কলকাতার বাংলা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে সাড়ে তিন দশক ধরে নিজের জনপ্রিয়তাকে ‘ধরে রাখা’ এক অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। ক্যারিয়ারের শুরুতেই বলিউডে সুযোগ পেলেও তা কাজে লাগাতে চাননি তিনি, যা নিয়ে আফসোস রয়েছে তার বাবা, বর্ষীয়ান অভিনেতা বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের।
কলকাতার বাংলা দৈনিক আনন্দবাজারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিশ্বজিৎ আক্ষেপ করে বলেছেন, “আমার ছেলে কিছুতেই আমার মত বলিউডে এল না। ওকে বলেছিলাম, হিন্দি সিনোমার হিরো হওয়ার সব গুণ তোমার মধ্যে। তুমি চলে এসো।
“ও পাল্টা বলল, ‘কলকাতায় আমার জায়গা তৈরি করেছি। ওরা আমায় খুব ভালবাসে। ওই জায়গা ছেড়ে বলিউডে আসতে রাজি নই।‘ কত ডাক ফিরিয়ে দিয়েছে! সেই সময় বুম্বা (প্রসেনজিৎ) কথা শুনলে আজ বলিউডের প্রথম সারির নায়ক হত।”
হিন্দি চলচ্চিত্রের বিস্তৃত পরিসর ফেলে বাংলা সিনেমাতেই কেন প্রসেনজিৎ ক্যারিয়ার গড়লেন, সে প্রশ্নের উত্তরে তিনি বরাবর বলেছেন, তিনি বাংলা সিনেমায় কেবল অভিনেতা হয়ে নয়, ‘নায়ক’ হিসেবে রাজত্ব করতে চান।
প্রসেনজিতের মধ্যে মহানায়ক উত্তমকুমারের ‘ছায়া’ দেখতে পান বিশ্বজিৎ। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “দাদার (উত্তম কুমার) মতই ইন্ডাস্ট্রির প্রতি দায়িত্ববোধ। সবাইকে আগলে নিয়ে একসঙ্গে চলার চেষ্টা করে। একটা সময় তো একা ঘাড়ে করে ইন্ডাস্ট্রিকে বয়েছে। সুখে-দুঃখে সবার পাশে থাকতে চায়।”
কয়েক প্রজন্মের দর্শক প্রসেনজিতের সিনেমা দেখছে। ১৯৬৮ সালে শিশুশিল্পী হিসেবে হৃষিকেশ মুখার্জির ‘ছোট্ট জিজ্ঞাসা’ সিনেমায় প্রথম পর্দায় আসেন প্রসেনজিৎ। আর ১৯৮৭ সালে সুজিত গুহের ‘অমর সঙ্গী’তে অভিনয় করে ব্যাপক পরিচিতি পান। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি এই নায়ককে, একের পর এক হিট সিনেমা উপহার দিয়েছেন ভক্তদের।
নব্বই দশকের শুরুতে ডেভিড ধাওয়ানের 'আঁধিয়ান' দিয়ে বলিউডে অভিষেক হয়েছিল প্রসেনজিতের। এর আগে সালমান খান অভিনীত ‘ম্যায়নে পেয়ার কিয়া’ করারও প্রস্তাব এসেছিল অভিনেতার কাছে। এছাড়া তিনি কাজ করেছেন ‘সাংঘাই’ নামের একটি সিনেমাতে।
তবে প্রসেনজিৎকে 'অভিনেতা' হিসেবে তুলে ধরেন প্রয়াত নির্মাতা ঋতুপর্ণ ঘোষ, ২০০৩ সালে তার 'চোখের বালি' সিনেমায়। এর পর থেকে ধীরে ধীরে বাণিজ্যিক সিনেমা থেকে দূরে সরে যান অভিনেতা। ২০১০ সালে নির্মাতা সৃজিত মুখার্জির হাত ধরে 'অটোগ্রাফ' সিনেমা এবং পরে একের পর এক গল্প ও চরিত্রনির্ভর সিনেমা করে নিজেকে 'অন্য মাত্রায়' তুলে ধরেন প্রসেনজিৎ। তবে ওটিটিতে তার হাতেখড়ি হয়েছে হিন্দি সিরিজ দিয়ে। ২০২২ সালে ওয়েব সিরিজ 'স্কুপ' ও ‘জুবলি’ দিয়ে আলোচনায় আসেন তিনি। এবারের দুর্গোৎসবের সময়ে মুক্তি পেয়েছে ‘দেবী চৌধুরাণী’। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কালজয়ী উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত এই সিনেমায় ‘ভবানী পাঠক’ চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্রসেনজিৎ।
এসএস/এসএন