দেশে প্রথমবারের মতো মুভমেন্ট ডিজঅর্ডার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ‘ডিপ ব্রেইন স্টিমুলেশন’ (ডিবিএস) সার্জারির রোগীর বুকে ব্যাটারি প্রতিস্থাপন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগে এ সার্জারি পরিচালনা করা হয়। সার্জারিটি সফলভাবে সম্পন্ন করেন ঢামেক নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. জাহিদ রায়হান।
এই সার্জারি উপলক্ষে একটি বিশেষ ওয়ার্কশপের আয়োজন করে ক্রেডিবল সলিউশন, যেখানে উপস্থিত ছিলেন- বেইজিং পিনস মেডিকেল কোম্পানির সিইও মি. জেসন, অধ্যাপক ডা. শফিকুল ইসলাম, প্রফেসর ড. ফজলে এলাহী মিলাদ, সহকারী অধ্যাপক ডা. মশিউর রহমান মজুমদার, সহকারী অধ্যাপক মমতাজুল হক, সহকারী অধ্যাপক ড. শামসুল ইসলাম খান, সহকারী অধ্যাপক ডা. মোতাশিমুল হাসান শিপলু, সহকারী অধ্যাপক কানিজ ফাতেমা ইশরাত জাহান রিফাত, সহকারী অধ্যাপক ডা. খালেদ আহমেদুর রহমান, সহকারী অধ্যাপক ড. নুরুজ্জামান খান খসরু, সহকারী অধ্যাপক ড. রাশেদ মাহমুদ এবং সহকারী অধ্যাপক ডা. সুমন রানাসহ অনেকে।
এই সার্জারিতে ব্যবহৃত ইমপ্ল্যান্ট ও ব্যাটারি সরবরাহ করেছে ক্রেডিবল সলিউশন, যারা বেইজিং পিনস মেডিকেল-এর একমাত্র অনুমোদিত পরিবেশক। পিনস হলো ‘ডিপ ব্রেইন স্টিমুলেশন’ (ডিবিএস) প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত এবং বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম কোম্পানি। বর্তমানে ক্রেডিবল সলিউশন বাংলাদেশে এই উন্নত ডিবিএস ডিভাইস ও ব্যাটারি সরবরাহ করছে।
রোগীর নাম মো. জাকির হোসেন (৩৯)। তিনি ২০১৭ সালে প্রথমবার ‘ডিপ ব্রেইন স্টিমুলেশন’ সার্জারি করেছিলেন। ডিবিএস ডিভাইসের ব্যাটারি দুই ধরনের—রিচার্জেবল ও নন–রিচার্জেবল। আজকের প্রতিস্থাপন করা ব্যাটারিটি ছিল নন–রিচার্জেবল ধরনের।
‘ডিপ ব্রেইন স্টিমুলেশন’ কী
‘ডিপ ব্রেইন স্টিমুলেশন’ (ডিবিএস) একটি উন্নত নিউরোসার্জিক্যাল পদ্ধতি, যার মাধ্যমে মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশে ইলেকট্রোড স্থাপন করে বৈদ্যুতিক তরঙ্গের সাহায্যে স্নায়ুতন্ত্রের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এটি মূলত পারকিনসন্স ডিজিজ, ডিস্টোনিয়া এবং অন্যান্য মুভমেন্ট ডিজঅর্ডার-এর চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
বিশেষজ্ঞরা জানান, এই সার্জারি বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে এখন দীর্ঘমেয়াদে ডিবিএস ব্যাটারি পরিবর্তন করে রোগীর জীবনমান উন্নত করা সম্ভব হচ্ছে দেশেই, বিদেশে না গিয়ে।
পারকিনসন্স রোগ মূলত এক ধরনের চলাফেরাজনিত স্নায়ুবিক ব্যাধি, যা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে। এই রোগে আক্রান্তরা সাধারণত কম্পন, ধীরগতিতে নড়াচড়া, অনমনীয় পেশি এবং ভারসাম্যহীনতায় ভোগেন। এটি ঘটে মস্তিষ্কের ডোপামিন উৎপাদনকারী কোষের অবক্ষয়ের কারণে।
অন্যদিকে, ডিস্টোনিয়া হলো এমন এক মুভমেন্ট ডিজঅর্ডার, যেখানে রোগীর পেশিগুলো অনিচ্ছাকৃতভাবে সংকুচিত হয়ে অস্বাভাবিক ও পুনরাবৃত্তিমূলক নড়াচড়া তৈরি করে। এটি শরীরের একটি অংশ (ফোকাল), একাধিক অংশ (সেগমেন্টাল) বা পুরো শরীরকেই (জেনারালাইজড) প্রভাবিত করতে পারে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. জাহিদ রায়হান বলেন, এই সার্জারি দেশের জন্য এক বড় অর্জন। আমরা এখন মুভমেন্ট ডিজঅর্ডার রোগীদের উন্নত ব্রেইন স্টিমুলেশন চিকিৎসা সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশেই দিতে পারছি।
টিজে/টিকে