১৪ দলকে সংলাপে চায় না গণঅধিকার পরিষদ

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দ্বাদশ নির্বাচনে অংশ নেওয়াদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও নির্বাচন করার সুযোগ চায় না গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি)। পাশাপাশি জাতীয় পার্টিসহ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে থাকা ১৪ দলকে নির্বাচন কমিশনের সংলাপে না ডাকার দাবি জানিয়েছে দলটি।

বুধবার (১২ নভেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে দলটির সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল দেখা করে।

সিইসির সঙ্গে দেখা করার পর রাশেদ খাঁন সাংবাদিকদের বলেন, নিবন্ধনের দোহাই দিয়ে জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলকে নির্বাচন কমিশনের সংলাপে ডাকা উচিত হবে না।

বিএনপি বা জামায়াত চাইলে তাদের সঙ্গে জোট করতে চায় জাতীয় পার্টি। বিষয়টি নজরে আনলে তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি মরা দল। জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা আলোচনায় থাকতে এসব কথা বলছে। গণমাধ্যমকে জাতীয় পার্টির সংবাদ প্রচার না করার অনুরোধ করেন তিনি।

ইসিতে জমা দেওয়া লিখিত আবেদনে গণঅধিকার পরিষদ জানায়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে। কিন্তু ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পরও ফ্যাসিবাদের আস্ফালন বন্ধ হয়নি। গত এক মাস ধরে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসররা নির্বাচন বানচালের গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। সারা দেশের বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ, বাসে আগুন, পুড়িয়ে মানুষ হত্যা, ককটেল বিস্ফোরণ ইত্যাদি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড শুরু করেছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। গুপ্তহত্যা, প্রার্থীদের গণসংযোগে বোমা বিস্ফোরণসহ নানা অঘটন ঘটানোরও পাঁয়তারা করছে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী শক্তি ও তার দোসররা।

সেখানে উল্লেখ করা হয়, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে নির্বাচন বানচালের চক্রান্ত তত বাড়বে। এরই অংশ হিসেবে আধিপত্যবাদী শক্তি ও শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ২০২৪ সালের ডামি-স্বতন্ত্র এমপি কিংবা আওয়ামী লীগের পদপদবিতে থাকা নেতা, দোসর, অর্থ জোগানদাতা এবং ২০২৪ এর ডামি নির্বাচনে সরাসরি সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার চেষ্টা করছে। তাদের উদ্দেশ্য নির্বাচন করা নয়, বরং নির্বাচনের আগে ও নির্বাচনের দিন অরাজকতা সৃষ্টি করে নির্বাচন বানচালের মাধ্যমে আরেকটি ১/১১ সৃষ্টি করে আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনা।

আবেদনে আরও বলা হয়, যেহেতু আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ হয়েছে, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা, নির্বাচন উপলক্ষ্যে গণসংযোগ করা ইত্যাদিও সাংগঠনিক কার্যক্রমের অংশ। সুতরাং গণহত্যার বিচার শেষ হওয়ার আগে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও কোনো ধরনের নির্বাচনী কার্যক্রমে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ করার সুযোগ নেই। বরং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করার সুযোগ পেলে নির্বাচন কমিশনের হাত ধরেই আওয়ামী লীগ পুনর্বাসিত ও পালিয়ে থাকা আওয়ামী সন্ত্রাসীরা নির্বাচনী প্রচারণার নামে রাজপথে সক্রিয় হয়ে অরাজকতা সৃষ্টি করার সুযোগ পাবে। এক্ষেত্রে জনরোষে থাকা নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতারা জনগণের প্রতিরোধের মুখে পড়লে নির্বাচনের পরিবেশও অশান্ত হয়ে উঠবে। যার দায় নির্বাচন কমিশনের ওপর বর্তাবে।

এ ছাড়া বিগত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগের নেতারা লুটপাট করে অর্থ উপার্জন করেছে, তাদের অবৈধ টাকার কোনো অভাব নেই। সুতরাং পদপদবিতে থাকা আওয়ামী লীগের নেতারা স্বতন্ত্রভাবেও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেলে অর্থের ছড়াছড়ি ও পেশী-শক্তির মাধ্যমে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হতে পারে। এক্ষেত্রে নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মী যাতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ না পায়, সে বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের অবস্থান স্পষ্ট করার অনুরোধ জানানো হয় আবেদনে।

