‘আমার হাজবেন্ড ছাড়া আমাদের এই পৃথিবীতে আর কেউ নেই। আমাদের সংসার এখন কীভাবে চলবে। ছোট ছোট বাচ্চাগুলো নিয়ে সামনে কীভাবে চলবো বুঝতে পারছি না। সরকারের কাছে একটাই দাবি, আমার স্বামীর মতো যাতে আর কারও মৃত্যু না হয়।’ -এভাবেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন ঢাকায় মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে নিহত আবুল কালামের স্ত্রী আইরিন আক্তার।
নিহত আবুল কালামের বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার মোক্তারের চর ইউনিয়নের ঈশ্বরকাঠি গ্রামে। তার এমন অকালমৃত্যু মানতে পারছেন না স্বজন ও গ্রামের মানুষেরা। তিনি ওই গ্রামের জলিল চোকদার ও হনুফা বেগম দম্পতির ছেলে।
আইরিন আক্তার বলেন, ‘গতকাল সে (আবুল কালাম) যখন বাসা থেকে বের হয়, তখন দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। সে চলে যাওয়ার পরও আমি দরজা বন্ধ করতে পারছিলাম না। জানি না তখন কেন যেন আমার বুক ফেটে কান্না পাচ্ছিল। আগে তো কখনো এমন হয়নি। এখন আবুল কালাম আমাকে সারা জীবনের জন্য কান্না উপহার দিয়ে চলে গেল। আমি দুই শিশুসন্তান নিয়ে কোথায় দাঁড়াব? কে আমাদের পাশে থাকবে?’
আবুল কালামের বড় ভাইয়ের স্ত্রী আসমা বেগম বলেন, ‘শ্বশুর-শাশুড়ি মারা যাওয়ার পর ওকে (আবুল কালাম) সন্তানের মতো মানুষ করেছি। সেও আমাকে মায়ের স্থান দিয়েছিল। গতকাল বেলা ১১টার দিকে ফোন করে বলেছিল, নদীতে ইলিশ মাছের অভিযান শেষ হয়েছে, আমার জন্য কিছু ইলিশ কিনে রেখো। আমি বৃহস্পতিবার এসে এগুলো নিয়ে যাব। ওর বৃহস্পতিবার আসার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই চলে এসেছে ওর লাশ। কে জানত এটাই ওর সঙ্গে আমার শেষ। আমরা এই কষ্ট কোথায় রাখব?’
এ বিষয়ে নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল কাইয়ুম খান জানান, আবুল কালামের দাফনের সব কাজ তারা সমন্বয় করেছেন। এ ছাড়া ওই পরিবারের পাশে সব সময় থাকবে উপজেলা প্রশাসন। পরিবারটিকে সহায়তার বিষয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলোচনা চলছে।
উল্লেখ্য, গতকাল দুপুর সোয়া ১২টার দিকে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেলের পিলারের বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে যায়। সেটির নিচে চাপা পড়ে প্রাণ হারান আবুল কালাম। এরপর গণমাধ্যমের সংবাদে পরিবারের সদস্যরা তার মৃত্যুর খবর জানতে পারেন।
এবি/টিকে