুত। সন্দেহভাজন মাদকবাহী নৌকায় যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক প্রাণঘাতী হামলার পর সৃষ্ট তীব্র উত্তেজনার মধ্যে তিনি এই ঘোষণা দিলেন।
সোমবার (২৯শে সেপ্টেম্বর) এক টেলিভিশন ভাষণে মাদুরো বলেন, 'মার্কিন সাম্রাজ্য যদি আমাদের মাতৃভূমিকে আক্রমণ করার দুঃসাহস দেখায়, তবে আমাদের জনগণ, শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য সংবিধান অনুসারে জরুরি অবস্থা ঘোষণার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।'
এর আগেই ভাইস প্রেসিডেন্ট ডেলসি রদ্রিগেজ বিদেশি কূটনীতিকদের জানান, মাদুরো একটি ডিক্রিতে স্বাক্ষর করেছেন, যা তাকে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার বিষয়ে 'বিশেষ ক্ষমতা' প্রদান করেছে। এই ক্ষমতার অধীনে তিনি সারাদেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন এবং সরকারি পরিষেবা ও তেল শিল্পের ওপর সামরিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন। এই ডিক্রি ৯০ দিনের জন্য কার্যকর থাকবে এবং এটি আরও ৯০ দিনের জন্য নবায়নযোগ্য।
এই পদক্ষেপ এমন এক সময়ে নেওয়া হলো যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছে ক্যারিবীয় অঞ্চলে আটটি যুদ্ধজাহাজ, একটি পারমাণবিক সাবমেরিন এবং এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানসহ বিশাল নৌবহর মোতায়েন করেছে। যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছে, এটি মাদক চোরাচালান বিরোধী অভিযান। এই অভিযানের অংশ হিসেবে মার্কিন সামরিক বাহিনী আন্তর্জাতিক জলসীমায় অন্তত তিনটি ভেনেজুয়েলীয় নৌকায় বোমা হামলা চালিয়েছে, যাতে অন্তত ১৭ জন নাগরিক নিহত হয়েছেন।
ভেনেজুয়েলা এই হামলাকে 'অঘোষিত যুদ্ধ' এবং মার্কিন 'সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন' বলে আখ্যা দিয়েছে। মাদুরো যুক্তরাষ্ট্রে মাদক পাচারে তার দেশের জড়িত থাকার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ সমালোচিত হচ্ছে। জাতিসংঘ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব তথ্যমতেই, ভেনেজুয়েলা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে মাদক প্রবেশের হার উল্লেখযোগ্য নয়। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ এবং আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মার্কিন এই হামলাকে 'বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড' হিসেবে অভিহিত করেছেন।
এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যেও প্রেসিডেন্ট মাদুরো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি "ঐতিহাসিক ও শান্তিপূর্ণ" সম্পর্ক স্থাপনের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, যা চলমান সংকটকে আরও জটিল করে তুলেছে।
এসএন