সবশেষে আবেদনে বলা হয়, আওয়ামী লীগের দোসর জাতীয় পার্টি, ১৪ দলসহ যারা ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচনে অংশ নিয়ে শেখ হাসিনার অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের বৈধতা দিয়ে দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছে, তাদেরকে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক কোনো সংলাপে না ডাকার অনুরোধ করছি। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যে দলগুলোকে নিয়ে আলোচনা করেছে, শুধু সেই দলগুলোকে নিয়ে নির্বাচন কমিশনকেও সংলাপ করার আহ্বান করছি। অন্যথায় ফ্যাসিবাদের দোসররা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপ করার সুযোগ পেলে, সেটি হবে ছাত্র-জনতার রক্তের সঙ্গে প্রতারণা। এমনকি নির্বাচন কমিশন কর্তৃক এমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে জনগণ বিক্ষুব্ধ হয়ে আন্দোলন শুরু করতে পারে। সেটি নির্বাচনের পরিবেশকে বিঘ্নিত করবে।

উপরোক্ত বিষয় দুটিতে কঠোর পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছি। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে গঠিত বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা রাখতে চাই যে, কমিশন জাতিকে ফ্যাসিবাদমুক্ত, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিয়ে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে।

এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
হাসপাতাল থেকে সরাসরি ক্যামেরার সামনে অর্চিতা স্পর্শিয়া Nov 12, 2025
img
তোমাকে ছাড়া একটা দিনও থাকতে পারবো না : মিমি Nov 12, 2025
img
‘যুক্তরাষ্ট্রে যোগ্য লোক নেই’: এইচ-১ বি ভিসা ইস্যুতে অবস্থান বদলালেন ট্রাম্প Nov 12, 2025
img
দেশের মাটিতে প্রথম সেঞ্চুরি জয়ের, দুইশরান অতিক্রম করল বাংলাদেশ Nov 12, 2025
img
বোটানিক্যাল গার্ডেনে প্রবেশের টিকিট কাটা যাবে অনলাইনে Nov 12, 2025
img
রিয়ামনির মামলায় বিপাকে হিরো আলম Nov 12, 2025
img
বিবিসির বিরুদ্ধে মামলা করার অধিকার আমার আছে: ট্রাম্প Nov 12, 2025
img
রাজনীতিতে ফিরতে আওয়ামী লীগের পুরনো কৌশল : রনি Nov 12, 2025
img
পে কমিশনের জন্য আলাদা একটি কমিশন কাজ করছে: অর্থ উপদেষ্টা Nov 12, 2025
img
রাজধানীতে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনে ডিএমপির ২৩৫৬ মামলা Nov 12, 2025
img
জাপা ও ১৪ দলকে নির্বাচন কমিশনের সংলাপে ডাকা উচিত হবে না : রাশেদ খান Nov 12, 2025
img
জামায়াতসহ আট দলের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা Nov 12, 2025
img
প্রভাসের ২৩ বছরের চলচ্চিত্রজীবন উদযাপনে ‘দ্য রাজা সাব’-এর নতুন পোস্টার Nov 12, 2025
img
এখনো হাসপাতালে হাসান মাসুদ Nov 12, 2025
img
রূপালী ব্যাংকের সাবেক এমডি ও পরিবারসহ ৬ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা Nov 12, 2025
img
বাঙালি মূলত ক্ষমতাকে ভয় পায় : গোলাম মাওলা রনি Nov 12, 2025
img
আগামী নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করবে আওয়ামী লীগ : মাসুদ কামাল Nov 12, 2025
img
বক্স অফিসে ব্যর্থ ইমরান হাশমি-ইয়ামি গৌতমের ‘হক’ Nov 12, 2025
img
সিস্টেম মেনে চলার গুরুত্ব তুলে ধরলেন অম্বরীশ ভট্টাচার্য Nov 12, 2025
img
মেয়ের চোখে প্রিয় নায়ক শাকিল খান নিজেই Nov 12, 2025