বিশ্বজুড়ে গাড়ি উৎপাদনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অটোমোটিভ কম্পিউটার চিপের ওপর আরোপিত রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে যাচ্ছে চীন।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে সম্পাদিত নতুন বাণিজ্য চুক্তির অংশ হিসেবেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস।
এই চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিন রফতানি বিরল ধাতু (রেয়ার আর্থ মিনারেল) সরবরাহ এবং ফেন্টানিল তৈরির উপকরণ সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি বিষয়েও সমঝোতা হয়েছে।
দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে বৈঠকের পর যুক্তরাষ্ট্র–চীন বাণিজ্যযুদ্ধের উত্তেজনা কমে এসেছে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর ট্রাম্প চীনা পণ্যে শুল্ক আরোপ করেন, যার পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় চীনও শুল্ক আরোপ করে—ফলে বৈশ্বিক ব্যবসায় অনিশ্চয়তা দেখা দেয়।
ওয়াশিংটনে চীনা দূতাবাসের এক মুখপাত্র বিবিসিকে বলেন, 'যেসব চুক্তি হয়েছে তার বিস্তারিত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ শেয়ার করেছে।'
রোববার (২ নভেম্বর) সিএনএনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মার্কিন ট্রেজারি সচিব স্কট বেসেন্ট বলেন, 'আমরা চীন থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চাই না। তবে তারা নিজেদেরকে একজন বিশ্বস্ত অংশীদার হিসেবে প্রমাণ করেছে।'
বৈঠকের পর ট্রাম্প যে বিবৃতিগুলো দিয়েছিলেন, সেই একই তথ্য শনিবার (১ নভেম্বর) প্রকাশিত ফ্যাক্টশিটেও উঠে আসে। ট্রাম্প বৈঠকটিকে 'অসাধারণ' বলে উল্লেখ করেন। বেইজিংও জানায়, তারা 'গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য ইস্যু' সমাধানে ঐকমত্যে পৌঁছেছে।
চুক্তিতে সমাধান হওয়া বড় বিষয়গুলোর একটি ছিল অটোমোটিভ কম্পিউটার চিপ রপ্তানিতে। নেক্সপেরিয়ার চিপ সরবরাহ ব্যাহত হলে বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইনে ঝুঁকি তৈরি হতে পারে—এ নিয়ে উদ্বেগ ছিল।
নেক্সপেরিয়া চীনের মালিকানাধীন হলেও কোম্পানির সদর দফতর নেদারল্যান্ডসে। ইউরোপে তৈরি নেক্সপেরিয়ার প্রায় ৭০% চিপ চীনে পাঠানো হয়, সেখানে প্রক্রিয়াজাত হয়ে তা আবার বিভিন্ন দেশে রপ্তানিতে করা হয়।
ফ্যাক্টশিটে বলা হয়েছে, নেক্সপেরিয়ার চীনের কারখানাগুলো থেকে উৎপাদিত 'গুরুত্বপূর্ণ লিগ্যাসি চিপ' যেন বিশ্ববাজারে আবার অবাধে প্রবাহিত হতে পারে, সে জন্য চীন 'উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে'।
তবে, গত শনিবার (১ নভেম্বর) চীন জানিয়েছিল, তারা নিষেধাজ্ঞা থেকে কিছু কোম্পানিকে ছাড় দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে।
গত মাসে ভলভো কারস, ভক্সওয়াগনসহ বেশ কয়েকটি গাড়ি নির্মাতা সতর্ক করে বলেছিল, চিপ সংকটের কারণে তাদের কারখানায় সাময়িক উৎপাদন-বিরতি ঘটতে পারে।
জাগুয়ার ল্যান্ড রোভারও জানিয়েছিল, চিপের সংকট তাদের ব্যবসার জন্য হুমকি তৈরি করছে।
আরেকটি বড় ইস্যুতে, চীন গত মাসে বিরল ধাতু রফতানিতে যে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছিল—যা গাড়ি, বিমান ও অস্ত্র তৈরি করতে অপরিহার্য—তা এক বছরের জন্য স্থগিত রাখবে।
ফেন্টানিলের আমদানি নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্র যে শুল্ক আরোপ করেছিল তাও কমানো হবে বলে জানায় হোয়াইট হাউস। চীন ফেন্টানিল–সংক্রান্ত সমস্যায় 'গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা' নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
ফেন্টানিল একটি সিন্থেটিক ড্রাগ, যা বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান থেকে তৈরি হয়। এটি যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসায় ব্যবহারের অনুমোদন থাকলেও শক্তিশালী ও অতি-নেশাজনিত হওয়ায় এটি এখন দেশটির ওপিওয়েড–সংক্রান্ত মৃত্যুতে প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এর উৎপাদনে ব্যবহৃত বেশিরভাগ রাসায়নিক উপাদান চীন থেকে আসে।
সয়াবিন রফতানির ক্ষেত্রে চীন প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে ২০২৫ সালের শেষ দুই মাসে তারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১২ মিলিয়ন টন সয়াবিন কিনবে। এরপর টানা তিন বছর প্রতি বছর ২৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন করে সয়াবিন কিনবে—যা পূর্বের স্বাভাবিক মাত্রা।
এ বছর শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিন কেনা বন্ধ করে দেয়ায় মার্কিন কৃষকরা তাদের সবচেয়ে বড় রফতানি বাজার হারান। জবাবে ট্রাম্প তার প্রথম প্রেসিডেন্সির সময়কার কৃষক বেইলআউট কর্মসূচি আবার চালু করেন।
সূত্র: বিবিসি নিউজ।
আরপি/টিএ