সিলেটে উন্নয়ন বৈষম্যের প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে পুরো নগর। উন্নয়ন বৈষম্যের প্রতিবাদে এবার ধর্মঘট ও গণঅবস্থান কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
শনিবার (১ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় নগরীতে মশাল মিছিল পরবর্তী সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এ ঘোষণা দেন।
এর আগে হযরত শাহজালাল (রহ.) দরগাহ এলাকা থেকে মশাল মিছিল শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়।
মশাল মিছিল শেষে সমাবেশে আরিফুল হক চৌধুরী ঘোষণা দেন— আগামীকাল রোববার বেলা ১১টা থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত নগরীতে ধর্মঘট চলবে। একইসঙ্গে কোর্ট পয়েন্ট থেকে সুরমা মার্কেট পয়েন্ট পর্যন্ত গণঅবস্থান কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানান তিনি।
এর আগে বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) রাতে নগরীর কুমারপাড়াস্থ নিজ বাসভবনে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে তিনি এই কর্মসূচির প্রাথমিক ঘোষণা দেন। সিলেট অঞ্চলের ন্যায্য দাবি আদায়ে ‘সিলেট আন্দোলন’ নামে একটি সার্বজনীন প্ল্যাটফর্ম গঠন করা হয়েছে। এতে বিএনপি নেতাকর্মীর পাশাপাশি সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ব্যবসায়ী, শিক্ষক, সাংবাদিক, ধর্মীয় ও পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরাও যুক্ত হয়েছেন।
সভায় বক্তারা অভিযোগ করেন, উন্নয়নের ক্ষেত্রে সিলেট সবসময়ই বঞ্চিত। গত ১২ অক্টোবর কোর্ট পয়েন্টের সমাবেশ থেকে ১৫ দিনের আল্টিমেটাম দেয়া হলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। সে কারণেই এবার গণঅবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
সমাবেশে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘সিলেটবাসীর ন্যায্য দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না।’
তিনি আরও আহ্বান জানান, ইমাম, পুরোহিত, গির্জা ও প্যাগোডার দায়িত্বশীলরা যেন ধর্মীয় উপাসনালয়ে সিলেটের উন্নয়ন বঞ্চনার বিষয়টি তুলে ধরেন। আরিফুল হক জানান, সম্প্রতি সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা এবং রেল উপদেষ্টা মোহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সিলেটের সড়ক ও রেলপথের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছেন।
উপদেষ্টারা আশ্বাস দিয়েছেন, সিলেটের জন্য ১০টি নতুন রেলবগি বরাদ্দ দেয়া হবে। তবে এখনও টিকিট সংকট ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে অগ্রগতি হয়নি। বিমান ভাড়াও সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে।
তিনি বলেন, ‘স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন বরাদ্দেও সিলেট পিছিয়ে আছে। ২০২১ সালে সিলেটের সড়ক উন্নয়ন ও সংস্কারের জন্য ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হলেও সেটি এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। স্থানীয় সরকার সচিব নতুন করে প্রকল্পের ডিপিপি তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন, যা হতাশাজনক বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ ছাড়া বাদাঘাটে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের কাজেও কোনো অগ্রগতি নেই উল্লেখ করে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এভাবে চলতে থাকলে রমজান মাসে সিলেটে তীব্র পানির সংকট দেখা দিতে পারে। উন্নয়ন বৈষম্যের অবসান না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’