বিশ্বে হালাল পণ্যের বাজার প্রায় ৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার হলেও বাংলাদেশ রপ্তানি করছে ১ বিলিয়ন ডলারেরও কম, কার্যকর হালাল ইকোসিস্টেম না থাকা ও স্বতন্ত্র কর্তৃপক্ষের অভাবে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে বলে মনে করে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)।
শনিবার (১১ অক্টোবর) রাজধানীর মতিঝিলে ডিসিসিআই মিলনায়তনে আয়োজিত ‘বাংলাদেশের হালাল শিল্পখাতের উন্নয়ন : সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক ফোকাস গ্রুপ আলোচনায় ডিসিসিআইর ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী এমন মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশের হালাল পণ্যের রপ্তানি প্রায় ৮৫০ মিলিয়ন ডলার, যার অধিকাংশই কৃষিভিত্তিক। অথচ বৈশ্বিক বাজার দ্রুত বাড়ছে এবং ২০৩৪ সালের মধ্যে এটি ৯.৪৫ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে। হালাল শিল্পের বিশাল সম্ভাবনা থাকলেও কাঠামোগত ও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার কারণে এ খাত কাঙ্ক্ষিতভাবে বিকশিত হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক মান বজায় না রাখা, পরীক্ষাগার স্বল্পতা, সার্টিফিকেট প্রদানের জটিলতা এবং দক্ষ জনবলের অভাব বড় বাধা হিসেবে কাজ করছে।’
আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইইউবিএটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. মমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও বিএসটিআই উভয় প্রতিষ্ঠান হালাল সনদ প্রদান করে, যা অনেক ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি ও জটিলতা তৈরি করছে।
ড. মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব, ব্র্যান্ডিং সংকট, এসএমই খাতে অনুপস্থিতি, দক্ষ জনবলের স্বল্পতা এবং সমন্বিত নীতিমালার অভাব হালাল শিল্পের বিকাশে বড় চ্যালেঞ্জ।’
আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ডের মহাপরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম, বিডার মহাপরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো. আরিফুল হক, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর মহাপরিচালক বেবী রাণী কর্মকার, বিএসটিআইর উপ-পরিচালক (হালাল সার্টিফিকেশন) এসএম আবু সাইদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক ডা. মো. আবু সালেহ পাটোয়ারী, বেঙ্গল মিটের এজিএম সায়েদুল হক ভূঁইয়া, মেটামরফোসিস’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদিক এম আলম এবং প্যারাগন গ্রুপের সহকারী ম্যানেজার (এক্সপোর্ট) মো. আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।
মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর হালাল পণ্যের ডিজিটাল সার্টিফিকেট প্রদান এবং উৎপাদন পর্যায়ে কমপ্লায়েন্স অডিট করা সময়ের দাবি।’
বেঙ্গল মিটের সায়েদুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘ব্লকচেইন প্রযুক্তির মাধ্যমে পশুর জীবনবৃত্তান্ত সংরক্ষণ করলে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়বে।’
ডা. আবু সালেহ পাটোয়ারী বলেন, ‘একক কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে হালাল সার্টিফিকেট দেওয়া সম্ভব নয়, তাই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত উদ্যোগেই এটি সম্পন্ন হচ্ছে।’
ইপিবি মহাপরিচালক বেবী রাণী কর্মকার জানান, ‘হালালের বৈশ্বিক বাজার প্রতি বছর প্রায় ১২.৮ শতাংশ হারে বাড়ছে। তাই এ খাতে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ বাড়াতে সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি।’
বিডা মহাপরিচালক মো. আরিফুল হক বলেন, ‘এলডিসি উত্তরণের পর রপ্তানি সম্প্রসারণে হালাল খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এজন্য সরকার হালাল খাতের উন্নয়নে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের বিষয়টি বিবেচনা করছে।’
এমকে/টিকে