বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক আরও গভীর করতে যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য দূত ব্যারোনেস রোজি উইন্টারটন (ডনকাস্টার) পাঁচ দিনের সরকারি সফরে ঢাকায় পৌঁছেছেন। রোববার (৫ অক্টোবর) তিনি ঢাকায় পৌঁছান বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ হাইকমিশন।
বাংলাদেশ যখন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং একই বছরের নভেম্বর মাসে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের পথে, তখন এই সফরটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছে ব্রিটিশ হাইকমিশন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাণিজ্য দূতের এই সফরের লক্ষ্য বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচিকে সহায়তা করা এবং পারস্পরিক সমৃদ্ধির জন্য দুই দেশের মধ্যে দ্বিমুখী বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক জোরদার করা।
সফরকালে ব্যারোনেস উইন্টারটনের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার এবং আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকীর সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। যুক্তরাজ্য-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সংস্কার, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অংশীদারত্বের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হবে।
এছাড়া তিনি বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন, যাদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টির প্রতিনিধিরা। এসব বৈঠকে যুক্তরাজ্যের দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধির অংশীদার হিসেবে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা হবে।
ঢাকা ও চট্টগ্রামে অবস্থানকালে বাণিজ্য দূত বিমান চলাচল, উচ্চশিক্ষা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও প্রতিরক্ষা খাতের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। চট্টগ্রামে তিনি যুক্তরাজ্য সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগ প্রকল্পগুলো সরেজমিনে পরিদর্শন করবেন, যেখানে এসব বিনিয়োগ কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সরবরাহ শৃঙ্খল শক্তিশালীকরণ এবং উভয় দেশের অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি আনছে।
ব্রিটিশ হাইকমিশন জানায়, এই সফরে যুক্তরাজ্যের ডেভেলপিং কান্ট্রিজ ট্রেডিং স্কিমের গুরুত্বও তুলে ধরা হবে। এই বাণিজ্য সুবিধা কর্মসূচির আওতায় ২০২৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের পণ্য যুক্তরাজ্যের বাজারে সম্পূর্ণ শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাবে, যা এলডিসি থেকে উত্তরণের সময় দেশের রপ্তানি প্রতিযোগিতা ধরে রাখতে সহায়তা করবে।
এছাড়াও, তিনি ব্রিটিশ ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট, যুক্তরাজ্যের উন্নয়ন অর্থায়ন সংস্থা ও তাদের স্থানীয় অংশীদারদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এসব বৈঠকে সবুজ অর্থায়ন ও টেকসই অবকাঠামো উন্নয়নে যুক্তরাজ্যের ভূমিকা গুরুত্ব পাবে।
তার এ সফরের বিষয়ে ব্যারোনেস উইন্টারটন বলেন, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি গতিশীল ও ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব বিদ্যমান। বাংলাদেশের অসাধারণ উন্নয়ন যাত্রাকে সহায়তা করার এবং দুই দেশের জন্য উপকারি নতুন বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সুযোগ অন্বেষণের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করতেই আমি এখানে এসেছি। আমি যুক্তরাজ্য-সমর্থিত বিনিয়োগগুলো সরাসরি দেখতে উদগ্রীব, যেগুলো কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে, সরবরাহ শৃঙ্খলকে মজবুত করছে এবং উভয় দেশের অর্থনীতিতে বাস্তব মূল্য যোগ করছে, যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশে ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক বলেন, বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য দূতের ছয় মাসের মধ্যে দ্বিতীয় সফরটি যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংস্কার ও দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধির প্রতি দৃঢ় অঙ্গীকারের প্রতিফলন। যুক্তরাজ্য-বাংলাদেশ বাণিজ্য অংশীদারত্ব দিন দিন আরও শক্তিশালী হচ্ছে এবং আমরা পারস্পরিক সমৃদ্ধির জন্য এই সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করতে আগ্রহী।
ব্যারোনেস উইন্টারটন ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য দূত হিসেবে নিযুক্ত হন। তিনি যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক জোরদারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। ঢাকায় এটি তার দ্বিতীয় সফর।
এসএস/টিকে