বাংলাদেশের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহ। স্বপ্নের এ নায়কের মৃত্যুর তিন দশক পেরিয়ে গেলেও মেলেনি নায়কের মৃত্যু রহস্যের কুল কিনারা। ভক্তদের দাবি, নায়কের মৃত্যু আত্মহত্যা নয়, হত্যাকাণ্ড। এমন দাবিতে আজ সোমবার (২০ অক্টোবর) রাজধানীর মহানগর দায়রা জজ কোর্টে ভিড় জমান সালমান ভক্তরা।
মানব বন্ধন করতে মহানগর দায়রা জজ কোর্টের সামনে সকাল থেকেই জড়ো হতে শুরু করেন অর্ধশতাধিক সালমান ভক্ত। হাতে ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে দৃঢ় কণ্ঠে স্লোগান তোলেন 'সালমান শাহ হত্যার বিচার চাই!'
ভক্তরা জানান, সালমান শাহ’র অপমৃত্যুর মামলা এখনো আত্মহত্যা হিসেবে চললেও তাদের বিশ্বাস এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তাই মামলাটি পুনঃতদন্ত করে হত্যাকাণ্ড হিসেবে বিচার দাবি করেন তারা।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সালমান শাহ শুধু একজন নায়ক নন, তিনি একটি প্রজন্মের প্রেরণা। অথচ অভিনেতার মৃত্যুর প্রায় ৩০ বছর পেরিয়ে গেলেও তার প্রকৃত মৃত্যুর রহস্য আজও উদ্ঘাটন হয়নি, দাবি ভক্তদের।
মহানগর দায়রা জজ কোর্টের সামনে ক্ষোভ প্রকাশ করে ভক্তরা দাবি করেন সরকারের হস্তক্ষেপে মামলাটি নতুনভাবে তদন্ত দ্রুত শুরু করা হোক এবং প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় এনে দেয়া হোক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মাত্র ২৫ বছরে মারা যান সালমান শাহ। অভিনেতার হঠাৎ মৃত্যুকে ‘আত্মহত্যা’ বলে দাবি করেন তার সাবেক স্ত্রী সামিরা হক। যা মেনে নেয়নি নায়কের পরিবার। ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে মামলা করেন সালমানের বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী।
ওই সময় অপমৃত্যুর মামলার সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগের বিষয়টি একসঙ্গে তদন্ত করতে সিআইডিকে নির্দেশ দেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। সিআইডির চূড়ান্ত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে ১৯৯৭ সালের ২৫ নভেম্বর সিএমএম আদালত সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনাকে ‘আত্মহত্যা’ বলে রায় দেন। যা প্রত্যাখ্যান করে রিভিশন মামলা করেন সালমানের বাবা।
২০০৩ সালে রিভিশন মামলার বিচার বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়। দীর্ঘ ১১ বছর পর ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইমদাদুল হক প্রতিবেদন দাখিল করেন যেখানে সালমান শাহর মৃত্যুকে ‘অপমৃত্যু’ বলা হয়।
এরপর ছেলের মৃত্যুর বিচারপ্রার্থী কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী মারা গেলে মামলার বাদী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী। ২০১৫ সালে তিনি সিএমএম আদালতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজির আবেদন করেন। তখন মামলাটি তদন্তের ভার পড়ে পিবিআইয়ের ওপর।
২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করলে ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর আদালত ওই প্রতিবেদন গ্রহণ করে মামলাটি নিষ্পত্তি করেন।
মামলার নিষ্পত্তি আদেশের বিরুদ্ধে ২০২২ সালের ১২ জুন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে রিভিশন মামলা দায়ের করে বাদীপক্ষ। ওই রিভিশন মামলায় বলা হয়, একাধিক ব্যক্তির প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে হত্যাকে ধামাচাপা দেয়া হয়েছে। সুপরিকল্পিত হত্যাকে ‘আত্মহত্যা’ ও ‘অপমৃত্যু’ বলা হচ্ছে। তাই সত্য প্রতিষ্ঠায় সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।
এসএন