জামায়াত নেতা তাহেরের হুঁশিয়ারি

‘নো হাংকি পাংকি’ গণভোট লাগবেই, সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল বাঁকা হবে

সোজা আঙুলে যদি ঘি না উঠে তাহলে আঙুল বাঁকা করা হবে তবুও ঘি লাগবেই বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের।

তিনি বলেন, আমরা আপনাদের চালাকি বুঝি। আপনাদের চালাকির ভিত্তিতেই দাবি আদায়ের পন্থাও আমরা আবিষ্কার করবো। আমরা এখানো নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় আন্দোলনে আছি। সোজা আঙুলে যদি ঘি না উঠে তাহলে আঙুল বাঁকা করবো। কিন্তু ঘি আমাদের লাগবেই। সুতরাং যা বোঝাতে চাই বুঝে নিন। নো হাংকি পাংকি। জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট লাগবেই।

বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) পৌনে ১২ টায় পল্টন মোড়ে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোর নেতাদের উপস্থিতিতে এসব কথা বলেন তিনি।

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারি, নভেম্বরে গণভোটসহ ৫ দফা দাবিতে বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টার নিকট স্মারক লিপি প্রদানে লক্ষ্যে মতিঝিল শাপলা চত্বর থেকে পথযাত্রা নিয়ে পল্টন মোড় এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় যমুনার অভিমুখে যাত্রা শুরু করে জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য আটটি রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ।

সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, আমরা আশা করেছিলাম, জুলাই আগস্টের রক্তই হবে শেষ রক্তদান। এইসময়ের শাহাদাতই হবে শেষ শাহাদাত। আমরা আশা করেছিলাম, জুলাই বিপ্লবের পরে দাবি আদায়ে আর রাজপথে নেমে আসতে হবে না। কিন্তু আমরা আশাহত হয়েছি। অল্প সময়ের ব্যবধানেই আমাদের রাজপথে আসতে হয়েছে।

তাহের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, আমরা রাজপথে এসেছি, প্রয়োজনে রক্ত দেব, প্রয়োজনে জীবন দেব, কিন্তু আমরা জুলাই বিপ্লবকে ব্যর্থ হতে দেব না। ষড়যন্ত্রকারীদের পরাজয় হবে।

জুলাই সনদ বাংলার মাটিতে হুবহু সেটাই আইনি ভিত্তি দিতে সংবিধানে অন্তর্ভূক্ত করা হবে, ইনশাআল্লাহ।

তিনি বলেন, আপনারা চালাকি শুরু করেছেন। এই বলবো, সেই বলবো বলে জাতীয় নির্বাচনের সময় ফেব্রুয়ারির কাছাকাছি চলে আসছেন। আমরা আপনাদের চালাকি বুঝি। আপনাদের চালাকির ভিত্তিতেই দাবি আদায়ের পন্থাও আবিষ্কার করা হবে।

তিনি বলেন, আমরা এখানো নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় আন্দোলনে আছি। সোজা আঙুলে যদি ঘি না উঠে তাহলে আঙুল বাঁকা করবো। কিন্তু ঘি আমাদের লাগবেই।

তিনি বলেন, দ্বিতীয়ত- কথা, সময়ক্ষেপণ! এই চালাকি আপনাদের বিপদে ফেলবে। গণভোট জাতীয় নির্বাচনের আগেই হতে হবে। জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরও গণভোট আয়োজনে কোনো বাঁধা নাই। সুতরাং সময় আছে। আরও ১৫ দিন সময়ক্ষেপণ করবেন? করেন, গণভোটের সময় থাকবে। সুতরাং যা বোঝাতে চাই বুঝে নিন। নো হাংকি পাংকি।

তাহের বলেন, শুধুই বলেন- গণভোট আয়োজনে নাকি অনেক টাকা খরচা হবে। একদিনে যে পরিমাণ চাঁদাবাজি হয় তা দিয়ে একটা গণভোট আয়োজন করা যায়। প্রত্যেকদিন একটা করে গণভোট আয়োজন করলেও সমস্যা হবে না। তাই সরকারকে বলবো, আর যারা চাঁদাবাজিতে জড়িত তাদের বলবো, এসব বন্ধ করেন, তাহলে গণভোট আয়োজনে টাকার অভাব হবে না।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির বলেন, আমরা শান্তি চাই, সমাধান চাই, আমরা জাতীয় নির্বাচন চাই। আমরা জুলাই সনদ বাস্তবায়ন চাই। যদি বুঝতে কষ্ট হয়, তাহলে আসেন বসি আলোচনা করি। সরকারও তো আলোচনা করতে বলেছে।

সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তাহের বলেন, আলোচনার চাপটা তো সরকারকেই নিতে হবে। আলোচনার জন্য একটা রেফারির ভূমিকার দরকার আছে। সেই ভূমিকাটা সরকারকে নিতে হবে।



তাহের বলেন, জামায়াতে ইসলামী ইতোমধ্যে আলোচনার জন্য দুই সদস্যের কমিটি গঠন করেছে। আপনারাও কমিটি ঘোষণা করুন। সময়ক্ষেপণের পলিসি বাদ দিয়ে আলোচনার পলিসি ঠিক করুন।

