সিনিয়র সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজ বলেছেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় হয়তো অংশ নেবে না। অনুমান করা যায়, তারা চাপ তৈরি করার জন্য আন্দোলন বেছে নেবে এবং বিভিন্ন ইস্যু উত্থাপন করবে। তবে কতটুকু এটি কার্যকর হবে এবং কতটুকু জনগণের সমর্থন পাবে, তা স্পষ্ট নয়। জুলাইযোদ্ধারা ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছেন, যদি দাবি মেনে নেওয়া না হয়, তারা জেলায় জেলায় মহাসড়ক অবরোধ করবেন। এটি সফল হবে কি হবে না, তা অনিশ্চিত।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) নিজের ইউটিউব চ্যানেল ‘ভয়েস বাংলাতে’ মোস্তফা ফিরোজ এসব কথা বলেন।
মোস্তফা ফিরোজ বলেন, ‘এনসিপি আজ আবারও সংবাদ সম্মেলন করে জানান দিল যে তারা তাদের অবস্থান থেকে সরছে না। তারা বলছে, জুলাই সনদে স্বাক্ষরকারীরা জনগণ থেকে ছিটকে গেছে।
২৫টি রাজনৈতিক দল এতে স্বাক্ষর করেছে তারা সবাই ছিটকে গেছে আর শুধু জনগণের সঙ্গে রয়ে গেছে এনসিপি। এতগুলো রাজনৈতিক দল ভুল করলেও শুধু এনসিপি সঠিক অবস্থানে আছে।’
আইনি ভিত্তি না থাকলে জুলাই সনদ কেবল জনগণের সঙ্গে প্রতারণা বলে মন্তব্য করেছেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা গণ-অভ্যুত্থান এবং জনগণ থেকে ছিটকে গেছে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করে এনসিপি রাজনীতিতে ছিটকে যায়নি। যারা গতকালের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছে, তারা গণ-অভ্যুত্থান এবং জনগণ থেকে ছিটকে গেছে।’
নাহিদ ইসলাম আরো বলছেন, ‘জুলাই সনদের স্বাক্ষর কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা হয়েছে। তিনি মনে করেন, গতকালের স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জনগণের আকাঙ্ক্ষা বা চাওয়ার কোনো প্রতিফলন ঘটেনি। এর পরও যদি আইনি ভিত্তি না থাকে, তবে এটি জনগণের সঙ্গে একটি প্রতারণা হবে।
নাহিদ বলেন, ‘যেসব রাজনৈতিক দল জুলাই সনদে অংশগ্রহণ করেছে তাদের নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই, কারণ তারা এটি কেবল আনুষ্ঠানিকতার জন্য করেছে। তবে বর্তমানে এটাকে আইনি ভিত্তি দেওয়ার দাবি করা হচ্ছে।’
নাহিদ ইসলামের বক্তব্য প্রসঙ্গে মোস্তফা ফিরোজ বলেন, জুলাই সনদে এনসিপির অংশগ্রহণ জরুরি ছিল। এটা এক ধরনের বিপর্যয়। তবে এখন এনসিপি যে বক্তব্য রাখছে, সেটাও কার্যকর নয়। কারণ আইনি ভিত্তি দেওয়া সম্ভব নয়, আর এ নিয়ে বড় রাজনৈতিক মতপার্থক্য রয়েছে। সরকারও চিন্তিত যে বড় রাজনৈতিক দলগুলো কী করবে। এই অবস্থান আগে জামায়াতেরও ছিল; তারা বলছিল গণভোট হওয়া এবং জনপ্রতিনিধি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পরে তারা স্বাক্ষর করবে। তবে পরে তাদের অবস্থান বদলায়।
মোস্তফা ফিরোজ আরো বলেন, শাপলা ছাড়া তারা নাকি নির্বাচনে যাবে না। আজ, ১৯ তারিখ, সম্ভবত তাদের শেষ সময়সীমা। যদি এনসিপি কালকের মধ্যে সম্মতি না দেয় বা বিকল্প প্রতীক না দেখায়, তাহলে নির্বাচন কমিশন প্রতীক প্রদানের মাধ্যমে এই ধাপ শেষ করবে। এমন পরিস্থিতিতে, আগের দিন এমন অনমনীয় মনোভাব দেখে মনে হচ্ছে এনসিপি নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় হয়তো অংশ নেবে না। অনুমান করা যায়, তারা চাপ তৈরি করার জন্য আন্দোলন বেছে নেবে এবং বিভিন্ন ইস্যু উত্থাপন করবে। তবে কতটুকু এটি কার্যকর হবে এবং কতটুকু জনগণের সমর্থন পাবে, তা স্পষ্ট নয়। জুলাইযোদ্ধারা ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে, যদি দাবি মেনে নেওয়া না হয়, তারা জেলায় জেলায় মহাসড়ক অবরোধ করবে। এটি সফল হবে কি হবে না, তা অনিশ্চিত।
তিনি বলেন, তারা সংবাদ সম্মেলনে জুলাইযোদ্ধাদের ওপর লাঠিচার্জের প্রতিবাদও করেছে। মূল বিষয় হলো, জুলাই সনদ স্বাক্ষর না হওয়া পর্যন্ত অস্থিরতা অব্যাহত থাকবে। এখনো সমাধানের সুযোগ আছে, যদি এনসিপির সঙ্গে আলোচনা করে তাদের আশ্বাস দেওয়া যায় এবং পরিষ্কার অবস্থান নেওয়া যায়। নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যেই জানিয়েছে যে তারা সরকারের কাছে বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন সুপারিশ পেশ করবে। যতক্ষণ পর্যন্ত এই বিষয়টি সমাধান হয়নি, ততক্ষণ এটি সংকট হিসেবে থাকবে এবং প্রভাব ফেলবে। তবে এর সমাধান অত্যন্ত জরুরি।
টিজে/টিকে