এসএমই খাতকে অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি করতে সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত

দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতকে জাতীয় অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তিতে পরিণত করার লক্ষ্যে কাজ করছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ খাতের নীতি সংস্কার এবং সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে বিনিয়োগ সমন্বয় কমিটি। এ গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য অর্জনের জন্য সম্প্রতি কমিটি পর পর চারটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেছে।

আজ শনিবার (১ নভেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানান, বৈঠকগুলোতে কমিটির সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী সভাপতিত্ব করেন। সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ. মনসুর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানসহ সরকারি ও বেসরকারি খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

মূল আলোচনায় এসএমই খাতকে জাতীয় অর্থনীতির মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় উদ্যোক্তাদের সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিতের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়।
এর মধ্যে যেসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে বৈদেশিক অর্ডার থেকে প্রাপ্ত অর্থের ১০ শতাংশ বাধ্যতামূলকভাবে ব্যাংকে জমা রাখার নিয়ম নীতিমালা থেকে অপসারণের উদ্যোগ।

ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে বছরে ন্যূনতম ৩ হাজার মার্কিন ডলারের পৃথক বৈদেশিক মুদ্রা কোটা বরাদ্দের বিষয়ে এসএমই ফাউন্ডেশনের প্রস্তাব বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে প্রেরণ।
গত ৯ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এসএমই খাতের অর্থায়ন ও নীতি কার্যকারিতা মূল্যায়নে চারটি নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেগুলো হলো—

১. নতুন ফিনান্সিয়াল প্রোডাক্ট ডিজাইন : এসএমই ফাউন্ডেশন ও এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস ডিপার্টমেন্ট (এসএমইএসপিডি) যৌথভাবে একটি ওয়ার্কশপ আয়োজন করে এসএমই-বান্ধব চলতি মূলধন বা প্রোডাক্ট ডিজাইনের উদ্যোগ নেবে।

২. নীতিমালার কার্যকারিতা মূল্যায়ন : এসএমইএসপিডি কর্তৃক জারি করা এসএমই মাস্টার সার্কুলারের কার্যকারিতা যাচাইয়ে পারফরম্যান্স ইভ্যালুয়েশন করা হবে।

৩. ট্রেড লাইসেন্সবিহীন ঋণ : ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ প্রদান সম্ভব কিনা, তা যাচাইয়ে এসএমইএসপিডি একটি ফিজিবিলিটি স্টাডি করবে।

৪. সুদের হার পুনর্বিবেচনা : ব্যাংক রিফাইন্যান্সিং স্কিমকে আকর্ষণীয় করতে গ্রাহক পর্যায়ে সুদের হার সমন্বয় করা যায় কিনা, সে বিষয়ে এসএমইএসপিডি মতামত দেবে। 

এসএমই উদ্যোক্তাদের অভিজ্ঞতা ও চ্যালেঞ্জের ওপর ভিত্তি করে গত ২১ সেপ্টেম্বরের বৈঠকের ধারাবাহিকতায় আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পথে রয়েছে:
দ্রুত স্যাম্পল ক্লিয়ারেন্স : এনবিআরের মাধ্যমে স্যাম্পল ক্লিয়ারেন্স প্রক্রিয়া দ্রুত ও সহজ করতে মনিটরিং জোরদার করা হচ্ছে।

ডিজিটাল ওয়ালেট সুবিধা : ডিজিটাল ওয়ালেটের মাধ্যমে অর্থপ্রাপ্তিতে উদ্যোক্তাদের আইসিটি খাতের মতো সুবিধা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

দ্রুত পেমেন্ট নিশ্চিতকরণ : অনলাইন বিক্রির অর্থ দ্রুত উদ্যোক্তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা নিশ্চিত করতে এসএসএল কমার্স ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা।

রপ্তানি নীতিমালায় পরিবর্তন : অনলাইন মার্কেট প্লেসের মাধ্যমে রপ্তানিতে বিদ্যমান নীতিমালায় বিটুবি ও বিটুসি মডেল অন্তর্ভুক্ত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক পদক্ষেপ নিচ্ছে।

অর্থায়ন সীমা বৃদ্ধি : ব্যাংক গ্যারান্টি ছাড়াই আগাম পেমেন্টের সীমা ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার মার্কিন ডলার এবং ইআরকিউ অ্যাকাউন্ট থেকে পরিশোধের সীমা ২৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার মার্কিন ডলারে উন্নীত করা হয়েছে (সূত্র: এফএফ সার্কুলার নং ৩৫, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫)।

