জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, আওয়ামী লীগের যেকোনো ভার্সন বাংলাদেশে গঠনের অপচেষ্টা মেনে নেওয়া হবে না। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ভার্সন কাদের নিয়ে তৈরি করবেন? মন্ত্রী, এমপি, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সাবেক সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক কিংবা বড় বড় চেয়ারম্যানদের নিয়ে? আপনি তো ইউনিয়ন পরিষদের কোনো সদস্যকে আওয়ামী লীগের সভাপতি বানাবেন না।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে নওগাঁ সদর উপজেলা পরিষদ হলরুমে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এনসিপির সমন্বয় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। সারজিস আলম বলেন, এরা প্রত্যেকেই আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী, ফ্যাসিস্ট কাঠামোর সঙ্গে যুক্ত। আপনারা জানেন, তারা কী করেছেন। তাই এদের মধ্যে মন্দের ভালো খোঁজার সুযোগ দেওয়া যাবে না। এরা একেকজন শেখ হাসিনাকে ফ্যাসিস্ট হাসিনাতে পরিণত করেছে। সুতরাং, তাদের আর কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না।
তিনি আরও বলেন, প্রতীক ব্যবহারে কোনো আইনগত বাধা না থাকায় এনসিপি আগামী নির্বাচনে শাপলা প্রতীক নিয়ে অংশ নেবে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আমরা প্রতীকের বিষয়ে ইতিবাচক বার্তা পেয়েছি। আশা করি, কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আস্থা ধরে রাখবে।
তিনি আরও বলেন, এনসিপি এককভাবে নির্বাচনে যাবে নাকি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হবে, সে বিষয়ে আলোচনা চলছে। যখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এক পথে হাঁটে, তখন তাদের দাবি ও চিন্তা দেশের স্বার্থে এক হয়ে যেতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে জনগণের স্বার্থে একসঙ্গে নির্বাচনে যাওয়াও সম্ভব। এনসিপি এই বিষয়গুলোকে ইতিবাচকভাবেই দেখছে। তবে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
উপদেষ্টাদের বিষয়ে সারজিস আলম বলেন, কিছু উপদেষ্টার আচরণ দেখে মনে হচ্ছে, তারা কেবল দায়সারা দায়িত্ব পালন করে নির্বাচন শেষ করেই সরে যেতে চান, দেশে থাকুন বা দেশের বাইরে। কিন্তু এভাবে একটি অভ্যুত্থান-পরবর্তী সরকার কাজ করতে পারে না।
তিনি বলেন, তারা তো শহীদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। এখন যদি জীবনের সামান্য হুমকিতে ভয় পায়, তবে এ দায়িত্ব নেওয়ারই কথা ছিল না। এদের কারও জন্য কোনো ছাড় থাকবে না। কোথায় সেফ এক্সিট? মানুষের একমাত্র সেফ এক্সিট হচ্ছে মৃত্যু। দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেও মানুষ তাদের ছাড় দেবে না।
সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গে সারজিস আলম বলেন, সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, তিনি দেশে রেখে যাওয়া ভাইকে আর দেখতে পারবেন না। জীবনের স্মৃতিতে ভরা ঘর মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। সুস্থ মাকে অসুস্থ করে তোলা হয়েছে, নির্যাতন করা হয়েছে। এসব বিষয়ে আমাদের পূর্ণ সহমর্মিতা আছে। তিনি বলেন, এই ব্যথা শুধু তার একার নয়। এমন ঘটনা হাজারো বিএনপি নেতাকর্মীর সঙ্গেও ঘটেছে। এসব ব্যথা যেন স্থানীয় পর্যায়ে প্রকাশ পায় এবং যারা এসব করেছে তাদের বিচার হয়। কে করেছে এসব? আওয়ামী লীগ করেছে। সুতরাং আওয়ামী লীগের দোসররা যেন আর কোনো সুবিধা না পায়।
তিনি বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, সেন্ট্রাল কমান্ড থেকে স্থানীয় পর্যায় পর্যন্ত সবাইকে এ বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। আবার যদি আওয়ামী লীগ কখনো ক্ষমতায় ফিরে আসে, কেউ যেন ছাড় না পায়। সভায় জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন, রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান ইমনসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের এনসিপি নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এসএস/টিকে