জাপানের উত্তরাঞ্চলীয় আকিতা প্রিফেকচারের একটি পার্বত্য অঞ্চলে ভাল্লুকের আক্রমণ তীব্রভাবে বেড়ে যাওয়ায় তা মোকাবেলায় সৈন্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। দেশটিতে ভাল্লুকের হামলায় হতাহতের সংখ্যা বাড়তে থাকায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হলো।
পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অক্টোবর মাসের শেষ পর্যন্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত সাত মাসে (এপ্রিল থেকে) জাপানজুড়ে ভাল্লুকের হামলায় অন্তত ১২ জন নিহত এবং ১০০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
এই সামরিক পদক্ষেপ বুধবার (৫ই নভেম্বর) নেওয়া হয়। বাদামী ভাল্লুক এবং এশিয়ান কালো ভাল্লুকের সাথে প্রায় প্রতিদিনই মারাত্মক সংঘর্ষের খবর আসছে।
শীতকালীন ঘুমের আগে ভাল্লুকেরা খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। এদের স্কুল, ট্রেন স্টেশন, সুপারমার্কেট এবং এমনকি একটি উষ্ণ প্রস্রবণ রিসোর্টেও দেখা গেছে।
জাপানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও আকিতা প্রিফেকচারের মধ্যে বুধবার স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী, সৈন্যরা ভাল্লুকের ওপর সরাসরি গুলি চালাবে না। তাদের কাজ হবে খাবার দিয়ে বাক্স-ফাঁদ পাতা, স্থানীয় শিকারীদের পরিবহনে সহায়তা করা এবং মৃত ভাল্লুক অপসারণে সাহায্য করা।
এই অভিযানটি কাজুনো শহরের একটি জঙ্গল এলাকা থেকে শুরু হয়েছে, যেখানে সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ভাল্লুক দেখা ও আহতের খবর পাওয়া গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাপানের গ্রামীণ এলাকায় বার্ধক্য এবং জনসংখ্যা হ্রাস এই ক্রমবর্ধমান সমস্যার অন্যতম কারণ। ভাল্লুকের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় (আনুমানিক ৫৪,০০০-এর বেশি) তারা আবাসিক এলাকায় ঢুকে পড়ছে, কিন্তু বয়স্ক জনসংখ্যা অধ্যুষিত অঞ্চলে প্রাণী শিকার করার মতো প্রশিক্ষিত লোক কম।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভাল্লুক বর্তমানে বিপন্ন নয় এবং জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে এদের নিধন প্রয়োজন।
ডেপুটি চিফ ক্যাবিনেট সেক্রেটারি ফুমিটোশি সাতো সাংবাদিকদের বলেছেন, 'প্রতিদিন ভাল্লুক এই অঞ্চলের আবাসিক এলাকায় অনুপ্রবেশ করছে এবং এর প্রভাব বাড়ছে। ভাল্লুক সমস্যার প্রতিক্রিয়া একটি জরুরি বিষয়।'
আকিতা প্রিফেকচারের জনসংখ্যা প্রায় ৮৮০,০০০। স্থানীয় সরকারের তথ্যমতে, মে মাস থেকে এখানে ভাল্লুকের হামলায় কমপক্ষে চারজন নিহত এবং ৫০ জনেরও বেশি লোক আহত হয়েছে, যার বেশিরভাগ আক্রমণই আবাসিক এলাকায় ঘটেছে।
সপ্তাহান্তে ইউযাওয়া শহরে এক বয়স্ক মহিলা জঙ্গলে মাশরুম খুঁজতে গিয়ে ভাল্লুকের হামলায় মারা যান বলে ধারণা করা হচ্ছে। অক্টোবরের শেষে আকিতা শহরে এক বয়স্ক মহিলা খামারে কাজ করার সময় ভাল্লুকের মুখে পড়ে নিহত হন। মঙ্গলবার আকিতা শহরে একজন সংবাদপত্র বিলিকারী আক্রান্ত ও আহত হয়েছেন।
কাজুনো শহরে ফল বাগানের মালিক তাকাহিরো ইকেদা এনএইচকে টেলিভিশনকে বলেছেন, ভাল্লুক তার কাটার জন্য প্রস্তুত ২০০টিরও বেশি আপেল খেয়ে ফেলেছে। তিনি বলেন, 'আমার হৃদয় ভেঙে গেছে।'
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শিনজিরো কোইয়ুমি মঙ্গলবার বলেছেন, এই মিশনের লক্ষ্য মানুষের দৈনন্দিন জীবন সুরক্ষিত করা। তবে তিনি মনে করিয়ে দেন যে, সেনাদের প্রাথমিক মিশন জাতীয় প্রতিরক্ষা এবং তারা ভাল্লুক মোকাবেলায় সীমাহীন সমর্থন দিতে পারবে না।
সূত্র: আল জাজিরা
আরপি/টিএ