ফুটবলারদের কাছে গোল মানেই আনন্দের উপলক্ষ। বিশেষ করে ফরোয়ার্ডদের জন্য, কারণ গোল করাই তাদের প্রধান দায়িত্ব। তবে ব্যতিক্রম ছিলেন ওয়েইন রুনি। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের এই কিংবদন্তি জানালেন, এক মৌসুমে ৩৪ গোল করার পরও তিনি আনন্দ পাননি, বরং বিরক্তবোধ করতেন। কারণ তিনি শুধুমাত্র গোল নয়, খেলায় আরও বেশি জড়িত থাকতে চেয়েছিলেন।
মাত্র ১৬ বছর বয়সে এভারটনের জার্সিতে পেশাদার ফুটবলে অভিষেক হয়েছিল ওয়েইন রুনির। ইংল্যান্ডের এই সাবেক 'বিস্ময়বালক' এরপর দীর্ঘ ১৩ বছর কাটিয়েছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে। রেড ডেভিলদের হয়ে তিনি ৫৫৯ ম্যাচে ২৫৩ গোল করেছেন। ইংল্যান্ডের হয়ে ১২০ ম্যাচে ৫৩ গোল করা রুনিই দেশটির আউটফিল্ড খেলোয়াড়দের মধ্যে সর্বাধিক ম্যাচ খেলার রেকর্ডধারী। ক্যারিয়ারে সবসময়ই একটা বিতর্ক ছিল তাকে নিয়ে—তার 'সেরা পজিশন' আসলে কোথায়।
রুনি নিজে অবশ্য মনে করেন, তিনি সবচেয়ে কার্যকর ছিলেন স্ট্রাইকারের ঠিক পেছনে, অর্থাৎ ‘নাম্বার ১০’ ভূমিকায়। বিবিসি স্পোর্টে 'দ্য ওয়েইন রুনি শো'তে তিনি বলেন, 'আমি আসলে যে কোনো জায়গায় খেলতে উপভোগ করতাম, মিডফিল্ড হোক বা ফরোয়ার্ড লাইন। আমি সবচেয়ে ভালো খেলতাম যখন স্বাধীনভাবে খেলতে পারতাম। কখনও বাম দিকে, কখনও ডান দিকে, কখনও মাঝমাঠের একটু পেছনে উঠে যেতাম। মাঠে থেকে খেলা গড়ে তোলাই আমার পছন্দের ছিল। যদি একটা জায়গা বেছে নিতে হয়, তাহলে সেটা নাম্বার ১০।'
রুনি আরও বলেন, 'অনেক সময় আমাকে সেটা করতে দেওয়া হতো না। ম্যানেজার চিৎকার করতেন যেন আমি আরও সামনে যাই। কিন্তু আমি অনেক সময় খেলার ছন্দ বুঝতাম, আর আমার মনে হতো এই মুহূর্তে খেলা এইভাবে চালানো দরকার।'
বহুমুখী খেলোয়াড়ি দক্ষতার কারণে রুনিকে কখনও স্ট্রাইকার, কখনও নাম্বার ১০, আবার কখনও মিডফিল্ডার হিসেবেও ব্যবহার করা হয়েছে। ২০০৯ সালে তাকে নাম্বার ৯ হিসেবে খেলানো হয় এবং সে বছর তিনি সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে করেন ৩৪ গোল, যার মধ্যে ২৬টি প্রিমিয়ার লিগে এবং পাঁচটি চ্যাম্পিয়নস লিগে।
দুই বছর পর, ২০১১ সালে, তিনি আবারও স্ট্রাইকার হিসেবে খেলেন এবং সেই মৌসুমেও ৩৪ গোল করেন—প্রিমিয়ার লিগে ২৭টি এবং বাকিগুলো চ্যাম্পিয়নস লিগ ও ইউরোপা লিগে।
বেশিরভাগ ফুটবলারের কাছে এই পরিসংখ্যান স্বপ্নের মতো হলেও, রুনির কাছে তা যথেষ্ট ছিল না। তিনি বলেন, 'দুই মৌসুমে আমি নাম্বার ৯ হিসেবে খেলেছি এবং ৩৪ গোল করে করেছি, কিন্তু আমি বিরক্ত ছিলাম। আমি মাঠ থেকে নামতাম, গোল করতাম, দল জিতত, কিন্তু আমার ভালো লাগত না। আমি খেলার সঙ্গে আরও বেশি যুক্ত থাকতে চেয়েছিলাম। আমি ফুটবল খেলতে ভালোবাসতাম, শুধু গোল করতে নয়। হ্যাঁ, আমি গোল করতে ভালোবাসি, কিন্তু আমি চাই বল পায়ে রেখে খেলাটার অংশ হতে।'
প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকর আক্রমণভাগগুলোর কয়েকটির অংশ ছিলেন রুনি। জুটি বেঁধেছিলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর সঙ্গেও। তবে যখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, কোন ফরোয়ার্ডের সঙ্গে খেলা সবচেয়ে বেশি উপভোগ করেছেন, উত্তরটা ছিল স্পষ্ট , কার্লোস তেভেজ।
রুনি বলেন, 'তেভেজ, আমি কার্লোসের সঙ্গে খেলতে খুব উপভোগ করতাম। আমি আসলে সবার সঙ্গেই খেলতে পছন্দ করতাম, কিন্তু কার্লোসের সঙ্গে একটা বিশেষ বোঝাপড়া ছিল। তখন পত্রিকাগুলো লিখছিল—আমরা নাকি খুবই একরকম, একসঙ্গে খেলতে পারব না। তাই আমরা নিজেদের প্রমাণ করতে চেয়েছিলাম। আমরা দুজনেই আক্রমণাত্মক, পরিশ্রমী, ডিফেন্সে সাহায্য করতাম, আবার একে অন্যের সঙ্গে পজিশন বদলাতাম—কখনও আমি নাম্বার ৯, কখনও সে। ও ছিল আমার প্রিয় সঙ্গী মাঠে।'
টিএম/টিএ