তিনি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাননি বলে অভিযোগ করে বলেন, চেষ্টা করেছি, ফোনে পাই নাই। আজকের কর্মসূচির পর আমি আবারো চেষ্টা করবো। ওনাকে আমরা ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ করবো, বিএনপিও যেন আলোচনার পরিবেশ তৈরি করেন। আর সময়ক্ষেপণ নয়, আর হিংসে, রাজনৈতিক বিদ্বেষ নয়, অন্যের বিরুদ্ধে লড়াই নয়। জাতি মনে করে শুধু জুলাই সনদ নয়, সব ঠিক করা সম্ভব রাজনৈতিক সমঝোতায়।

জাতির কাছে ওয়াদা করতে হবে, শুধু জুলাই সনদ নয়, জাতীয় নির্বাচন কিভাবে হবে? আমার দল কোথাও ভোটকেন্দ্র দখল করবে না, যদি করে তাহলে সেই আসনের ভোট বাতিল হবে। সকল দলকে একথা বলতে হবে।

প্রধান উপদেষ্টাকে বলতে হবে, যেখানে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না, সেরকম যদি একাধিক আসন হয় তাহলে নির্বাচনকে ভন্ডুল করে দিবো। নতুন নির্বাচন হবে। এইকথা জাতিকে বলতে হবে।

কারণ ৫৪ বছরে সঠিক কোনো নির্বাচন আমরা পাই নাই। জাতি আর কোনো প্রহসনের নির্বাচনকে আর মেনে নেবে না। সুতরাং নির্বাচন যদি সুষ্ঠু না হয় তাহলে দেশ আবার অন্ধকারে যাবে, শেখ হাসিনার যুগে চলে যাবে।

প্রশাসন একটি দলের আজ্ঞাবহ হয়ে নির্বাচনকে নানাভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। প্রভাবিত করা নির্বাচন জনগণ মেনে নিবে না। প্রধান উপদেষ্টা ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারের প্রতি নির্বাচনী লেভেল ফিল্ড নিশ্চিত করার দাবি তিনি।

তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, আজকে স্মারকলিপি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে দেবার পরও যদি দাবি মানা না হয়, অবস্থার উন্নতি না হয় তাহলে আগামী ১১ তারিখ চলো চলো ঢাকা চলো কর্মসূচি। আগামী ১১ তারিখ হবে ঢাকা মহানগরী হবে জনতার নগরী, দাবি আদায়ের ১১ তারিখ। লড়াই হবে। লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাই বলে বক্তব্য শেষ করেন তিনি।

এসময় মঞ্চে যুগপৎ আন্দোলনে শরিকদলের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

আইকে/এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
জকসুর তফসিল ঘোষণা Nov 06, 2025
img
চতুর্থ টি২০-তে অজিদের হারিয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল ভারত! Nov 06, 2025
img
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রাণ গেল এক হাজতির Nov 06, 2025
img
কোনোভাবেই ভয় কাটছিল না আমার; নাজনীন নাহার নীহা Nov 06, 2025
img

সতর্ক করলো পুলিশ

দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের নাম ব্যবহার করে প্রতারণা Nov 06, 2025
img
হজযাত্রী পরিবহন করবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, পরিবহনে কোটা নির্ধারণ Nov 06, 2025
img
অনশনরত তারেকের পাশে দাঁড়িয়ে রিজভীর প্রতিক্রিয়া Nov 06, 2025
img
টেলিভিশনে আসছে তারকাবহুল সিনেমা ‘উৎসব’ Nov 06, 2025
img
‘জাতীয় লজিস্টিকস নীতি-২০২৫’ অনুমোদন Nov 06, 2025
img
এনসিপির মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু, মূল্য ১০ হাজার টাকা Nov 06, 2025
img
এডিস মশার লার্ভা তদারকিতে মাঠে নামছে ডিএসসিসি প্রশাসন Nov 06, 2025
img
বিএনপির মনোনয়ন স্থগিত আলোচনায় নুর ও রনি Nov 06, 2025
img
ছোট ছোট ভাই-বোনের রক্তের বিনিময়ে আজকে আমরা গণতন্ত্রের পথে হাঁটছি: শামা ওবায়েদ Nov 06, 2025
img
রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে আগুন, ফায়ার সার্ভিসের চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে Nov 06, 2025
img
নন-ইস্যু সামনে এনে নির্বাচন বিলম্বের চেষ্টা চলছে : খন্দকার মোশাররফ Nov 06, 2025
img
জাতিসংঘে আ. লীগের চিঠিতে কোনো কাজ হবে না: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা Nov 06, 2025
img
২০২৬ সালে সরকারি ছুটি বাড়ল Nov 06, 2025
img
না ফেরার দেশে ‘কেজিএফ’ অভিনেতা হরিশ Nov 06, 2025
img
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তাসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা Nov 06, 2025
img
বাড়ির বাগানে মাটি খুঁড়তে মিলল ৯ কোটি টাকার সোনা! Nov 06, 2025