সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি নেত্রী নিলোফার চৌধুরী মনি বলেছেন, ‘বর্তমান সরকার অভিজ্ঞতাহীন এবং তাদের কার্যক্রম অনেকটা এনজিও ধাঁচের। রাষ্ট্র পরিচালনার মূল দায়িত্ব পালনে সরকারের অক্ষমতাই আজ দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণ। অভিজ্ঞতা ও দায়িত্ববোধের ঘাটতি থাকায় সরকার বারবার নীতি ও সংস্কারে ব্যর্থ হচ্ছে।’
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে নিলোফার চৌধুরী মনি এসব কথা বলেন।
নিলোফার চৌধুরী মনি বলেন, ‘এই পৃথিবীতে সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকে তারা, যারা বয়সে ছোট এবং অভিজ্ঞতাহীন। কারণ তারা যেকোনো প্রশ্ন বা মন্তব্য করতে পারে, যার জবাব প্রায়ই দেওয়া সম্ভব হয় না। নতুন দল হওয়া বড় কথা নয়—যখন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদরা মিলে একটি দল গঠন করেন, সেটি ভিন্ন মাত্রা পায়। কিন্তু বর্তমানে যাদের রাজনৈতিক বা আন্দোলনের অভিজ্ঞতা সীমিত, তাদের দিয়ে রাষ্ট্র চালানো সম্ভব নয়।
তিনি আরো বলেন, ‘বিপ্লবী ও রাষ্ট্রনায়ক এক ব্যক্তি হলে শেখ মুজিব অনেক আগেই সফল হতেন। তাই সবার বক্তব্যকে একভাবে ধরা যায় না। এখনো রাজনৈতিক টানাপড়েন শেষ হয়নি।’
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নিলোফার চৌধুরী মনি বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম দীর্ঘ আন্দোলনের পর রাজনৈতিক নেতাদের কিছু শিক্ষা হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে তা দেখা যায়নি। আমি নিরপেক্ষভাবে বলছি, আমি যে দলকে সমর্থন করি তাদের অভিজ্ঞতা আছে—তবু রাষ্ট্র পরিচালনায় কিছু কাজ সহজ নয়।’
তিনি বলেন, ‘সংস্কার নিয়ে আলোচনায় বসার সময়ই বিএনপি জানিয়েছিল, এই প্রক্রিয়া অর্থহীন হয়ে পড়তে পারে। কারণ সব কিছু সবার সঙ্গে মিলবে—এমন নিশ্চয়তা কখনোই থাকে না। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সমঝোতার মানসিকতা থাকা জরুরি, কিন্তু সেই মানসিকতা অনেকের মধ্যেই তৈরি হয়নি।’
বিএনপির এই নেত্রী অভিযোগ করেন, “আলোচনার মাঝপথে যখন একটি দল হঠাৎ নতুন শর্ত বা প্রস্তাব নিয়ে আসে, তখনই স্পষ্ট হয় যে তারা প্রকৃতপক্ষে নির্বাচনকে ব্যাহত করতে বা নিজেদের স্বার্থে প্রভাবিত করতে চাইছে। বিএনপি এবং সমমনা দলগুলো বিভিন্নভাবে এসব বাধা বা ‘এম্বারগো’ দূর করার চেষ্টা করেছে। এসব ব্যর্থতার পরও বিএনপি শুধু একটি সুষ্ঠু নির্বাচন ও বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ রক্ষার স্বার্থে গণভোট প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণে রাজি হয়েছিল।”
নিলোফার মনি বলেন, ‘বিএনপি সব সময় সংস্কার ও গণতন্ত্রের পক্ষে থেকেছে। তারা চেয়েছিল একটি সুষ্ঠু নির্বাচন। কিন্তু সরকার যখন নিজেই পক্ষ হয়ে যায়, তখন আর ন্যায়বিচার আশা করা যায় না। সরকার একদিকে জুলাই সনদের যে কাগজে স্বাক্ষর নিল, অন্যদিকে দেখাইল কিন্তু আরেকটা। একটা বেচাকেনা করে আরেকটা দেখাইয়া দিল, এক ধরনের প্রতারণার আশ্রয় নিল।’
তিনি অভিযোগ করেন, ‘সরকার সংস্কারের দায় নিজে না নিয়ে তা রাজনীতিবিদদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। অথচ ৯ মাসেও সরকার সংস্কার কার্যকর করতে পারেনি। সরকারের অভিজ্ঞতার অভাবই আজকের রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার মূল কারণ।’
তিনি বলেন, ‘অভিজ্ঞতার একটা দাম আছে—সব কিছু কেনাবেচা করা যায়, কিন্তু অভিজ্ঞতা কেনাবেচা করা যায় না। বিএনপির অভিজ্ঞতা আছে, তাই তারা জানে রাষ্ট্র পরিচালনা কিভাবে করতে হয়। কিন্তু এই সরকারের অভিজ্ঞতা নেই। তারা আসলে এক ধরনের এনজিও সরকার, আর এনজিও ও প্রকৃত সরকার পরিচালনার মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য রয়েছে।’