ক্যাফেইন বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় উদ্দীপক। কফি, চা, চকোলেট, সোডা বা এনার্জি ড্রিংকসের মাধ্যমে বেশিরভাগ প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিদিন এটি গ্রহণ করেন।ক্যাফেইন শরীরকে চাঙ্গা করে তোলে, কিন্তু কতটা খাওয়া ঠিক? চলুন জেনে নেওয়া যাক এর উপকারিতা, ঝুঁকি ও সঠিক পরিমাণ।
ক্যাফেইন কিভাবে কাজ করে?
ক্যাফেইন মূলত একটি প্রাকৃতিক উদ্দীপক যা কফি, চা, চকোলেট ও কিছু উদ্ভিদে থাকে।
এটি অ্যাডেনোসিন নামে এক রাসায়নিককে ব্লক করে, যা সাধারণত ক্লান্তি সৃষ্টি করে। ফলে আমরা সতর্ক, মনোযোগী ও সজাগ বোধ করি।
ক্যাফেইনের প্রধান উৎস - কফি ও চা পাতা, কোকো বা চকোলেট, কোলা বাদাম, ইয়েরবা মাতে, গুয়ারানা বেরি,এনার্জি ড্রিংক ও সোডা।
ক্যাফেইনের উপকারিতা
১। হার্ট ও রক্তসঞ্চালন ভালো রাখে
ক্যাফেইন হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে, ফলে অক্সিজেন ও পুষ্টি শরীরজুড়ে পৌঁছাতে সাহায্য করে।
২। শ্বাস-প্রশ্বাসে সহায়তা করে
এটি ফুসফুসের শ্বাসনালী শিথিল করে, ফলে সহজে শ্বাস নেওয়া যায়। হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টে এটি উপকারী হতে পারে।
৩। ব্যায়ামে শক্তি বাড়ায়
ক্যাফেইন ক্লান্তি কমায়, শক্তি বাড়ায় এবং শরীরকে চর্বি থেকে শক্তি তৈরি করতে সাহায্য করে। ফলে সহনশীলতা ও কর্মক্ষমতা বাড়ে।
৪। মস্তিষ্কের জন্য ভালো
পরিমিত ক্যাফেইন স্মৃতি ও মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে এবং আলঝেইমার বা পার্কিনসনের ঝুঁকি কমাতে পারে।
৫। মেজাজ ভালো রাখে
এক কাপ কফি মন ভালো করে, প্রেরণা বাড়ায় ও চাপ কমাতে সাহায্য করে।
কতটা ক্যাফেইন নিরাপদ?
এফডিএ বলছে, সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কদের দিনে ৪০০ মিলিগ্রামের মধ্যে ক্যাফেইন গ্রহণ করা নিরাপদ।
উদাহরণ:
১ কাপ কফি (৮ আউন্স): ৮০–২০০ মি.গ্রা.
কালো চা: ৫০–৮০ মি.গ্রা.
সবুজ চা: ৩০–৫০ মি.গ্রা.
এনার্জি ড্রিংক (১২–১৬ আউন্স): ১০০–৩০০ মি.গ্রা.
ডিক্যাফ কফি: ২–১৫ মি.গ্রা.
অতিরিক্ত ক্যাফেইনের ঝুঁকি - ঘুমের সমস্যা বা অনিদ্রা, অস্থিরতা ও উদ্বেগ, হৃদস্পন্দন ও রক্তচাপ বৃদ্ধি, পেট খারাপ বা হজমে সমস্যা, কিছু ওষুধের সঙ্গে বিরূপ প্রতিক্রিয়া, নির্ভরতা (হঠাৎ বন্ধ করলে মাথাব্যথা বা ক্লান্তি হতে পারে); বিশেষ করে এনার্জি ড্রিংকসে থাকা অতিরিক্ত চিনি ও ক্যাফেইন একসঙ্গে বেশি ঝুঁকি তৈরি করে, বিশেষত শিশু ও কিশোরদের জন্য।
কারা সাবধান হবেন
গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী নারী,
হৃদরোগ বা উচ্চ রক্তচাপের রোগী,
যাদের উদ্বেগ বা ঘুমের সমস্যা আছে,
যারা কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ সেবন করেন,
শিশু ও কিশোর-কিশোরী,
গর্ভবতীদের জন্য দিনে ২০০–৩০০ মি.গ্রা. এর বেশি না খাওয়াই ভালো।
ক্যাফেইন কমানোর সহজ উপায়
প্রাকৃতিক উৎস বেছে নিন: কফি বা চা, এনার্জি ড্রিংকের বদলে।
ডিক্যাফ বা হাফ-ক্যাফ পান করুন।
সকালের পর থেকে ক্যাফেইন এড়িয়ে চলুন (বিশেষ করে দুপুরের পর)।
ধীরে ধীরে কমান, একসাথে বন্ধ না করে।
পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
শরীরের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করুন, হৃদস্পন্দন বা ঘুমের সমস্যা দেখলে কমান।
পরিমিত পরিমাণে ক্যাফেইন বেশিরভাগ প্রাপ্তবয়স্কের জন্য নিরাপদ ও উপকারী হতে পারে। তবে নিজের শরীরের সীমা বুঝে ভারসাম্য বজায় রাখাটাই সবচেয়ে জরুরি।
এমকে/এসএন