পর্তুগালের পরাজয়ে জমে উঠেছে ‘এফ’ গ্রুপের শীর্ষস্থানের লড়াই, তিন দলের সামনে সুযোগ সরাসরি বিশ্বকাপে জায়গা পাকা করার। যত দুয়োই দেওয়া হোক না কেন, ‘গুড বয়’ হয়ে থাকার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা রাখতে পারলেন না ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো। মেজাজ হারিয়ে হলেন বহিষ্কার। তার আগেই দুই গোল হজম করা পর্তুগাল পরেও পারল না ঘুরে দাঁড়াতে। অসাধারণ এক জয়ে বিশ্বকাপে খেলার আশা বাঁচিয়ে রাখল রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ড।
বৃহস্পতিবার রাতে রোমাঞ্চ ছড়ানো বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচটি ২-০ গোলে জিতেছে আইরিশরা। আভিভা স্টেডিয়ামে স্বাগতিকদের দুটি গোলই করেছেন ট্রই প্যারোট। বাছাইয়ে প্রথম তিন ম্যাচে জয়ের পর, গত রাউন্ডে হাঙ্গেরির বিপক্ষে ঘরের মাঠে শেষদিকে গোল হজম করে ২-২ ড্র করে পর্তুগাল। আর এই পরাজয়ে তাদের বিশ্বকাপ ভাগ্য এখন পড়ে গেল কিছুটা অনিশ্চয়তায়।
এই হারের পরও অবশ্য ‘এফ’ গ্রুপের শীর্ষেই আছে পর্তুগাল, পাঁচ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে। সমান ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে হাঙ্গেরি। তৃতীয় স্থানে আয়ারল্যান্ডের পয়েন্ট ৭। এই তিন দলেরই সুযোগ আছে সরাসরি ২০২৬ বিশ্বকাপের টিকেট পাওয়ার।
পজেশন রাখায় ও আক্রমণে আধিপত্যের মাঝে গোলরক্ষকের ভুলে ১৬তম মিনিটে গোল খেতে বসেছিল পর্তুগাল। প্রথম শট নিতে দেরি করেন দিয়োগো কস্তা, এরপর প্রতিপক্ষের ট্রই প্যারোট এগিয়ে এলে তড়িঘরি ঘরে তার পায়ে শট মেরে বসেন তিনি।
খেলার ধারার বিপরীতে পরক্ষণে এগিয়েও যায় আইরিশরা। কর্নার থেকে উড়ে আসা বলে হেড করে গোলমুখে পাঠান লিয়াম, আর হেডেই বাকি কাজ সারেন ফরোয়ার্ড প্যারোট। গোল পেয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে স্বাগতিকরা। সুযোগ পেলেই করতে থাকে পাল্টা আক্রমণ। ভাগ্য সহায় হলে ৩৮তম মিনিটে আরেকটি গোল পেতে পারতো তারা। তবে চিডোজি ওগবেনের কোনাকুনি শটটি দূরের পোস্টে লাগলে সেই যাত্রায় বেঁচে যায় পর্তুগাল।
তবে, প্রতিপক্ষের রক্ষণে তেমন ভীতি ছড়াতে না পারা পর্তুগাল বিরতির আগেই দ্বিতীয় গোল হজম করে। ৪৫তম মিনিটে সতীর্থে থ্রু বল পেয়ে, ডি-বক্সে একজনকে কাটিয়ে নিখুঁত শটে কাছের পোস্ট ঘেঁষে জালে জড়ায় প্যারোট।
প্রথমার্ধে তিন-চতুর্থাংশের বেশি সময় বল দখলে রেখে গোলের জন্য ১৫ শট নিয়ে কেবল তিনটি লক্ষ্যে রাখতে পারে রোনালদো-ফেলিক্সরা, সেগুলোও অবশ্য গোলরক্ষকের কঠিন পরীক্ষা নিতে পারেনি। আর এই সময়ে আয়ারল্যান্ড ছয় শটের তিনটি লক্ষ্যে রেখেই জয়ের পথে এগিয়ে যায়। দ্বিতীয়ার্ধে রক্ষণ আরও জমাট করে তোলে আ্য়ারল্যান্ড। তাদের ডি-বক্সে ঢুকতেই পারছিল না রোনালদোরা।
একের পর এক আক্রমণ বিফলে যাওয়া এবং প্রতিপক্ষ সমর্থকদের দুয়োয় ঘণ্টাখানেক পর মেজাজ হারিয়েই ফেলেন রোনালদো। একটি ফ্রি কিকের সময় প্রতিপক্ষের ডি-বক্সে তাদের ডিফেন্ডার ও’শেয়াকে কনুই মেরে বসেন তিনি। রেফারি প্রথমে হলুদ কার্ড দিলেও, পরে ভিএআর মনিটরে দেখে সরাসরি দেখান লাল কার্ড। ধীর গতিতে মাঠ ছাড়ার সময়ও আপত্তিকর আচরণ করেন আন্তর্জাতিক ফুটবলের রেকর্ড গোলদাতা; স্বাগতিক সমর্থকদের ব্যঙ্গ করে দেন করতালি।
জাতীয় দলের হয়ে ২২৬ ম্যাচের ক্যারিয়ারে এই প্রথম লাল কার্ড দেখলেন রোনালদো। শেষ কয়েক মিনিটে আক্রমণের ঝড় তোলে পর্তুগিজরা। কিন্তু ব্যর্থতার জাল এদিন আর ছিড়তে পারেনি তারা। পুরো ম্যাচে গোলের জন্য ২৭ শট নিয়ে কেবল ৫টি লক্ষ্যে রাখতে পারে তারা!
টানা দুই ম্যাচে ড্র ও পরাজয়ে আত্মবিশ্বাসে হয়তো কিছুটা চোট লাগল পর্তুগালের। তবে শেষ ম্যাচ গ্রুপের তলানির দল আর্মেনিয়ার বিপক্ষে হওয়ায়, সরাসরি বিশ্বকাপে ওঠার আশা ভালোভাবেই করতে পারে ২০১৬ সালের ইউরো চ্যাম্পিয়নরা। ওইদিনই আরেক ম্যাচে মুখোমুখি লড়াইয়ে নামবে হাঙ্গেরি ও আয়ারল্যান্ড।
আগেই বিশ্বকাপের টিকেট নিশ্চিত করা ইংল্যান্ড টানা সপ্তম জয় পেয়েছে। একই সময়ে শুরু ম্যাচে সার্বিয়াকে ২-০ গোলে হারিয়েছে তারা। লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে বুকায়ো সাকার গোলে এগিয়ে যায় ইংল্যান্ড। নির্ধারিত সময়ের শেষ মিনিটে দ্বিতীয় গোলটি করেন এবেরেচি এজে। সাত ম্যাচ শতভাগ সাফল্যে ২১ পয়েন্ট ইংল্যান্ডের। ১৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে আলবেনিয়া, এই গ্রুপের রানার্সআপ হিসেবে প্লে-অফ নিশ্চিত হয়েছে তাদের।
এসএস/টিএ