যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের চাপের মুখে পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি বন্ধ করবে না ইরান। সেই সঙ্গে নিজেদের ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির প্রকল্প নিয়েও যুক্তরাষ্ট্র কিংবা তার কোনো মিত্রের সঙ্গে আলোচনা করার ইচ্ছে কিংবা পরিকল্পনা তেহরানের নেই।
শনিবার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৈয়দ আব্বাস আরাগচি। সেখানে তিনি নিশ্চিত করেছেন এসব তথ্য।
আলজাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, “আমরা (যুক্তরাষ্ট্র কিংবা তার কোনো মিত্রের সঙ্গে) আমাদের ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্প নিয়ে কখনও আলোচনা করব না। আমাদের পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচিও বন্ধ হবে না। যুদ্ধ করে তারা যা অর্জন করতে পারেনি, রাজনীতির মধ্যে দিয়েও তা তারা পাবে না। ওয়াশিংটনের সঙ্গে সরাসরি সংলাপের কোনো ইচ্ছে আমাদের নেই। তবে পরোক্ষ আলোচনার মাধ্যমে (যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে) একটি চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব।”
কোন ইস্যুতে ওয়াশিংটনের সঙ্গে চুক্তি হতে পারে- এমন প্রশ্নের উত্তরে আরাগচি বলেন, “আমাদের পরমাণু প্রকল্প নিয়ে যে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে, তা দূর করা প্রয়োজন। আমরা এই নিশ্চয়তা দিতে চাই যে আমাদের পরমাণু প্রকল্পের উদ্দেশ্য শান্তিপূর্ণ। হয়তো এর মধ্যেই একটি সমঝোতা চুক্তি আমরা করে ফেলতে পারতাম, কিন্তু ওয়াশিংটন আমাদের সামনে যেসব শর্ত রেখেছে— সেগুলো এককথায় অগ্রহণযোগ্য এবং অসম্ভব।”
“আরেকটি ব্যাপার আমরা পরিষ্কার করতে চাই যে আমরা সবক্ষেত্রে এখন সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। ইসরায়েল যদি ফের হামলা করে, তাহলে আরও একবার পরাজিত হবে। আমরা পূর্ববর্তী সংঘাতগুলো থেকে শিক্ষা নিয়েছি এবং ইসরায়েল যদি কোনো প্রকার আগ্রাসী পদক্ষেপ নেয়, তাহলে তার ফলাফল হবে ভয়াবহ।”
প্রসঙ্গত, গত ৬ জুন জাতিসংঘের পরমাণু প্রকল্প পর্যবেক্ষণ সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক অ্যানার্জি এজেন্সি (আইএইএ)-এর প্রধান রাফায়েল গ্রসির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ইরানের কাছে বর্তমানে ৬০ শতাংশ সমৃদ্ধ বা বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম আছে ৪০০ কেজি। এই এই শুদ্ধতার পরিমাণ ৯০ শতাংশে উন্নীত করা যায়, তাহলে অনায়াসেই এই ইউরেনিয়াম দিয়ে বেশ কয়েকটি পরমাণু অস্ত্র তৈরি করা সম্ভব।
গত ১০ জুন এক সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানিয়েছিলেন রাফায়েল, এই সাক্ষাৎকার প্রচারের দ্বিতীয়দিন অর্থাৎ ১২ জুন দিবাগত রাতে ইরানের পরমাণু প্রকল্প সংশ্লিষ্ট স্থাপনা, পরমাণু বিজ্ঞানী ও প্রতিরক্ষা বাহিনীকে লক্ষ্য করে হামলা চালায় ইসরায়েল।
১২ দিন ধরে সংঘাত চলার পর ২৪ জুন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি হয়। কিন্তু সংঘাতে ইরানের পরমাণু প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট স্থাপনাগুলোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও সেই ইউরেনিয়ামের কোনো ক্ষতি হয়নি। জাতিসংঘ জানিয়েছে, ইরানের ইউরেনিয়াম অক্ষত আছে।
পরমাণু প্রকল্প নিয়ে তেহরানের অনড় অবস্থানের কারণে গতমাসে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের দেশগুলোর জোট ইইউ। তবে এতে ইরানে ক্ষমতাসীন ইসলামপন্থি সরকারে মধ্যে কোনো বিচলিত মনোভাব এখনও দৃশ্যমান হয়নি।
কেএন/টিকে