এশিয়ার মার্কেটে আমেরিকার আধিপত্য বিস্তার নিয়ে রনির সতর্কবার্তা

সাবেক সংসদ সদস্য ও কলামিস্ট গোলাম মাওলা রনি বলেছেন, আমেরিকা আমাদের দক্ষিণপূর্ব এশিয়াতে যেভাবে খেলার চেষ্টা করছে এই মুহূর্তে, গত ৫০, ৬০, ৭০ বছর কিংবা ১০০ বছরের ইতিহাসে কোনো অঞ্চলে তাদের আধিপত্য বিস্তারের জন্য এতটা শক্তি, এতটা কৌশল, এতটা অর্থ তারা বিনিয়োগ করেনি। এই মুহূর্তে বঙ্গোপসাগরকে কেন্দ্র করে, বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে, আফগানিস্তানকে কেন্দ্র করে তারা যে মাস্টারপ্ল্যান করছে, সেই মাস্টারপ্ল্যানের প্রথম অংশ হলো তারা যেকোনো মূল্যে মায়ানমারের ওপর তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে। দ্বিতীয়ত হলো আফগানিস্তানের সঙ্গে তাদের যে সম্পর্কটি নষ্ট হয়ে গেছে, এই সম্পর্কটি তারা যেকোনো মূলে পুনঃস্থাপিত করতে চাচ্ছে, এমনকি আরেকটা যুদ্ধ করে যদি আফগানিস্তান দখল করা যায়, সেই কাজ তারা করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এর কারণ হলো আফগান যে ভূখণ্ডটি, সেই ভূখণ্ডটি যদি চীন এবং রাশিয়া যুগপৎভাবে আমেরিকার বিরুদ্ধে ব্যবহার করে, সেক্ষেত্রে এই মুহূর্তে তাদের যে পাকিস্তান বন্ধু, সে পাকিস্তানের অখণ্ডতা থাকবে না, ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।

রবিবার (১৯ অক্টোবর) নিজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত এক ভিডিওতে এসব কথা বলেন তিনি।

গোলাম মাওলা রনি বলেন, অন্যদিকে যদি বঙ্গোপসাগর এবং পুরো মায়ানমার, স্পেশালি রাখাইন- এই এলাকাটার ওপর যদি আমেরিকা তাদের আধিপত্য বিস্তার করতে না পারে, তাহলে এখানে যে গ্রিন ইকোনমি, ব্লু ইকোনমি ও সয়েল ইকোনমির ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। মায়ানমারের বিস্তীর্ণ যে বনভূমি, তার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ বনভূমি। অর্থাৎ আমাদের পার্বত্য এলাকা।

এগুলোকে কেন্দ্র করে কৌশলগতভাবে আমেরিকা এখানে এরকম একটা মিলিটারি বেস গড়ে তোলার পরিকল্পনা করবে, যে বেস থেকে তারা চীনকে মোকাবিলা করতে পারবে।

তিনি বলেন, এখানে যদি সমুদ্র থাকে, সমুদ্রের সঙ্গে সঙ্গে যদি নিবিড় বনভূমি থাকে, অ্যামাজনের মতো জঙ্গল থাকে এবং তার মধ্যে যদি মিলিটারি বেস থাকে, তাহলে খুব সহজেই চায়নাকে হটিয়ে দেওয়া যায়। আর এই কাজটি তাদের খুব দ্রুত করতে হবে। এর কারণ হলো তাদের যে অর্থনীতির চাকা, এটা চলছে না।

কারণ আইফোন বলেন, ইলন মাস্কের কোম্পানি টেসলা বলেন, মাইক্রোসফট বলেন, গুগল বলেন, মেটা-ফেসবুক বলেন- এই জিনিসগুলো ক্রমশ প্রতিদিনই চীনের নিত্য নতুন টেক জায়ান্ট তাদের দ্বারা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন। এমনকি তাদের বন্ধু কোরিয়া এবং জাপান তারাও প্রযুক্তিতে এখন আর চীনের সঙ্গে পেরে উঠছে না। ফলে চীনের বিওআইডি এখন জার্মান মার্সিডিজ, বিএমডব্লিউ, রেঞ্জ রোভার থেকে শুরু করে আমেরিকার যে নামকরা কোম্পানিগুলো রয়েছে যারা এই যানবাহন তৈরি করে, তাদের সবাইকে টেক্কা দিচ্ছে। এমনকি জাপানের টয়োটা, হোন্ডা, মিশুবিশি, নিসান এই কোম্পানিগুলো এখন অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে এবং আমি একটা ম্যাগাজিনে দেখলাম যে তিনটি বৃহৎ কোম্পানি অর্থাৎ নিশান মিরশুবিশি এবং টয়টা তারা মার্চ করছে একসঙ্গে। কল্পনা করতে পারি, শুধুমাত্র চায়নাকে মোকাবিলা করার জন্য।

