হামজা চৌধুরী মানেই দর্শকের পাগলামি। বুধবার সন্ধ্যায় জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুশীলন করার জন্য লিস্টার সিটির এ তারকা যখন গাড়ি থেকে নামছিলেন, তখন দর্শকের মধ্যে সে কী উন্মাদনা! হামজাকে একনজর দেখার জন্য ফুটবলপ্রেমীদের অপেক্ষা জাতীয় স্টেডিয়ামের প্রবেশ গেটের সামনে। হামজার মাঠে ঢোকার দৃশ্যটা অনেকে মোবাইলে ভিডিও করেছেন। হামজা-জ্বরে কাঁপছে বাংলাদেশের ফুটবল।
বাংলাদেশের কোনো ম্যাচ মানেই মধ্যমণি ইংলিশপ্রবাসী এ ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার। চোখ ধাঁধানো ফ্রি কিক, বিপক্ষ খেলোয়াড়কে আটকানোর অসাধারণ দক্ষতা– হামজা চৌধুরী হৃদয় জিতেছেন বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদের। সেই হামজাকে ঘিরেই নেপাল-বধের ছক কষছেন বাংলাদেশ কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা।
আজ বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় জাতীয় স্টেডিয়ামে প্রীতি ফুটবল ম্যাচে হিমালয়ের দেশটির মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। নেপালের বিপক্ষে ম্যাচটি মূলত ১৮ নভেম্বর ভারত ম্যাচের প্রস্তুতি। এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বের ওই ম্যাচই মূলত ভাবনায় জামাল ভূঁইয়া-তপু বর্মণদের। শেষ চার ম্যাচের দুটিতে ড্র ও দুটিতে পরাজিত হওয়া বাংলাদেশ দল জয়ের লক্ষ্য নিয়েই নামবে।
হংকং ম্যাচের প্রস্তুতির জন্য গত সেপ্টেম্বরে নেপালে দুটি ম্যাচ খেলতে গিয়েছিল বাংলাদেশ দল। গত ৬ সেপ্টেম্বর প্রথম প্রীতি ম্যাচটি গোলশূন্যভাবে শেষ হয়েছিল। দ্বিতীয় ম্যাচের আগে নেপালজুড়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে দ্বিতীয় প্রীতি ম্যাচ না খেলেই দেশে ফিরে এসেছিলেন মোহাম্মদ ইব্রাহিম-মিতুল মারমারা। এবার খেলার কথা ছিল আফগানিস্তানের বিপক্ষে। কিন্তু কিংস অ্যারেনায় মিয়ানমারের সঙ্গে তাদের এশিয়ান কাপ ম্যাচটি স্থগিত হওয়ায় ঢাকায় আসতে পারবে না বলে জানিয়ে দেয় আফগানরা। ফলে বাফুফে দ্বারস্থ হয় নেপালের। তারা সাড়া দিয়েছে।
মাঠের বাইরে যতটা বন্ধুত্বপূর্ণ নেপাল, মাঠের ভেতরে তার উল্টোটা। গত পাঁচ বছরে হিমালয়ের দেশটির বিপক্ষে জিততে পারেনি লাল-সবুজের দলটি। ২০২০ সালের ১৩ নভেম্বর প্রীতি ম্যাচে ২-০ গোলে জেতার পর নেপালের সঙ্গে খেলা পাঁচ ম্যাচের মধ্যে দুটিতে হার ও তিনটিতে ড্র করেছিল বাংলাদেশ। এই পরিসংখ্যান ভালো করেই জানা বাংলাদেশ অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়ার। তাই তো গতকাল ম্যাচ-পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে এ মিডফিল্ডারের কণ্ঠে ফুটে উঠেছে নেপাল-বধের কথা, ‘আমাদের মেইন ফোকাসটা ভারতের সঙ্গে ম্যাচ। এই ম্যাচটার গুরুত্ব কতটা, তা সবাই জানে। কালকে (আজ) নেপালের বিপক্ষে অবশ্যই জিততে চাই। জিততে পারলে ভারত ম্যাচের আগে আত্মবিশ্বাসটাও বাড়বে।’
নেপালের বিপক্ষে ম্যাচটি প্রস্তুতি। তাই একাদশ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাবেন কোচ ক্যাবরেরা। মঙ্গলবারই বলেছেন, ১৭ ফুটবলারকে ব্যবহার করবেন তিনি। মূলত ভারত ম্যাচের আগে একটা শক্তিশালী স্কোয়াড গঠন করতেই সবাইকে ঝালিয়ে নেবেন এ স্প্যানিয়ার্ড। তাই শুরুর দিকে হামজাকে নামিয়ে হয়তো বিরতির পর তাঁকে বিশ্রাম দেবেন বাংলাদেশ কোচ। দলের সঙ্গে মাত্র এক সেশন অনুশীলন করা শমিত সোমকে খেলাবেন ক্যাবরেরা। সেটিও কিছু সময়ের জন্য।
অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়াকেও দেখা যেতে পারে ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট। তবে চোটের কারণে নেপাল ম্যাচে খেলাটা অনিশ্চিত শেখ মোরসালিনের। সবকিছু মিলিয়ে নেপালের সঙ্গে ম্যাচটাকে সেভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে না বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ নেপালের ফুটবলাররা রোমাঞ্চিত হামজার মতো তারকা ফুটবলারের বিপক্ষে খেলবেন বলে। দলটির অধিনায়ক কিরন চেমজং যেমন বলেছেন, ‘সেপ্টেম্বরে হামজার বিপক্ষে খেলতে খুবই মুখিয়ে ছিলাম, তবে খেলা হয়নি। এবার আমিসহ নেপালিজরা খুবই এক্সাইটেড হামজার সঙ্গে খেলতে পারব।’
ইউটি/টিএ