ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষা কার্যক্রম জাতীয়করণের দাবিতে দীর্ঘ ১৪ দিন ধরে আন্দোলন করে যাওয়া শিক্ষকরা সোমবার (২৭ অক্টোবর) দুপুর ১২টায় জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে লং মার্চ করার ঘোষণা দিয়েছেন। একইসঙ্গে তাদের দাবি মেনে নেয়া না হলে দেশব্যাপী সব ইবতেদায়ী মাদ্রাসায় ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
রোববার (২৫ অক্টোবর) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে এই ঘোষণা দেন স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষক ঐক্যজোট আন্দোলন বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক শামসুল আলম। এসময় কমিটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ আল আমিন ও বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির সভাপতি কাজী মোখলেছুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, আগামীকাল দুপুর ১২টায় আমরা ‘জাতীয় প্রেস ক্লাব টু মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর’ অভিমুখে লং মার্চ করবো। এরপরও যদি সরকার দ্রুত সময়ের মধ্যে আমাদের দাবি মেনে প্রজ্ঞাপন না দেয়, তাহলে আমরা সারাদেশে ইবতেদায়ী মাদ্রাসায় ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেব। আমরা আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরে যাব না।
ইবতেদায়ী মাদ্রসা শিক্ষা কার্যক্রম জাতীয়করণের দাবিতে গত ১৩ অক্টোবর থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আন্দোলন করে যাচ্ছে শিক্ষকরা। রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, পাঁচ শতাধিক শিক্ষক প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান নিয়েছেন। এসময় তাদের বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে শোনা যায়। এর মধ্যে অন্যতম স্লোগান ছিল- ‘ইবতেদায়ী শিক্ষক, হয়েছে কেন ভিক্ষুক?’, ‘অবহেলার ৪০ বছর, মানুষ বাঁচে কত বছর’, ‘চাকরি আছে বেতন নাই, এমন কোনো দেশ নাই’, ‘বাড়ি না, রাস্তা? রাস্তা, রাস্তা’, ‘প্রাইমারি জাতীয়করণ, আমরা কেন বিনা বেতন’, ‘বৈষম্য নিপাত যাক, জাতীয়করণ মুক্ত পাক’, ‘এক দফা এক দাবি, জাতীয়করণ করতে হবে’।
আন্দোলনরত শিক্ষকরা বলেন, আমরা ৪০ বছর ধরে অবহেলিত। এরশাদ সরকারের আমলে প্রাইমারি শিক্ষকদের এবং ইবতেদায়ী শিক্ষকদের ৫০০ টাকা ভাতা দেওয়া হতো। প্রাইমারি শিক্ষা কার্যক্রম অনেক আগেই জাতীয়করণ করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের সঙ্গে প্রতিশ্রুতি দিয়েও সরকার প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। ইবতেদায়ী মাদ্রাসা জাতীয়করণের বিষয়ে সরকারের আশ্বাসের নয় মাস পেরিয়ে গেছে, এখনো তা বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতি নেই। আমরা শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেছি, তিনি জানিয়েছেন আমাদের দাবি যৌক্তিক কিন্তু বাস্তবায়নের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আমরা এখন আর অপেক্ষা করার অবস্থানে নেই। আমাদের অবস্থা ভিক্ষুকদের মতো হয়ে গেছে। দ্রুত প্রজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের ঘরে ফেরার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। তা না হলে আমরা সারাদেশে সব ইবতেদায়ী মাদ্রাসায় ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করতে বাধ্য হবো। তখন এই আন্দোলন শুধু শিক্ষকদের নয়, এটি অভিভাবক ও দেশবাসীর আন্দোলনে পরিণত হবে।
অবস্থান কর্মসূচি থেকে শিক্ষকেরা বিভিন্ন দাবি জানান। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- অনুদানভুক্ত ও অনুদানবিহীন সব স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণের ঘোষণার দ্রুত বাস্তবায়ন, ১ হাজার ৮৯টি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের লক্ষ্যে যাচাই-বাছাইকৃত ফাইল দ্রুত অনুমোদন করে প্রজ্ঞাপন প্রকাশ, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসায় প্রাক-প্রাথমিক পদ সৃষ্টি এবং স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার জন্য আলাদা অধিদপ্তর স্থাপন।
এর আগে গত জানুয়ারি মাসে ইবতেদায়ী শিক্ষকরা আন্দোলনে নামলে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব এস এম মাসুদুল হকের এক ঘোষণায় তারা আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেয়। এম মাসুদুল হক তখন জানিয়েছিলেন, ‘সব ইবতেদায়ী মাদ্রাসা পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণ করা হবে। চলতি বছর থেকেই আমরা এমপিওর কাজ শুরু করব।’
এমকে/টিএ