বিসিবি পরিচালক আসিফ আকবর গতকাল ফুটবল নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। এরপরই সামাজিক মাধ্যমে তীব্র সমালোচনা, নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় বইছে। আসিফের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে আজ বিসিবি সভাপতি বরাবর বাফুফে সভাপতি চিঠি দিয়েছে।
বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়ালের প্রেরিত বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আপনার মতো অভিজ্ঞ ও মর্যাদাপূর্ণ একজন ব্যক্তি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন যা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। আমি ৬ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ক্রিকেট কনফারেন্সে প্রদত্ত বক্তব্য সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই।
ক্রিকেট কনফারেন্স থেকে ফুটবল খেলাকে নিয়ে অত্যন্ত অবমাননাকর, অপমানজনক ও উদ্বেগজনক মন্তব্য করা হয়, যা শুধু ফুটবল নয়, পুরো ক্রীড়া সমাজের জন্যই হতাশাজনক। আমরা এই মন্তব্যের প্রতি তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং এই পত্রকে আমাদের আনুষ্ঠানিক আপত্তি হিসেবে বিবেচনা করার অনুরোধ জানাচ্ছি।
এমন মনোভাব প্রকাশ পাওয়া দুঃখজনক এবং উদ্বেগজনক। আমরা সবাই খেলাধুলাকে একটি ঐক্যের মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যা আমাদের জাতিকে একত্রিত করে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মাঝে গর্ব ও অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করে।’
এর আগে আজ দুপুরের পর বাংলাদেশ ফুটবল খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতি আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের অবস্থান ব্যক্ত করেছে। সাবেক জাতীয় ফুটবলার ও খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির সভাপতি ইকবাল হোসেন বলেন, ‘বিসিবির একজন সম্মানিত পরিচালক ফুটবল সম্পর্কে যে মন্তব্য করছে খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। পাশাপাশি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে বলব এই ব্যাপারে যেন অবিলম্বে পদক্ষেপ নেয়।’ অবশ্য এমন বক্তব্যের কিছুক্ষণের মধ্যেই বাফুফের চিঠির বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে।
ইকবালের পাশে ছিলেন জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম। তিনি বলেন,‘উনি যে মন্তব্য দিয়েছে, সেটা ফিরিয়ে নেয়া হোক। জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। ক্ষমা চাওয়ার আগ পর্যন্ত ফুটবলপ্রেমীরা তাকে মেনে নেবে না। ক্রিকেট ভদ্র লোকের খেলা হলেও তিনি ভদ্র ব্যবহার দেখাননি।’ জাতীয় দলের আরেক সাবেক ফুটবলার গোলাম গাউসও ছিলেন প্রতিবাদ জানানোর সময়। তিনি বলেন, ‘কে ভালো কে মন্দ এটা দর্শক যাচাই করবে। তার বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ ও প্রত্যাহার দাবি জানাই। ’
বিসিবির বর্তমান সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলের খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুই হয়েছিল ফুটবল দিয়ে। তিনি পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়া থেকে ফুটবল নিয়েই বেড়ে উঠেন। ভিক্টোরিয়া ক্লাবে স্ট্রাইকার হিসেবেও খেলেছেন। ব্যক্তিগত জীবনে অনেক ফুটবলার তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। এদের মধ্যে গাউস অন্যতম। গাউস বুলবুলকে নিয়ে কিছু না বললেও গতকাল বিসিবি সভাপতির আচরণে বেশ ব্যথিত হয়েছেন সাবেক অধিনায়ক মামুনুল, ‘বুলবুল ভাই একজন ভদ্র ও ভালো মানুষ হিসেবে আমরা জানি। উনি যখন বক্তব্য দিচ্ছিল তিনি হাসছিলেন এটা দুঃখজনক। উনার উচিত ছিল এটা স্টপ করানো। তিনিও নিজেকে ফুটবলার বলেন।’
সাবেক ফুটবলারদের সংগঠন সোনালী অতীত ক্লাব। এই ক্লাবের পক্ষ থেকেও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে আজ। প্রতিবাদ লিপিতে সংগঠনটি লিখেছে, ‘আপনার মন্তব্য শুধু দায়িত্বজ্ঞানহীন নয়, বাংলাদেশের এবং বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ফুটবলকে প্রকাশ্যে অবমাননা করেছে। আরও উল্লেখযোগ্য-আপনারই বোর্ডের প্রেসিডেন্ট অতীতে বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবল লিগের একজন সম্মানিত ফুটবলার ছিলেন।’
অবকাঠামো ব্যবহার ও সংকট নিয়ে মূলত তৃণমূল পর্যায়ে ফুটবল ও ক্রিকেটের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। দুই ফেডারেশনের মধ্যে আলোচনা করে সেটা সমন্বয়যোগ্য বলে মনে করেন সাবেক ফুটবলাররা।
টিএম/এসএন