নতুন রপ্তানি লেনদেন অনুমোদন : স্থানীয় বীমা কোম্পানির কভারেজসহ ওপেন অ্যাকাউন্টে রপ্তানি লেনদেনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে (সূত্র: এফএফ সার্কুলার নং ৩৯, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫)।

এইচএস কোড জটিলতা নিরসন : ২৮ আগস্টের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এনবিআর এখন থেকে ৮ ডিজিটের মধ্যে প্রথম ৪ ডিজিট মিলে গেলে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ শুল্কায়ন সম্পন্ন করবে, যা এইচএস কোড সংক্রান্ত জটিলতা কমাবে।

এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, ‘সংস্কারের একটি মূল উদ্দেশ্য হলো অর্থনীতিতে গতিশীলতা বৃদ্ধি করা। সম্মিলিতভাবে, এসএমই খাত আমাদের অর্থনীতিতে বিশাল অবদানকারী, যদিও তাদের কণ্ঠ কিছু বড় ব্যবসার মতো জোরালোভাবে শোনা যায় না। আমাদের অবশ্যই এসএমই উদ্যোক্তাদের গতিশীলতা বাড়াতে সাহায্য করতে হবে এবং তাদের ব্যবসা প্রতিটি পর্যায়ে সহজতর করতে হবে, অর্থায়ন থেকে পেমেন্ট এবং লজিস্টিকস পর্যন্ত। সরকারকে এর সহায়ক হতে হবে, বাধা নয়।’

 আরপি/টিকে 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বিএনপি বলে আমরা জামায়াত, আবার জামায়াত বলে বিএনপি : হাসনাত আব্দুল্লাহ Nov 01, 2025
img
নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র চলছে : দুলু Nov 01, 2025
img
রাজধানীতে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ১৩ Nov 01, 2025
img
'টেস্ট ক্রিকেটে দেশকে নেতৃত্ব দেওয়া আমার জীবনের সবচেয়ে গর্বের বিষয়' Nov 01, 2025
img
সারাজীবন মায়ের আশ্রয়েই ছিলাম : কাজল Nov 01, 2025
img
সোহানের পায়ে অস্থায়ী প্লাস্টার, করানো হবে এমআরআই Nov 01, 2025
img
শিগগিরই আবার আগের ছন্দে ফিরবে বাংলাদেশ, আশা ফাহিমের Nov 01, 2025
img
২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ৬৫১ Nov 01, 2025
img
‘নেট জিরো কার্বন এমিশন’ ধনী দেশগুলোর নতুন অর্থনৈতিক প্রতারণা: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা Nov 01, 2025
img
বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে বোঝাপড়া হচ্ছে বলে শুনতে পাচ্ছি: পাটওয়ারী Nov 01, 2025
img
ভারতে মন্দিরে পূজা দিতে গিয়ে পদদলিত হয়ে প্রাণ গেল ১২ জনের Nov 01, 2025
img
কিংবদন্তি চিত্রনায়ক সালমান শাহ হত্যার দ্রুত বিচারের দাবি ভক্তদের Nov 01, 2025
img
ভেনিজুয়েলায় হামলার বিষয়ে ট্রাম্পের স্পষ্ট বার্তা Nov 01, 2025
img
নরসিংদীতে দেশি-বিদেশি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ৮ Nov 01, 2025
img
শাহরুখের সৌজন্য ও ব্যক্তিগত কথোপকথনে মুগ্ধ জন সিনা Nov 01, 2025
img
ইসলাম ছাড়া পৃথিবীর কোনো আইনে ন্যায়বিচার সম্ভব নয় : শফিকুল ইসলাম মাসুদ Nov 01, 2025
img
মেয়েদের মেসেজ দিয়ে ভুল করিনি: ঋজু বিশ্বাস Nov 01, 2025
img
৭০ বছর বয়সে সন্তানের বাবা হলেন হলিউড অভিনেতা কেলসি গ্রামার Nov 01, 2025
img
সরকারি কাজ মূল্যায়নে নতুন পদ্ধতি Nov 01, 2025
img
জনগণকে বোকা বানাবেন না, তাহেরকে মির্জা ফখরুল Nov 01, 2025