গণভোট এবং জুলাই সনদের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া উন্মুক্ত হওয়ার পরও মতানৈক্য কাটেনি রাজনৈতিক দলগুলোর। নির্বাচনের দিন গণভোটকে বিএনপি স্বাগত জানালেও সায় নেই জামায়াতে ইসলামীর। আর রাষ্ট্রপতির জারি করা আদেশে ক্ষুব্ধ জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
দীর্ঘ বৈঠকে ঐকমত্য এবং অনৈক্যের মধ্য দিয়ে তৈরি হওয়া জুলাই জাতীয় সনদের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া উন্মুক্ত করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
গত বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানান, জুলাই সনদকে মূল দলিল হিসেবে ধরে নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার উপদেষ্টামণ্ডলীর সভায় ‘জুলাই জাতীয় সনদ সংবিধান সংস্কার বাস্তবায়ন আদেশ-২০২৫’ অনুমোদন করেছে। প্রয়োজনীয় স্বাক্ষর শেষে এটি ইতোমধ্যে গেজেট নোটিফিকেশন করার পর্যায়ে চলে গেছে।
এদিকে জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ ইস্যু করেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। একইদিন বিকেলে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে।
সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গণভোট হবে নির্বাচনের দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ, উচ্চকক্ষে পিআরসহ ৪ পয়েন্টে মৌলিক বেশকিছু সংস্কার উল্লেখ থাকবে। সব প্রশ্নে একটি ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ দিয়ে মতামত জানাবেন ভোটাররা।
একইদিন গণভোট এবং নির্বাচনের ঘোষণা পুনঃব্যক্ত করায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে স্বাগত জানিয়েছে বিএনপি। রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বাগত জানান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তবে নির্বাচনের দিনই গণভোট মানতে নারাজ নভেম্বরের মধ্যে গণভোটের দাবিতে রাজপথে থাকা জামায়াত। দলটি বলছে, এই ঘোষণা জাতির কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি এবং গণদাবি মানা হয়নি।
আর রাষ্ট্রপতি কর্তৃক আদেশ জারির সমালোচনায় এনসিপি। রাতে দলটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, ‘জুলাই সনদ আদেশ ঘোষণার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে দীর্ঘমেয়াদি সংকট ফেলে দেয়া হয়েছে। রাজনৈতিক দলের উচিত, জনগণের স্বার্থ মাথায় রেখে কাজ করা। সরকার ও প্রধান উপদেষ্টা দায় এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।’
ঐকমত্য কমিশনের বিশেষজ্ঞ প্যানেলে কাজ করা জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া মনে করেন, রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পরবিরোধী অবস্থানে নিরপেক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গণভোটে রাজনৈতিক দলগুলোর ‘নোট অব ডিসেন্ট’ নিয়ে জনগণের মতামত জানার চেষ্টাকে স্বাগত জানান তিনি।
জুলাই সনদ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ‘রাইট ট্রাকে’ রয়েছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সনদ নিয়ে সবাইকে ছাড় দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
রাজনৈতিক দলগুলোর অনৈক্য পতিত স্বৈরাচারকে সুযোগ করে দিচ্ছে বলে মনে করেন এই বিশ্লেষক।
কেএন/এসএন