অতিথি আপ্যায়নে যেসব ভুল এড়ানো উচিত

ঘরে রাতের খাবারের জন্য দাওয়াত অনুষ্ঠানের আয়োজনকে এক ধরনের শিল্পই বলা চলা। অতিথিদের সঙ্গে গল্পগুজব, হাসি-মজা আর খাবার পরিবেশনের মধ্য দিয়ে যেন পুরো সন্ধ্যাটাই হয়ে ওঠে আনন্দময়।

তবে বাস্তবে খাবার গরম রাখা, অতিথিদের স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করা, কথোপকথনের গতি ঠিক রাখা আর ঘর গোছানো সব মিলিয়ে কাজটা সহজ নয়। ফলে অনেক সময় অনিচ্ছাকৃতভাবেই এমন কিছু ভুল হয়ে যায় যা পুরো পরিবেশকে অস্বস্তিকর করে দিতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘তারকা ইভেন্ট ডিজাইনার’ এডওয়ার্ড পেরোটি রিয়েলসিম্পল ডটকম-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেন, "রাতের দাওয়াত অনুষ্ঠানের লক্ষ্য কখনই নিখুঁত আয়োজন নয়, বরং অতিথিদের যেন ভালো লাগে সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।"

তিনি অতিথি আপ্যায়নের শিল্প শিখেছেন নিজের পরিবার থেকেই। দাদি ও ফুফুর কাছ থেকে, যারা ছিলেন অসাধারণ অতিথিপরায়ণ। তিনি শিখেছেন আচার-অনুষ্ঠান নয়, মূল বিষয় হল- অতিথির আরাম ও আনন্দ নিশ্চিত করা। আর কিছু ভুল এড়ালে দাওয়াত হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত।

অতিথিদের খাদ্যাভ্যাস ও অ্যালার্জি উপেক্ষা করা
সবচেয়ে সাধারণ তবে বড় ভুল হল অতিথিদের খাদ্যাভ্যাস ও অ্যালার্জি সম্পর্কে না জানা। কারও হয়ত ডায়াবেটিস আছে, কেউ হয়ত নিরামিষাশী, আবার কেউ গ্লুটেন বা দুগ্ধজাত খাবারে অ্যালার্জিক হতে পারেন।

এই বিশেষজ্ঞ বলেন, “অতিথিদের খাদ্যাভ্যাস ও পুষ্টিগত চাহিদা জেনে নিয়ে মেনু তৈরি করতে হবে। এখন এমন অনেক বিকল্প পণ্য পাওয়া যায় যেগুলো দিয়ে সুস্বাদু অথচ স্বাস্থ্যসম্মত খাবার তৈরি করা যায়। এতে কেউই খাবার খাওয়ার সময় অস্বস্তি বোধ করবেন না।” অর্থাৎ, খাবার পরিবেশনের সময় অতিথির পছন্দকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, এতে তারা যত্নবোধ অনুভব করবেন।

খাবার সাজাতে অতিরিক্ত মনোযোগ দেওয়া
সুন্দরভাবে সাজানো খাবার চোখে যেমন লাগে, খেতেও তেমন ভালো লাগে। তবে খাবার সাজানোর পেছনে অতিরিক্ত সময় ও শ্রম ব্যয় করলে তার মূল উদ্দেশ্যটাই হারিয়ে যায়। পেরোটি বলেন, “অতিরিক্ত নিখুঁত উপস্থাপনা কখনও কখনও খাবারের আনন্দকে ঢেকে দেয়। অতিথিদের জন্য খাবার মানে কেবল রূপ নয়, স্বাদেরও মান ঠিক থাকতে হবে।” তাই খাবার পরিবেশনে সরলতা বজায় রাখতে হবে। সজ্জা নয়, খাবার ও সম্পর্ক এই দুইয়ের ভারসাম্যই সফল দাওয়াত অনুষ্ঠানের মূল চাবিকাঠি।

অতি জটিল বা অচেনা খাবার পরিবেশন করা
অনেকেই অতিথিদের মুগ্ধ করতে গিয়ে এমন খাবার পরিবেশন করেন যা তাদের কাছে অচেনা বা জটিল। এতে অতিথিরা অস্বস্তি বোধ করতে পারেন। পেরোটি বলেন, “সবচেয়ে দামী বা বিলাসবহুল খাবার পরিবেশন করতেই হবে এমন নয়। যদি অতিথিরা খাদ্যরসিক না হন, তবে সরল অথচ পছন্দনীয় খাবারই বেশি প্রশংসিত হবে।” অর্থাৎ, প্রভাবিত করার চেয়ে আনন্দ দেওয়াই হোক দাওয়াতের মূল লক্ষ্য।

পানীয় পরিবেশনের সতর্কতা
সব ধরনের অতিথির জন্য ভারসাম্যপূর্ণ বিকল্প রাখতে হবে। সবই মকটেল বা কোমল পানীয় পান করেন না। তাই ফলের রস, লেবুর ঠাণ্ডা পানীয়, পুদিনার পানীয়, লাচ্ছি রাখা যেতে পারে। এতে সবাই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন। অতিথিদের প্রতি এই সচেতনতা দেখানোই আসল আতিথেয়তা।

