মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার রাতে সম্প্রচারিত ফক্স নিউজের এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে ‘নির্দিষ্ট কিছু প্রতিভার’ অভাব রয়েছে, যা দেশের শিল্প ও প্রযুক্তি খাতে কর্মী সংকট তৈরি করছে। তিনি এই যুক্তি দেখিয়ে এইচ-১বি ভিসা (দক্ষ বিদেশি কর্মী ভিসা) কর্মসূচির পক্ষে সাফাই গেয়েছেন।
ফক্স নিউজের উপস্থাপক লরা ইনগ্রাহাম যখন প্রশ্ন করেন, তার প্রশাসন কি এইচ-১বি ভিসার সংখ্যা কমানোর পরিকল্পনা করছে কি না—যেহেতু এতে মার্কিন কর্মীদের মজুরি কমতে পারে—তখন ট্রাম্প বলেন, ‘আমি একমত, কিন্তু তোমাকে প্রতিভাবান মানুষও আনতে হবে।’
ইনগ্রাহাম বলেন, ‘আমাদের দেশেই তো প্রচুর প্রতিভাবান মানুষ আছে।’
এর জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘না, তোমাদের নেই, একেবারেই নেই… কিছু নির্দিষ্ট প্রতিভা তোমাদের নেই, আর মানুষকে তা শিখতে হয়। তুমি বেকারদের সারি থেকে কাউকে নিয়ে গিয়ে বলতে পারো না, ‘চলো, তোমাকে মিসাইল তৈরির কারখানায় বসাচ্ছি।’’
ট্রাম্প জর্জিয়ার হুন্দাই কারখানায় গত সেপ্টেম্বরের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) অভিযানকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে বলেন, সেই ঘটনাই দেখায় যে যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষ বিদেশি কর্মীর প্রয়োজন কতটা জরুরি।
ট্রাম্প বলেন, ‘জর্জিয়ায় অভিযান চালানো হয়েছিল অবৈধ অভিবাসীদের বের করে দিতে, ওখানে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আসা কিছু লোক ছিল যারা সারা জীবন ব্যাটারি তৈরি করেছে।
তুমি জানো, ব্যাটারি তৈরি খুব জটিল ব্যাপার, সহজ নয়, অনেক বিপজ্জনক, বিস্ফোরণ হয়, নানা সমস্যা। সেখানে প্রায় ৫০০–৬০০ জন কাজ করছিল, ব্যাটারি তৈরি করতে এবং অন্যদের শেখাতে। অথচ তাদের দেশছাড়া করা হলো। কিন্তু এই লোকগুলোর প্রয়োজন, লরা।’
ট্রাম্পের এই মন্তব্য আসে এমন সময়ে, যখন তিনি মাত্র দুই সপ্তাহ আগেই দক্ষিণ কোরিয়া সফরে যাওয়ার পথে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তিনি ওই আইসিই অভিযানের ‘তীব্র বিরোধী’ ছিলেন।
গত সেপ্টেম্বর ট্রাম্প একটি এক্সিকিউটিভ অর্ডার স্বাক্ষর করেন, যাতে এইচ–১বি ভিসার আবেদন ফি বাড়িয়ে এক লাখ ডলার নির্ধারণ করা হয়। এটি ছিল তার প্রশাসনের অভিবাসন–বিরোধী পদক্ষেপগুলোর সর্বশেষ সংযোজন, যার লক্ষ্য ছিল যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি কর্মী প্রবেশে নতুন সীমাবদ্ধতা আরোপ করা।
এইচ–১বি ভিসা হলো তিন বছরের একটি কর্মভিসা, যা আরো তিন বছরের জন্য নবায়নযোগ্য। অর্থনীতিবিদদের মতে, এই কর্মসূচি মার্কিন কম্পানিগুলোকে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে ও অভ্যন্তরীণভাবে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে সহায়তা করে।
সোমবার সম্প্রচারিত সাক্ষাৎকারের প্রথম অংশে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে চীনা শিক্ষার্থীদের ভর্তি–বিষয়ক আলোচনার সময় ফ্রান্সকেও খোঁচা দেন।
প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি আসলে মনে করি, বিদেশি দেশগুলোর শিক্ষার্থী থাকা ভালো।’
ইনগ্রাহাম জবাব দেন, ‘তারা তো ফরাসি নয়, তারা চীনা। তারা আমাদের ওপর গুপ্তচরবৃত্তি করে, আমাদের মেধাস্বত্ব চুরি করে।’
এতে ট্রাম্প প্রশ্ন করেন, ‘তুমি কি মনে করো, ফরাসিরা ভালো?’
ইনগ্রাহাম বলেন, ‘হ্যাঁ।’
ট্রাম্প তখন ঠান্ডা হেসে উত্তর দেন, ‘আমি কিন্তু তেমন নিশ্চিত নই।’
এমআর/টিএ