জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ কামাল বলেছেন, বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হবে। এখানে নাথিং নিউ। নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হবে। এটা আমিও মনে করি।
কারণ নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। নির্বাচন যদি ফেব্রুয়ারিতে না হয়, তাহলে দেশে যে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হবে বলে আমার ধারণা, সেটা সামাল দেওয়ার ক্ষমতা এই সরকারের নেই। এই সরকারে যে কী কী ক্ষেত্রে ক্ষমতা আছে, সেটাও আসলে আমার পক্ষে মাঝে মাঝে বোঝা কষ্ট হয়ে দাঁড়ায়।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) রাতে ‘কথা’ নামের নিজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত এক ভিডিওতে এসব কথা বলেন তিনি।
মাসুদ কামাল বলেন, নির্বাচনকে সামনে নিয়ে এবং জুলাই সনদের বাস্তবায়নকে সামনে নিয়ে এমন একটা অবস্থায় আমরা পৌঁছেছি যে এটা আসলে একটা জটিল অবস্থা এবং এই জটিল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে কেন? সৃষ্টি হয়েছে এই কারণে যে আমরা দেখেছি এই সরকারের বিষয়ে পলিটিক্যাল পার্টিগুলোর মধ্যে এক ধরনের অনাস্থা আছে। সরকারের ব্যাপারে জনগণের মধ্যে অনাস্থা আছে কি নেই- সেটা অনেক দূরের ব্যাপার। ওটা বুঝতে গেলে নানা ধরনের গবেষণা লাগে। কারণ সরকার বলে, জনগণ আমার সঙ্গে আছে।
এই সরকার বলে জনগণ উন্নতিতে না কি বুঁদ হয়ে আছে। নানা রকম ইতিবাচক কথাবার্তা তারা বলে। কিন্তু সেটা আসলেই কি- সেটা বোঝা বড় কঠিন। তবে রাজনৈতিক দলগুলো কি মনে করে সরকারের ব্যাপারে, সেটা কিন্তু বোঝা যায়। বোঝা যায় কীভাবে? রাজনৈতিক দলগুলো যখন কথা বলে, তখন তো আমরা এগুলো দেখতে পাই মিডিয়াতে।
আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি কথা যদি নাও ধরি, এই সরকারকে নিঃশর্তভাবে শুরু থেকে যারা সমর্থন দিয়ে এসেছে, সেই দলগুলোর ফিলিংসটা আসলে কী? তারা কি এই সরকারকে নিয়ে এখন খুব বেশি উচ্চাশা প্রদর্শন করছে?
তিনি বলেন, আমরা কতগুলো জিনিস লক্ষ্য করলাম। যেমন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সরকারের সঙ্গে সবাই ছিল। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ছাত্ররা তখন তো এনসিপি হয়নি। পরে এনসিপি হলো। সবাই এই সরকারের সঙ্গে একভাবে ছিল। ধীরে ধীরে আমরা দেখলাম, শুরুতে আমরা দেখলাম যে বিএনপি এই সরকারের ব্যাপারে এক ধরনের তাদের রিজারভেশন প্রকাশ করতে শুরু করল। এবং এক পর্যায়ে তারা বলেই ফেলল যে সরকারের তিনজন উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করানো হোক, তাদের বাদ দেওয়া হোক- এই ধরনের কথা বিএনপির পক্ষ থেকে বেশি জোরালোভাবে উঠল। আমরা এটাও দেখলাম, এই সরকারের একজন উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় লিডার যিনি ঢাকা দক্ষিণে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন বলে দাবি করেছিলেন। আদালতের রায়ও তার পক্ষে ছিল। তার একটা সরাসরি বিরোধ আমরা দেখতে পেলাম। ঢাকা শহরে অচল অবস্থাও কয়েকদিন চলল। তো সেই সময় এ বিভক্তি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল, বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হলো যে সরকারের তিনজন উপদেষ্টাকে বাদ দিতে হবে এবং এটা নিয়ে তখন কিন্তু জামায়াতে ইসলাম এবং এনসিপি সরকারের পক্ষে ছিল। তারা বিএনপিকে সমর্থন করেনি।
সরকার প্রধান ড. ইউনূস যখন লন্ডনে গিয়ে তারেক রহমানের সঙ্গে মিটিং করলেন, তারপরে দেখলাম পুরো জিনিসটা যেন ওলটপালট হয়ে গেল।
ওলটপালট কীভাবে? বিএনপি আর সরকারের ব্যাপারে কিছু বলে না। এখন সরকার যা কিছু বলে, বিএনপি তার পক্ষে আছে। বিপরীত দিকে তারা যে তিনজনের পদত্যাগ চেয়েছিলেন, ওটা আবার চায় না। এবং ইশরাক সাহেবকে তারা আন্দোলনের মাঠ থেকে প্রত্যাহার পর্যন্ত করে নিল। তার মানে আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার জয় হলো এক ধরনের। ইশরাককে তারা ইচ্ছা করে হারিয়েও দিল। আমি তো বলি, ইশরাককে এক ধরনের কোরবানি দেওয়া হলো।
তিনি আরো বলেন, যা-ই হোক, এত কিছু স্যাক্রিফাইস করল বিএনপি, তারা যখন সরকারের পক্ষে সবকিছু মেনে নিচ্ছে, তখন আমরা দেখলাম একটা ভিন্ন দৃশ্য। সে দৃশ্যটা কী? কিংস পার্টি হিসেবে যাদের পরিচিতি হয়ে গিয়েছিল, এনসিপি, তারা ধীরে ধীরে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলা শুরু করল। অনেকে এমনও বলত, জামায়াতে ইসলামী সরকারকে চালাচ্ছে, দেখা গেল তারাও সরকারের বিরোধিতা করা শুরু করল এবং সর্বশেষ যেটা আমরা দেখলাম যে এনসিপির যিনি প্রধান নাহিদ ইসলাম, তিনি তো সরকারের উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগও করলেন। তিনি বললেন, সরকারের অনেকে তাদের অপকর্ম ঢাকার জন্য এবং সেফ এক্সিট খুঁজছেন এবং এইজন্য তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে এক ধরনের লিয়াজোঁ করছেন। উনি বলার পর উনাদের আরেকজন নেতা সারজিস আলম ইসলাম বললেন যে মৃত্যু ছাড়া এদের কারো কোনো সেফ এক্সিট নাই। তারপরে দেখলাম তাদের আরেকজন কেন্দ্রীয় নেতা সামান্থা শারমিন আবার বললেন যে প্রত্যেক উপদেষ্টাই নিজেদের আখের গুছিয়ে রেখেছেন।
এমআর