অতিথিদের বসার আসন নির্ধারণ
অনেক সময় আয়োজকরা অতিথিদের জন্য আসন নির্ধারণ করেন বা বলে দেন কে কোথায় বসবেন। তিনি হয়ত ভাবেন এভাবে ব্যক্তিত্ব প্রকাশিত হবে। তবে এতে পরিবেশ হয়ে যায় বেশ আনুষ্ঠানিক। অতিথিদের নিজেদের মতো করে বসতে দিতে হবে। এতে আলাপচারিতা স্বাভাবিক হবে, বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হবে। স্বাধীনতার অনুভূতি অতিথিদের আরও স্বাচ্ছন্দ্য দেয়, যা দাওয়াতের সাফল্যের প্রধান উপাদান।

সাহায্যের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়া
অনেক আয়োজক মনে করেন- ‘আমি যদি সবকিছু নিজেই সামলাই, তাহলে বোঝা যাবে আমি সব থেকে ভালো আয়োজক৷’ কিন্তু এতে যেমন নিজের ওপর চাপ বাড়ে, তেমনই অতিথিরাও দূরত্ব বোধ করেন। তাই অতিথিদের সাহায্যের প্রস্তাব গ্রহণ করতে হবে। এতে তারা অংশীদারিত্ব অনুভব করেন, আর মুহূর্তটা হয়ে ওঠে আরও অর্থবহ। কেউ হয়তো রান্নাঘরে হাত লাগাতে চাইবে, কেউ বা টেবিল গোছাতে এমন ছোট ছোট মুহূর্তই সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ঠ করে তোলে।

সব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ পরদিনে ফেলে রাখ
দাওয়াত শেষে অনেকেই ক্লান্ত হয়ে সব কিছু পরদিন সকালে করার সিদ্ধান্ত নেন। তবে এতে পরদিনের সকালটাই নষ্ট হয়ে যায়। রাতের শেষে একটু ক্লান্ত লাগলেও ঘুমানোর আগে যতটা সম্ভব পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। সকালে উঠে ঝকঝকে রান্নাঘর দেখলে মনটা ভালো হয়ে যাবে। আর যদি কোনো অতিথি সাহায্য করতে চান, সুযোগ দিতে হবে। এতে সম্পর্কের উষ্ণতা বাড়বে, আর কাজও দ্রুত শেষ হবে।

এসএস/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বিশ্বব্যাংকের সালিশি আদালতে এস আলমের বিরুদ্ধে লড়বে সরকার: গভর্নর Dec 18, 2025
img
সিরিয়ার ওপর থেকে সব নিষেধাজ্ঞা স্থায়ীভাবে তুলে নিলো যুক্তরাষ্ট্র Dec 18, 2025
img
বাংলা শিখছেন সাইফ আলি খান, এবার কি তবে টলিউডের ছবিতে দেখা যাবে নায়ককে? Dec 18, 2025
img
২১ বছরের তরুণ ফুটবলার প্রাণ হারালেন সড়ক দুর্ঘটনায় Dec 18, 2025
img
বিয়েবাড়িতে কেন অস্বস্তিতে পড়েছিলেন অভিনেতা সাইফ? Dec 18, 2025
img
দেশের বাজারে কত দামে স্বর্ণ ও রুপা বিক্রি হচ্ছে আজ? Dec 18, 2025
img
সীমান্ত দিয়ে কোনো দুষ্কৃতকারী দেশ ত্যাগ করে বের হতে পারবে না Dec 18, 2025
img
অমিতাভকে ব্যক্তিগত প্রশ্নে চমকে দিলেন কার্তিক! Dec 18, 2025
img
বিনা অনুমতিতে নির্বাচন নিয়ে সভায় সৌদিতে আটক কয়েকজন বাংলাদেশি Dec 18, 2025
img
বিশ্বব্যাংকের সালিশি আদালতে এস আলমের বিরুদ্ধে লড়বে সরকার : গভর্নর Dec 18, 2025
img
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে ৯০১ বিলিয়ন ডলারের প্রতিরক্ষা বিল পাস Dec 18, 2025
img
২০২৫ সালে ৫,০০০০০ সেনা হারিয়েছে ইউক্রেন : রাশিয়া Dec 18, 2025
img
১২ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ আজ Dec 18, 2025
img
আরও ভয়াবহ সংকটে গাজাবাসি Dec 18, 2025
img
মাগুরায় আ.লীগ নেতা রেজাউল গ্রেপ্তার Dec 18, 2025
img
বাংলাদেশি শিল্পীদের কাজ ‘চেটেপুটে খাই’ : সোহিনী Dec 18, 2025
img
৩৭১ রান সংগ্রহ অস্ট্রেলিয়ার, আর্চারের ৫ উইকেট Dec 18, 2025
img
আজ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা থাকতে পারে ঢাকার আকাশ Dec 18, 2025
img
৩ জেলায় দুদকের দুর্নীতি বিরোধী অভিযান Dec 18, 2025
img
নিরাপত্তা শঙ্কায় বিপিএলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বাতিল Dec 18, 2025