এর কারণ হলো যে ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যকে পুঁজি করে আমেরিকা যে অর্থ উপার্জন করত, আফ্রিকাকে পুঁজি করে ফ্রান্স, জার্মানি, পর্তুগাল এমনকি ইংল্যান্ড তারা যে অর্থ উপার্জন করত, এটা ৫০-এর দশক থেকে ওই যে সুয়েজখাল চলে গেল, এরপর থেকে একটার পর একটা কলোনি তাদের হাতছাড়া হয়ে গেছে, ইউরোপের। কাজেই এখন ইউরোপে যে অর্থনৈতিক সংকট- এটা কল্পনাই করা যায় না।

তিনি আরো বলেন, আমেরিকাতে সেই একই সংকট দেখা দিয়েছে। এজন্য তাদের দরকার হলো এশিয়ার মার্কেটে আধিপত্য বিস্তার করা। যেকোনো মার্কেটে আধিপত্য বিস্তার করার জন্য সবার আগে দরকার হলো সামরিক কর্তৃত্ব অর্জন এবং সেই সামরিক কর্তৃত্ব অর্জনের জন্য তারা এই বাংলাদেশের ডিপ স্টেট, পাকিস্তানের ডিপ স্টেট, শ্রীলঙ্কাতে ডিপ স্টেট একটার উপর একটা অঘটন ঘটিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা পাকিস্তানের উপর নির্ভর করে কিংবা নিজেদের যে ফরেন মিনিস্ট্রি, স্টেট ডিপার্টমেন্ট সেগুলোর উপর নির্ভর করে গত দুই বছরে বা তিন বছরে তারা কোন ইমরান খানের পতন দিয়ে যেটা শুরু হলো তারা এখন পর্যন্ত কোন সফলতা দেখাতে পারেনি এবং একেবারে সর্বশেষ তারা, বাংলাদেশে যে ঘটনাটা ঘটিয়েছে, তার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সবকিছু এমনভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে, এখন এখানে আমেরিকাকে ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা। তাদের যে সকল বিনিয়োগ ছিল সেটা সেভ্রন বলেন, এমনকি বোয়িংয়ের যে মার্কেট ছিল যা কিছু ছিল তছনছ হয়ে গেছে।

ইএ/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
জামায়াতের কথার সঙ্গে কাজের মিল নেই : রুমিন ফারহানা Oct 20, 2025
img
ভারতের সেমিফাইনালের আশা কি শেষ? Oct 20, 2025
img
৩০০তম ম্যাচে নাইটের দুর্দান্ত সেঞ্চুরি Oct 20, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্রের চাপে গাজা সীমান্ত আবার খুলছে ইসরায়েল Oct 20, 2025
img
তারা আমাদের খাট, পালঙ্ক, চেয়ার, টেবিল এই ধরনের প্রতীক দিতে চায় : সারোয়ার তুষার Oct 20, 2025
img
ইয়েমেনে জাতিসংঘ কার্যালয়ে অভিযান, আটক ২০ Oct 20, 2025
img
যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করলো হামাস Oct 20, 2025
img
২০ অক্টোবর : ইতিহাসের এই দিনে কী ঘটেছিল Oct 20, 2025
img
যুদ্ধবিরতির পর গাজায় ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ গেল অন্তত ৯৭ ফিলিস্তিনির Oct 20, 2025
img
ফল হিসেবে শসা বাড়াবে ইমিউনিটি , মেদ ঝরাবে এবং শরীর রাখবে ফিট Oct 20, 2025
img
আজ থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচির ঘোষণা শিক্ষক-কর্মচারীদের Oct 20, 2025
img
আজকের মুদ্রা বিনিময় হার Oct 20, 2025
img
আজ শ্যামাপূজা ও দীপাবলি Oct 20, 2025
img
শেখ হাসিনা ও কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীর যুক্তিতর্ক আজ Oct 20, 2025
img
দুপুরের মধ্যে দেশের ৬ অঞ্চলে ৬০ কি.মি. বেগে ঝড়সহ বজ্রবৃষ্টির আভাস Oct 20, 2025
img
সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ইসির বৈঠক আজ Oct 20, 2025
img
বিশ্বে বায়ুদূষণে শীর্ষ শহর দিল্লি, ষষ্ঠ অবস্থানে ঢাকা Oct 20, 2025
img

নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপ

আজ বাংলাদেশের বাঁচা-মরার লড়াই Oct 20, 2025
img
হংকংয়ে বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ২ জনের Oct 20, 2025
img

নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপ

ভারতকে কাঁদিয়ে সেমিফাইনালে ইংল্যান্ড Oct 20, 2025